বদমেজাজ ও কঠিন ব্যবহারে ঘরে-বাইরে অশান্তি ও শত্রুতা। পেট ও বুকের সংক্রমণে দেহসুখের অভাব। কর্মে ... বিশদ
তৃতীয়জনকে আমরা চিনি। উনি নাইজেল আকারা!
তখন বিকেল। বিষণ্ণতায় মোড়া। কার্তিকের ছায়া মাখা। শহর কলকাতার সমস্ত কোলাহল আর কর্মোদ্দীপনাকে থমকে দেওয়া বিস্তীর্ণ সবুজেও যেন আফশোসের অনুরণন। আদরের কন্যাটিকে নগদ একশো টাকার বিনিময়ে পিতা কিনে দিয়েছিলেন একগুচ্ছ গ্যাস বেলুন। হঠাৎ অসাবধানি কচি হাত ফসকে সেগুলি উড়ে গেল আনমনা আকাশের দিকে।
মুহূর্তের বিহ্বলতা। আর তারপরেই সেই তীক্ষ্ণ তিরের মতো মর্মভেদী সংলাপ, ‘আমি শবর দাশগুপ্ত। সবার চেয়ে আলাদা।’
কাট...
পরিচালক অরিন্দম শীলের দিকে পাথুরে প্রশ্ন নিয়ে তাকালেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়। শবরের মতোই। ‘এক্সেলেন্ট।’ উত্তর পরিচালকের। নিপুণভাবে ছাঁটা গোঁফে একবার আঙুল বুলিয়ে নিলেন বাংলা থেকে বুদাপেস্ট — এই মুহূর্তে টালিগঞ্জের ব্যস্ততম অভিনেতা। তার আগে কসবা অঞ্চলের একটি বুটিকে আচমকা হানা দিয়েছিল শবর। ‘আপনার ব্যবসা দেখতে এলাম।’ বুটিকে পা দিয়েই সুন্দরী মধ্যবয়সি মালকিনকে চমকে দিয়ে শবরের স্বভাবসুলভ রসকসহীন সংলাপ। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। ভিক্টোরিয়ার পরীকে সাক্ষী রেখে শবর সেজে চতুর্থবারের মতো শ্যুটিং পর্ব শেষ করলেন শাশ্বত। তাঁর প্যাকআপ। মেকআপ আর্টিস্ট গোঁফটা তুলে নিতেই পরিচিত মেজাজে শুভেন্দু-পুত্র।
এই বিধুর বিকেল কি কোনওভাবে বিরহী করে তুলছে শবরকে? একাকিত্ব, প্রেমহীনতা কি কোনওভাবে এবারের শবরকে অন্যমনস্ক করে দিচ্ছে? ‘একেবারেই না। শবরের জীবনে কোনও রোমান্স ছিল না, নেইও। ওর না আছে বান্ধবী। না মদ্যপান কিংবা সিগারেটে আসক্তি। কিচ্ছু নেই। ও পাথর,’ শাশ্বতর সপাট জবাব।
সহকারী নন্দ ওরফে শুভ্রজিৎ দত্ত কিন্তু অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিলেন। যদিও এখনও নন্দ তার স্যারের ভীষ্মের প্রতীজ্ঞা ভাঙতে পারেনি। তবুও শুভ্রজিতের পর্যবেক্ষণ, ‘বিভিন্ন প্রসঙ্গে শবরের বিয়ের ব্যাপারটা কিন্তু উঠে আসছে এই ছবিতে। মা আশা করে পাত্রী দেখছেন। নারী-পুরুষের সম্পর্কের রসায়নটা মজার মোড়কে বেশ উপভোগও করছে শবর। এটা সদর্থক দিক।’ তাহলে কি পাষাণ হৃদয়ে প্রেমের পারিজাত কুঁড়ি মেলল? খোলসা না করলেও তাৎপর্যপূর্ণ ইঙ্গিত শবরের ছায়াসঙ্গীর।
