কর্মে সাফল্য ও সুনাম বৃদ্ধি। উকিল, মৃৎশিল্পীদের শুভ। সংক্রমণ থেকে শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে। আর্থিক ... বিশদ
সে যাই হোক, এবার মূল প্রসঙ্গে ফিরি। এত আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে যিনি রয়েছেন তার নাম কোমোডো ড্রাগন। আজ আমরা এই ভয়ঙ্কর প্রাণীটির সঙ্গেই সংক্ষেপে পরিচয় সেরে নেব। দৈর্ঘ্যে কোমোডো ড্রাগন হতে পারে ১০ ফুট। প্রাণীটির ওজন হতে পারে ৩০০ পাউন্ড। এমন বৃহদাকৃতির জন্য এই প্রাণীটিকে পৃথিবীর সবথেকে ভারী টিকটিকি (হেভিয়েস্ট লিজার্ড) বলা হয়। এদের মাথা চ্যাপ্টা ও লম্বা হয়। মুখ থেকে বেরিয়ে আসে একটি লম্বা জিভ। কোমোডো ড্রাগনের অপর এক বৈশিষ্ট্য হল লেজ। এই প্রাণীটির লেজ বেশ লম্বা ও শক্তপোক্ত হয়। নিজেদের মধ্যে ঝুটঝামেলা লাগলে লেজটিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে এই প্রাণী।
কোথায় বাস?
কোমোডো ড্রাগন লক্ষ লক্ষ বছর ধরে ইন্দোনেশিয়ার লেসার সুন্দা অঞ্চলে বাস করে চলেছে। এখানকার প্রতিকূল আবহাওয়াতেও এই প্রাণী সহজেই বাস করতে পারে। গোটা দ্বীপটিতেই এদের দেখা মেলে। তবে দ্বীপটির বনজঙ্গলে থাকতেই কোমোডো ড্রাগন ভালোবাসে। এখানকার উষ্ণমণ্ডলীয় বিশাল বনভূমির (ট্রপিক্যাল ফরেস্ট) বড় বড় ঘাস, ঝোপঝাড়ে নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়ায় এই বিশালকায় সরীসৃপ। গুটিগুটি পা ফেলে কোমোডো ড্রাগন প্রতিদিন প্রায় সাত মাইল পর্যন্ত চলতে পারে। কিন্তু চলতে পারলে হবে কী, এরা ভীষণ ঘরকুনো। তারা বাড়ির কাছাকাছি থাকতেই ভালোবাসে। কালেভদ্রে খুব প্রয়োজন পড়লেই এই সরীসৃপ ঘরের সীমানা ছাড়িয়ে অনেকটা দূর গমন করে।
শিকার
কোমোডো ড্রাগন হল দুর্ধর্ষ শিকারি। যেই দ্বীপে কোমোডো ড্রাগন থাকে সেখানকার অন্যান্য প্রাণীদের কাছে রীতিমতো ত্রাসের কারণ হল এই প্রাণী। হরিণ, শূকর, জলহস্তী থেকে শুরু করে প্রায় যে কোনও প্রাণী হতে পারে কোমোডো ড্রাগনের শিকার।
এই সরীসৃপের শিকার করার ভঙ্গিও দেখার মতো। কোমোডো ড্রাগনের শিকার করার প্রধান অস্ত্র হল ধৈর্য। কোনও একটি জায়গায় ঘাপটি মেরে এই প্রাণী দীর্ঘক্ষণ ধরে শিকারের জন্য অপেক্ষা করে। শিকার পাশ থেকে গেলেই তারপর আসল খেলা শুরু হয়। অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সঙ্গে শিকারের উপর আক্রমণ শানায়। শিকারের শরীরে নিজের তীক্ষ্ণ দাঁত বসিয়ে দেয়। এই আক্রমণের কাছে হার মেনে নেয় বেশিরভাগ শিকার।
তবে কেবলমাত্র সুচালো, মজবুত দাঁতের ভরসায় এই প্রাণী শিকার করে না। কোমোডো ড্রাগনের কাছে রয়েছে আরও এক ভয়ঙ্কর অস্ত্র— বিষ। এই সরীসৃপের মুখের ভিতর রয়েছে ‘ভেনম গ্ল্যান্ড’ বা বিষগ্রন্থি। কোমোডো ড্রাগন অন্য কোনও প্রাণীকে কামড় দেওয়ার পর সেই প্রাণীর শরীরে পৌঁছে যায় বিষ। এই বিষ খুব ভয়ঙ্কর। এই প্রাণীর বিষ রক্তচাপ কমিয়ে দেয়, রক্তজমাট বাঁধতে দেয় না, অতিরিক্ত রক্তপাত করায়। একবার এই বিষ অন্য প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করলেই সমস্যা শুরু। কোমোডো ড্রাগনের কামড়ের ফলে প্রাণীটির দেহের যেখানে ক্ষত তৈরি হয় সেখান দিয়ে রক্তপাত হতেই থাকে এবং প্রাণীটি শকে চলে যায়। এভাবেই শিকার করে এই ভয়াল সরীসৃপ।
তবে কোনও কোনও সময় কোমোডোর মুখে ধরা দেওয়ার পরও শিকার পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। কিন্তু একবার ধরা দিয়ে পালিয়ে গিয়েও এই শিকারির হাত থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ বিষ কিছুক্ষণের মধ্যেই কাজ শুরু করবে। এই বিষয়টা কোমোডো ড্রাগনও বিলক্ষণ জানে। তাই সে শিকারের পিছু নেয়। এরপর বিষ যখন নিজের খেলা দেখাতে শুরু করে তখনই ফের শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এই সরীসৃপ। সম্পূর্ণ হয় শিকার। বিজয়ীর হাসি হাসে কোমোডো ড্রাগন।
সংরক্ষণ
জানলে অবাক হবে, বর্তমানে এই ভয়ঙ্কর প্রাণীও নিজের অস্তিত্ব সঙ্কটে ভুগছে। কোমোডো ড্রাগনের বিপদের পিছনে থাকা অনেকগুলি কারণের মধ্যে একটি অবশ্যই মানুষের লালসা। দিনের পর দিন মানুষ এই সরীসৃপের শিকার করেছে, নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে এই প্রাণীর বাসস্থান। ফলে কোমোডো ড্রাগনের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। তাই ইন্দোনেশিয়ার সরকার ১৯৮০ সালে তৈরি করে কোমোডো ন্যাশনাল পার্ক। ৭০০ স্কোয়ার মাইল বিস্তৃত এই পার্ক কোমোডো ড্রাগন ছাড়াও বহু আশ্চর্যপ্রাণীর বসবাস স্থল। বর্তমানে ইউনেস্কো এই পার্কটিকে ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। কোমোডো ড্রাগনের শিকার রুখতে স্থানীয় প্রশাসন এই অঞ্চলে কড়া নজর রাখে। তাই সময় সুযোগ হলে বন্ধুরা, এই ন্যাশনাল পার্ক থেকে ঘুরে আসতেই পারো। রোমাঞ্চকর পরিবেশে চোখের সামনেই দেখতে পাবে এই প্রাণীকে।
সায়ন নস্কর