অর্থকড়ি প্রাপ্তির যোগটি বিশেষ শুভ। কর্ম সাফল্য ও চিন্তার অবসান। দেবারাধনায় মন। ... বিশদ
পরীক্ষা শেষ হতেই মায়ের সঙ্গে দিদার বাড়ি চলে এসেছে বুবুন। শহরে বেড়ে ওঠা ছোট্ট বুবুনের কাছে খেলা বলতে শুধুই ভিডিও গেম। তাই দিদার বাড়ির এই গ্রামীণ পরিবেশ খুব ভালো লাগে তার। সারাদিন ঘুরে ঘুরে বেড়াও, বলার কেউ নেই। ভোরে উঠেই জমির আলপথ ধরে অনেকটা দূরে চলে যায় সে। দুপুরে ভাতঘুম দিয়েই বিকেলে ফের মাঠে ক্রিকেট খেলতে ছোটে। সেরকমই একদিন খেলতে খেলতে পড়ে গিয়ে একেবারে রক্তারক্তি কাণ্ড। ও মা! ওর বন্ধু তপন কী একটা পাতার রস লাগিয়ে দিল হাঁটুতে। নিমেষে রক্ত পড়া বন্ধ হল। আরে! এতো পুরো ম্যাজিক। অবাক চোখে বাড়ি ফিরে দিদাকে সবটা বলে সে। তখন দিদা রহস্য উন্মোচন করে। গ্রামে-গঞ্জে রাস্তার ধারে বা ঝোপে-ঝাড়ে গজিয়ে অথা এই পাতাগুলি ‘ডাকাতে-পাতা’ নামে পরিচিত, যা রক্ত বন্ধ করতে মহৌষধের কাজ করে। আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে এরকমই অজস্র লতা-পাতা বা মশলাপাতি, যার ঔষধি গুণাগুণ সম্পর্কে আমরা কার্যত অন্ধকারে। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত এরকমই কিছু টোটকার সন্ধান দেওয়াহল এই প্রতিবেদনে।
হলুদ
হলুদ রান্নার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিজ্ঞানসম্মত নাম কারকিউমা লঙ্গা। কাঁচা হলুদে রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন, অ্যাসকরবিক অ্যাসিড (ভিটামিন সি), ক্যালসিয়াম, ফ্ল্যাভোনয়েড, ফাইবার, আয়রন, নিয়াসিন, পটাসিয়াম, জিঙ্ক এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। রক্তপ্রবাহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ করতে সাহায্য করে হলুদ। এছাড়া কাটা বা আঘাত লাগা জায়গায় জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি পেটের সমস্যা দূর করতেও এর জুড়ি মেলা ভার।
চুন–খয়ের
একসময় রান্নাঘরের অংশ ছিল চুন। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম ক্যালসিয়াম-অক্সাইড। কালের নিয়মে বাড়িতে পান সাজার চল কমতে থাকায় প্রায় বিলুপ্তির পথে চুন। কিন্তু রান্নাঘরের এই বস্তুটি দুর্দান্ত অ্যান্টিসেপটিকের কাজ করে। পানের সঙ্গে খাওয়া চুন-খয়েরের মাধ্যমে মুখের দুর্গন্ধ হয়। মুখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
আদা
রান্নার একটি অপরিহার্য অঙ্গ হল আদা। বিজ্ঞানসম্মত নাম জিঞ্জাইবার অফিসিন্যাল। এটি একটি অ্যান্টিমেটিক (বমিভাব এবং বমি থামায়), কাশি-বিরোধী, প্রদাহ-বিরোধী, জীবাণু-বিরোধী এবং একটি দুর্দান্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। উপরন্তু, রক্তে শর্করাভাব এবং কোলেস্টেরল কমাতে আদার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এছাড়া ওজন ও রক্তচাপ কমাতেও সাহায্য করে।
মেহেন্দি পাতা
মেয়েদের সাজসজ্জার সঙ্গে জুড়ে রয়েছে মেহেন্দি। জীবাণুনাশক হিসেবে মেহেন্দি পাতার ভূমিকার কথা অনেকেরই অজানা। এর বিজ্ঞানসম্মত নাম লাউসেনিয়া ইনারমিস। ত্বকে যে কোনও ধরনের জীবাণুর আক্রমণ প্রতিহত করতে সাহায্য করে।
সজনে ডাঁটা ও ফুল
রোগ প্রতিরোধে সজনের ভূমিকা অনস্বীকার্য। লাতিন নাম মরিঙ্গা অলিফেরাস। মূলত বসন্ত রোগের জীবাণু আটকাতে এটি সদর্থক ভূমিকা নেয়। বর্তমানে এর থেকে নানান ধরনের ওষুধ তৈরি হচ্ছে।
গাঁদা পাতা
শুধুমাত্র সৌন্দর্য নয়, রোগ-জীবাণু ঠেকাতে গাঁদা গাছ একটি দারুন টোটকা। তাৎক্ষণিকভাবে রক্তক্ষরণ ঠেকাতে গাঁদা পাতা খুব ভালো কাজ করে। গাঁদা ফুলে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ফ্যাভনয়েড নামক উপাদান মানবদেহের ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি প্রতিহত করতে সক্ষম। এছাড়া গাঁদা ফুলের চা নিয়মিত খেলে ত্বক মসৃণ হয় ও হজম শক্তি বাড়ে।
জার্মানি লতা
গ্রামবাংলার ঝোপঝাড়ে একসময় এই লতা দেখতে পাওয়া যেত। কিন্তু ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে এখন আর এটি তেমন দেখা যায় না। জার্মানি লতার বিজ্ঞানসম্মত নাম মিকানিয়া মিক্রান্থা। কেটে-ছড়ে গেলে রক্তপাত ঠেকাতে এই লতা ব্যবহার করা হয়। ফলে কাটা অংশ দ্রুত জোড়া লেগে যায়। এছাড়া মেচেদার দাগ দূর করতে, গ্যাসট্রিকের সমস্যা কমাতেও এর ব্যবহার দেখা যায়।
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে?
বাজারচলতি যেকোনও অ্যান্টি-সেপটিক লোশন সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত। কারণ সেগুলি বিশেষভাবে প্রক্রিয়াজাত হয়। কিন্তু প্রকৃতির কোলে বেড়ে ওঠা উপরিউক্ত জৈব উপাদানগুলিতে ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণুর ভয় থেকেই যায়। তাই এগুলিকে সঠিকভাবে পরিশোধন করা জরুরি। তাহলেই মানুষ নির্ভয়ে প্রকৃতিজাত এই উপাদানগুলিকে ব্যবহার করতে পারবেন।