তবে নিজে বদলেছে নন্দ। এবার সে অনেক বেশি সক্রিয়। সাহসী। শুভ্রজিৎ বললেন, ‘সিদ্ধান্তহীনতার জড়তা মুক্ত আত্মবিশ্বাসী নন্দকে এবার দেখতে পাবেন দর্শক। ফলে নন্দ এবার তার স্যারের কাছে প্রশংসিতও হচ্ছে।’
‘শবর বদলাচ্ছে না। সে তার জায়গায় একেবারেই কঠিন, পাথর, নির্লিপ্ত ও উদাসীন।’ একথা জানিয়েও অরিন্দম আভাস দিলেন নতুনত্বের। বদলের। কোথায়? পরিচালকের বিশ্লেষণ, ‘দেখার চোখ বদলাচ্ছে। এবারের শবরের মধ্যে আমরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া যেমন কোরিয়ান ছবির কালার প্যালেট, দৃশ্যগ্রহণ উপলব্ধি করব এবং সেটা খুব সচেতনভাবেই করা হয়েছে। যার ফলে একটা আন্তর্জাতিক ছোঁয়া এসেছে ছবির সর্বাঙ্গে।’ এই ব্যাপারে তিনি কৃতিত্বের সিংহভাগ শেয়ার করলেন তাঁর চিত্রগ্রাহক অয়ন শীলের সঙ্গে। অয়ন এই নিয়ে অরিন্দমের টানা তিনটি ছবিতে সিনেমাটোগ্রাফারের দায়িত্ব সামলালেন (আগের দুটি ছবি ‘মহানন্দা’ ও ‘খেলা যখন’)।
শবর ফ্র্যাঞ্চাইজির চতুর্থ ছবি ‘তিরন্দাজ শবর’-এর প্রেক্ষাপট কলকাতা। যৌনতার একটা ভিন্ন স্তর এই ছবির মূল বিষয়। এ প্রসঙ্গে অরিন্দমের সংযোজন, ‘এটা খুব সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর ক্ষেত্র। খুব সাবধানে কাজ করতে হচ্ছে।’
গল্পের পটভূমি যোধপুর পার্কের এক বস্তি। ছবির সব চরিত্র কোনও না কোনওভাবে এই বস্তির সঙ্গে জড়িত। বস্তি জীবনের দারিদ্র্য-লাঞ্ছনা অসহায়তা, এক্সপ্লয়টেশন সেইসঙ্গে সেখানকার নির্মলতা ও সারল্য ছবির পরতে পরতে চোখে পড়বে। পরিচালকের ব্যাখ্যা, ‘শবর বলে, আমি জীবন দেখতে দেখতে চলি। তাই এই শবরও জীবনবোধের ছায়াছবি।’
সেই বস্তিরই এক যুবকের চরিত্রে অভিনয় করছেন নাইজেল। পেশায় সে ট্যাক্সি ড্রাইভার। চলনে বলনে পাশের বাড়ির ছেলে। সেই এই ছবির অন্যতম সন্দেহভাজন ব্যক্তি। কেন? এই প্রশ্নে অভিনেতা, পরিচালক দু’জনের মুখেই কুলুপ। নাইজেলের শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘গোত্র’। দু’বছর পর আবার বড়পর্দায় ফিরলেন তিনি। সন্দেহ ও সম্ভবনা দুই-ই সঙ্গে নিয়ে। আছেন দেবলীনা কুমার। শবর সিরিজে এই প্রথমবার। এই ছবিতে তিনি রুমকি। এছাড়াও অন্যতম প্রধান চরিত্রে অভিনয় করছেন দেবযানী চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গীতে বিক্রম ঘোষ। গান গেয়েছেন উজ্জয়িনী ও তিমির। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের অপ্রকাশিত উপন্যাস ‘তিরন্দাজ’ অবলম্বনে তৈরি ‘তিরন্দাজ শবর’ মুক্তি পেতে পারে জানুয়ারির গোড়ায়।