নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বাংলার সমস্ত স্তরের মানুষের কাছে রাজ্য সরকারের নেওয়া প্রকল্পের সুবিধা পৌঁছে দেওয়াতেই আগাগোড়া প্রাধান্য দিয়েছেন তিনি। জেলায় জেলায় গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলে তিনি বুঝেছেন, তাঁদের সুবিধা অসুবিধা ও প্রয়োজনের কথা। সেই অনুযায়ী একের পর এক প্রকল্প চালু করেছে তাঁর সরকার। ক্ষমতায় আসার ১৪ বছর পরেও একই ফর্মুলায় মানুষের অভাব অভিযোগে ইতি টানতে উদ্যোগী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কারণেই মঙ্গলবার একযোগে জনপ্রতিনিধি, তাঁর দলের নেতা-কর্মী ও প্রশাসনিক কর্তাদের জনসংযোগ বৃদ্ধির নির্দেশ দিলেন বাংলার অগ্নিকন্যা।
মঙ্গলবার মালদহে পরিষেবা প্রদান অনুষ্ঠান থেকে মমতা বলেন, ‘সপ্তাহে অন্তত একদিন করে গরিব মানুষের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলুন। তাঁদের বাড়িতে গিয়ে চা খান, মাটির দাওয়ায় বসবেন, খাটিয়ায় বসবেন। সঙ্গে করে চা, দুধ, চিনি কিনে নিয়ে যান। এর জন্য অনেক টাকা লাগে না। জানতে চাইবেন তাঁদের কোনও সমস্যা আছে কি না। যদি থাকে তাহলে তাঁদের বলবেন আবার দুয়ারে সরকার আসছে, সেখানে গিয়ে তাদের সমস্যা মিটিয়ে নিতে।’
তবে শুধু দলীয় কর্মী বা নেতাদের নয়, এদিন প্রশাসনিক কর্মী অফিসারদের উদ্দেশেও কার্যত একই বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন সকালে মালদহ মেডিক্যাল কলেজসহ একাধিক জায়গায় পরিদর্শন সারেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। এই উদাহরণ তুলে ধরেই আধিকারিকদের তৃণমূল স্তরে পৌঁছে কাজ করার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। জেলা শাসকদের বাংলা সহায়তা কেন্দ্রগুলি ঠিকভাবে চলছে কি না তাও খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, সদ্য ফিল্ড ইনসপেকশন অ্যাপ চালু করেছে নবান্ন। আধিকারিকদের প্রতি তাঁর নির্দেশ, এলাকায় ঘুরে ঘুরে রাজ্যের তরফে নেওয়া প্রকল্পগুলি রূপায়ণে নজরদারি চালাতে হবে। এটা সুনিশ্চিত করতেই এই অ্যাপ চালু করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, কেন্দ্রের বঞ্চনার জবাবে বাংলার আম আদমির জন্য গৃহীত জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলিই প্রতিটি নির্বাচনে রাজ্যের শাসক দলের জয় নিশ্চিত করেছে। বছর পেরলেই বিধানসভা নির্বাচন। তাই এখন থেকেই জনসংযোগে জোর দিয়ে চাইছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। সেক্ষেত্রে ভোটের অনেক আগেই মানুষের পড়ে থাকা সমস্যাগুলির সমাধানও সম্ভব হবে। মনে করছেন প্রশাসনিক মহল।
রাজ্যের ১ লক্ষ ৬৫ হাজার কোটি টাকার ন্যায্য প্রাপ্য দিল্লি আটকে রাখা নিয়ে এদিনও মোদি সরকারকে একহাত নেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, তবে মানুষের কথা ভেবেই তাঁর সরকার এত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করে চলেছে। বাংলার বাড়ি, কর্মশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী প্রভৃতি প্রকল্প চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন তিনি। আবার, মানুষের দুয়ারে স্বাস্থ্য পরিষেবা সুনিশ্চিত করতে আরও ১৪ হাজার সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র তৈরি হবে। তাঁর কটাক্ষ, টাকা না দিয়েও নির্বাচনের সময় এরাজ্যে ভোট চাইতে আসেন দিল্লির ‘ডেইলি প্যাসেঞ্জাররা’। তবে তিনি কিন্তু ভোট চাইতে নয়, পরিষেবা পৌঁছে দিতেই এসেছেন। স্পষ্ট করে দেন কানায় কানায় ভর্তি ডিএসএ ময়দানের সামনে। উপস্থিত মা-বোনদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘মনে রাখবেন, আমি আপনাদের পাহারাদার। সবসময় আপনাদের পাশে ছিলাম, আছি, থাকব।’একইসঙ্গে স্বচ্ছতা বজায় রেখে পরিষেবা সুনিশ্চিত করাকেও যথেষ্ট প্রাধান্য দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। আর সেই কথা মনে করিয়ে দিতেই দল ও প্রশাসন—দুইয়ের উদ্দেশেই তিনি বলেন, ‘টাকা মানুষের সম্পদ নয়, মানুষের পরিচয়ই তাঁর নৈতিকতা। ফলে মানুষের পাশে থাকুন—মা-বোনের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করুন।’