নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আজও মিলল না সমাধান সূত্র। মুখ্যমন্ত্রী-আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের মধ্যে এদিনও হল না বৈঠক। আজ, বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা নাগাদ সভাঘরের সামনে উপস্থিত হন ৩২ জন আন্দোলনকারী চিকিৎসক। ১৫ জনের আসার অনুমতি থাকলেও শেষে ৩২ জনকে নিয়েই বৈঠকে বসতে রাজি হয় রাজ্য সরকার। কিন্তু জুনিয়র চিকিৎসকদের সব দাবি মানা হলেও লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবি মানেনি রাজ্য। কিন্তু সেই দাবিতেই শেষ পর্যন্ত অনড় থাকলেন তাঁরা। ফলে বৈঠকের সম্ভাবনা তৈরি হয়েও শেষমেশ তা ভেস্তে যায়। সভাঘরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। এরপর সাংবাদিক বৈঠক করেন, মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং রাজ্য পুলিসের ডিজি রাজীব কুমার। মুখ্যসচিব বলেন, আমরা অনেকবার জুনিয়র চিকিৎসকদের অনুরোধ করেছি, কিন্তু ওঁনারা ভিতরে ঢুকতে চাননি। আমরা ভিডিওগ্রাফি করতে চেয়েছি, কিন্তু আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা লাইভ স্ট্রিমিংয়ের বিষয়ে অনড়। প্রায় দেড়ঘণ্টা ধরে জুনিয়র চিকিৎসকদের বোঝানো হয়। বারবার আন্দোলনকারীদের বলা হয়, লাইভ স্ট্রিমিং বা ভিডিওগ্রাফি সেটা জরুরি নয় আলোচনাটাই মুখ্য বিষয়। কিন্তু তাতে বরফ গলে নি।
এরপর সাংবাদিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বলেন, আমরা নবান্ন সভাগৃহে ডাক্তার ভাই-বোনেদের জন্য দু’ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছিলাম। আগের দু’দিনও আমি অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু ওঁরা আসেনি। ওরা ছোট, ওঁদের আমরা ক্ষমা করে দিলাম। কিন্তু কথা বললে সমস্যার সমাধান হয়। মমতা আরও বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আদেশ মেনেই ভিডিওগ্রাফির ব্যবস্থা করেছিলাম। আমরা পুরো মিটিংটাই রেকর্ডিং করার কথাও বলেছিলাম। আগে একবার আমরা লাইভ স্ট্রিমিং করি। কিন্তু তখন কেসটা সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন ছিল না, সিবিআই ও তদন্ত করছিল না। আমি ভেবেছিলাম আমার ছোট্ট ছোট্ট ভাই বোনেরা মানবিক ভাবনাচিন্তা রাখে। কোনওরকম রাগারাগী, জেদাজেদি না করে আলোচনায় আসবেন। ওঁদের কথা ভেবেই ১৫ জনের বদলে ৩২ জনের প্রবেশের অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওঁরা সভাঘরে প্রবেশই করলেন না। ওনারা যাতে খোলামেলাভাবে আলোচনা করতে পারে তার জন্য কোনও আধিকারিককে ডাকাও হয়নি। শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কর্মবিরতির জেরে চিকিৎসা না পেয়ে রাজ্যে ২৭ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ৭ লক্ষ রোগী পরিষেবা না পেয়ে সমস্যায় রয়েছেন। আমাকে, আমাদের সরকারকেও অনেক অসম্মান করা হয়েছে। তাও আমি আবার আপনাদের অনুরোধ করলাম, কাজে ফিরুন। এদিন ওঁদের মধ্যে অনেকেই বৈঠকে যোগ দিতে রাজি ছিলেন, কিন্তু বাইরে থেকে নির্দেশ আসছিল বলেই বৈঠক হল না বলেও দাবি করেন মমতা। অনেকে বিচার চায় না, চেয়ার চায়। কিন্তু আমি অভয়ার বিচারের জন্য পদত্যাগ করতেও রাজি। এরপরই নবান্ন থেকে বেরিয়ে যান মমতা।
এরপরই ফের সাংবাদিক বৈঠক করেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা। বলা হয়, আমরা খোলা মনেই আলোচনার জন্যই এসেছিলাম। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই হতাশ। আমরা চেয়ারের জন্য আলোচনা করতে আসিনি। আজ আলোচনা হওয়া দরকার ছিল। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে আপত্তি কেন তা জানায়নি প্রশাসন। আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান বের হবে বলেই আমরা আশাবাদী।
