কর্মে সাফল্য ও সুনাম বৃদ্ধি। উকিল, মৃৎশিল্পীদের শুভ। সংক্রমণ থেকে শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে। আর্থিক ... বিশদ
কর্তারা প্রায় সব্বাই বড় বড় চাকরি করেন কলকাতায়!ছেলেরা বিরাটির গায়ে ছান্দ্রা ইশকুলের ছাত্র।তখন অবশ্য বড় রাস্তা, কী যানবাহনের চল ছিল না এ গ্রামে-ও গ্রামে!
সবটাই হাঁটা।কলকাতা যেতে ছোট্ট রেলগাড়ি ধরতে হতো চাঁপাডাঙায়! কয়লার ইঞ্জিন।কু-ঝিক ঝিক করে হেলতে-হেলতে-দুলতে-দুলতে চলত।
জল খেত মাঝে মাঝেই।ইস্টিশনের নামগুলোও ছিল কী সুন্দর!কোনওটা পিয়াসাড়া তো কোনওটা হাওয়াখানা, আঁটপুর!কিন্তু মায়ের সঙ্গে মামাবাড়ি যেতে ছেলেকেও তখন গাড়ি বদল করতে হতো বড়গাছিয়ায়!সেখান থেকেই মাজু। দক্ষিণ মাজু। জালালসি।তারপর, হঠাৎ সেই পানপুর।স্টেশনে নামলেই হাতে গুড়কাঠির ঠোঙা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতেন জয়া মাসি। মায়ের ছোটবোন।আহা রে!সে কী আনন্দ তখন!তবু আমাদের গোটা গ্রামের কাছে মজার ছিল বদরতলা।মাঠের শেষে পীরের মাজার!
শীত পড়লেই কত রকম মজা!গনি মিয়াঁর শাগরেদরা সার্কাস বসাত মাঠের মাঝখানে!কোথা থেকে একটা খোঁড়া ঘোড়াকে জোগাড় করেছিল কে জানে!
সে বেচারি বড্ড বুড়ো!পাড়ায় পাড়ায় ঘুরত গনি মিয়াঁর সঙ্গে।যা আদায় হয় তাই ভালো!এক পয়সার টিকিট।কিন্তু মেয়েরা বাদ।তবু ডুগডুগি বাজাত মিয়াঁ সাহেব।ভিড় করত ছোটরা। ওদের হাততালিই আসল!শীতকালে অবশ্য জল থাকে না নদীতে।বাড়ির কাছেই কালীতলা।কতকালের মন্দির!জিভ বার করা মায়ের গায়ের রং যেমন কালো, তেমন চেহারা! দেখলেই ভয় পাবে।তবু পরীক্ষার সময় আমার মতো ভিতু ছেলে-মেয়েরা কপাল ঠুকত খুব!বলা তো যায় না— অঙ্কটা কেমন পড়বে!কিন্তু বোসবাড়ির বিজ্ঞানী দাদু কলকাতা থেকে গ্রামে এলে আমার জন্যে কত কী আনতেন, তার ঠিক নেই।এসেই সদরে ডেকে নিতেন আমাকে।আমি তো ভয়েই অস্থির।এই বুঝি পড়া ধরবেন আমাকে!
কিন্তু না!পড়াশোনার কোনও কথাতেই তিনি যেতেন না।শুধু পাখ-পাখালিদের কথাই জিজ্ঞেস করতেন আমাকে।বলতেন, ওই লাল ঠোঁট, হলুদ-কালো পালক পরা পাখিটার নাম বলতে পারবি নাকি?আমি বলতুম, ওটা হলদে গুড়গুড়ি—উনি বলতেন, তবে ওই পাখিটার আরও একটা নাম আছে। সে নামটা হল— বেনে বউ! বুঝলি—না।কোনও পড়া ধরতেন না আমাকে!তবু আমি বড্ড ভয় পেতুম তাঁকে।আহা! কী আশ্চর্য মানুষ ছিলেন তিনি কী বলব!কানা নদীর ধার ঘেঁষে আমাকে নিয়ে যেতেন এ পাড়া থেকে ও পাড়ায়।
কাছেই সরকার পাড়া। সদর পুকুর। দুগ্গা দালান।রাংতা পরা দুগ্গা মাকে কি সহজে ভোলা যায়?ঢাক বাজলেই এখনও যেন ছোটবেলাটা এসে উঁকিঝুঁকি দিয়ে যায়! কী আশ্চর্য!তখন তো এমন সুন্দর সুন্দর রাস্তা-ঘাট ছিল না গ্রামের দিকে!বিরাটির মিত্র বাড়ির রামবাবুর স্যার একটা ইশকুল গড়লেন কত ভিক্ষে-দুঃখ করে।আমগ্রাম থেকে মাসুম, মিরাজ আর ফিরোজরা এসে বন্ধু হল আমার! কী আশ্চর্য! তখন থেকেই আমগ্রাম আমার বন্ধু। আমার বাড়ি।আর সেই থেকেই ওদের বাড়ির ছেলেরা আমার ভাইজান! মেয়েরা আমার বহিন। আর—কামাল আমার ছোটবেলা।সোহারাব, সিরাজুল আর রাবেয়া যেন এখনও ফোন তুলে আমাকে ডাকে! বলে, শিউলির কিন্তু কুঁড়ি এবার ফুটবে।তবুও ছান্দ্রার মুন্সি পাড়ার নিজাম, রাবেয়া, মেহের আর শাকিলাকে কি ভোলা যাবে কখনও?আসলে ওরাই তো ছান্দ্রার আসল একটা রূপকথা।আশ্চর্য একটা গল্প।ঠিক রূপকথার মতন শুনতে!