এর আগে আজ, বৃহস্পতিবার আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের ফের ই-মেল করলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। এদিন আন্দোলনকারীদের বৈঠকে বসার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আজ, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টে ৪৫ মিনিটের মধ্যে নবান্নে পৌঁছতে হবে তাঁদের। বিকেল ৫টা থেকে কনফারেন্স হলে শুরু হবে বৈঠক। ই-মেলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। মুখ্যসচিব জানিয়েছেন, রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনার জন্য সরকার আপনাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট এই বিষয়ে যে নির্দেশ দিয়েছে সেটিও আপনাদের মাথায় রাখতে হবে। আপনাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী গত দু’দিন ধরে নবান্নে অপেক্ষা করেছেন। আমরা আলোচনায় বসতে চাই। পাশাপাশি ই-মেলে স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে জুনিয়র চিৎিসকরা সর্বোচ্চ ১৫ জন প্রতিনিধি নিয়েই বৈঠকে যেতে পারেন। তার বেশি নয়। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কারা কারা দেখা করবেন, সেই প্রতিনিধিদের নামও ই-মেল মারফত জানাতে বলা হয়েছে। এছাড়াও জানানো হয়েছে, বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। তবে তা রেকর্ড করা যেতে পারে। যার অর্থ গতকাল আন্দোলনকারীরা যে শর্তগুলি দিয়েছিলেন সেগুলি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে মানা হচ্ছে না। সূত্রের খবর, এই আবহে আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা এবার কী করবেন তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এবার গণবৈঠকে বসতে পারেন তাঁরা।
উল্লেখ্য, গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসকদের বৈঠকের একটি সম্ভাবনও তৈরি হয়েছিল। তার আগেই বিকেল ৫টা ২৩ মিনিট নাগাদ মুখ্যসচিবকে ই-মেল পাঠান আন্দোলনকারীরা। সেখানে উল্লেখ করা হয়, তাঁরা বৈঠকে বসতে রাজি। তবে তার জন্য রয়েছে তাঁদের কিছু শর্ত। ই-মেলে জানানো হয়, আলোচনার জন্য নবান্নে ৩০ জন প্রতিনিধিকে যেতে দিতে হবে। পুরো বৈঠক হবে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই। স্বচ্ছতার কথা মাথায় রেখে পুরো বৈঠক সরাসরি সম্প্রচার করতে হবে। এছাড়া আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের ৫ দফা দাবি নিয়েই হতে হবে আলোচনা। এই চারটি দাবি তুলে মুখ্যসচিবকে ই-মেল করেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। এরপরই গতকাল সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব ও ডিজি রাজীব কুমার। চন্দ্রিমা দেবী জুনিয়র চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, রাজনীতির প্ররোচনায় আপনারা পা দেবেন না। পাশাপাশি চিকিৎসকদের চারদফা দাবি ইস্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, খোলা মনে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। শর্তসাপেক্ষে নয়। শেষে বলেন, আমরা কোনও পদক্ষেপ নিলে সবাই জানতেই পারবেন। অপরদিকে মুখ্যসচিব বলেন, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সকলেরই মানা উচিত। এরপর, গতকালই আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে কিঞ্জল নন্দ জানান, এই আন্দোলনে রাজনীতির কোনও রং নেই। অন্যান্য জুনিয়র চিকিৎসকরাও দাবি করেন, তাঁদের এই আন্দোলন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক।