কর্মে সাফল্য ও সুনাম বৃদ্ধি। উকিল, মৃৎশিল্পীদের শুভ। সংক্রমণ থেকে শারীরিক অসুস্থতা হতে পারে। আর্থিক ... বিশদ
আমার জীবনে শিক্ষকদের ভূমিকা অপরিসীম
আমি সব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জানাই শিক্ষক দিবসের প্রণাম এবং ভালোবাসা। প্রথমে আমি আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকার কথা বলি। তাঁরা করোনা মহামারীর মধ্যেও আমাদের অনলাইন মাধ্যমে শিক্ষাপ্রদান করছেন, যাতে সঠিকভাবে শিক্ষা অর্জন করতে পারি। এবার আমার সঙ্গীত শিক্ষিকার কথা বলছি। ইনিও করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে থেকেই বাড়িতে এসে গান শেখাতেন। যখন আমি ছোট ছিলাম তখন উনি আমায় সহজ সহজ রবীন্দ্রসঙ্গীত শেখাতেন। কিছুদিন পরে উনি ধীরে ধীরে আমাকে তুলনায় কষ্টকর গান শেখাতে লাগলেন। আমি অনেক জায়গায় সঙ্গীত পরিবেশন করেছি। অনেক প্রশংসাও পেয়েছি। গানের শিক্ষিকাকে অনেক শ্রদ্ধা জানাই। এবার আমার আবৃত্তি শিক্ষকের কথা বলি। উনি আমাকে ভীষণ স্নেহ করেন। তাঁর জন্যই আমি অনেক বড় বড় জায়গায় আবৃত্তি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পেরেছি। অনেক পুরস্কারও পেয়েছি। আমি এখনও পর্যন্ত যা কিছু শিখতে পেরেছি, তার জন্য আমার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভূমিকা অপরিসীম।
লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজ স্কুল
সত্যি কথা বলতে কী যখন ছোট ছিলাম, শিক্ষকদের ওপর খুব রাগ হতো! শিক্ষকদের মধ্যে অনেককে ভয়ও পেতাম! এখনও অবশ্য কয়েক জন স্যারকে ভয় পাই। সারাক্ষণ খালি এটা পড়, ওটা পড়, এই ক্লাস কর, ওই ক্লাস কর, ক্লাস ওয়ার্ক কর। খেলার সময়ই পেতাম না। কিন্তু এখন মনে হয়, ভাগ্যিস তাঁরা ছিলেন! না হলে আমার যে কী হতো!
ভাগ্যিস রাজেন স্যার এত সহজ করে ‘এরিথমেটিকের কনসেপ্ট’টা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। তাই তো এখন কেসি নাগের অঙ্কও আর কঠিন লাগে না! নম্রতা মিস এত সুন্দর করে পিরিয়ডিক টেবিল আর ইলেক্ট্রোকেমিক্যাল সিরিজটা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে, এখন সহজে ইকুয়েশনগুলো করে ফেলতে পারি! আর সেই জন্যই তো এখন ক্লাসওয়ার্ক, হোমওয়ার্ক তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। এখন আমি খেলার জন্য অনেক বেশি সময় পাই! খেলার কোথায় মনে পড়ল, যশ স্যারের জন্যই ইন্টার স্কুল ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন হতে পারছিলাম। পীযুষ স্যারের ওপর খুব রাগ হতো ভেকেশনের সময়েও ফ্রেঞ্চ ক্লাস করানোর জন্য! সুফলটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম ২০১৯-এ বেলজিয়াম বেড়াতে গিয়ে! বাবা-মা তো ওখানকার ভাষা বুঝতে পারছিলেন না। সব কাজের কথা আমাকে করতে হয়েছে! ওদের বেশির ভাগ মানুষই তো ইংরেজি বলতে পারে না! তখন মনে মনে অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছি পীযুষ স্যারকে। তাই আজ শিক্ষক দিবসে আমার সব শিক্ষকদের জানাই অনেক শ্রদ্ধা।
বিলাবং ইন্টারন্যাশনাল হাই স্কুল, মুম্বই
কোভিড সংক্রমণের ফলে আজ সারা বিশ্বের দৈনন্দিন ব্যস্ততার গতি থমকে গিয়েছে। এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়েছে শিক্ষার ওপর। পুঁথিগত বিদ্যার পঠনপাঠন চাহিদা ও বাধ্যবাধকতার নিমিত্ত এগলেও সমস্যায় পড়েছে গুরুমুখী বিদ্যাগুলি। যে গুরুরা আমাদের নাচ-গান, আঁকা বা খেলাধুলো শেখান, তাঁরা অনেকটাই অসুবিধায় পড়েছেন এই নতুন শিখন পদ্ধতির সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে। হাতে কলমে শিক্ষার প্রধান শর্ত —গুরু ও শিষ্যের শারীরিকভাবে এক জায়গায় উপস্থিত হওয়া। ল্যাপটপ, মোবাইলের মতো ছোট পরিসরে এগুলি শেখার উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করা প্রায় অসম্ভব। গুরুমুখী এই শিল্পশিক্ষার মর্মার্থ যদি গতেবাঁধা ছকে ফেলে বোঝার চেষ্টা করা হয় তাহলে তা অধরাই থেকে যায়। নিঃস্বার্থ ভাবে, প্রযুক্তির সঙ্গে মানানসই হওয়ার জন্য শিক্ষক তথা গুরুর যে অদম্য প্রচেষ্টা তা আমাদের তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তুলছে প্রতিনিয়ত। গুরুকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের নির্দিষ্ট দিন নেই, আর এও জানি, কোনও বাধা বিপর্যয়ই গুরু-শিষ্যের সম্পর্কের অন্তরায় হতে পারে না। এবছরও করোনা সংক্রমণের জন্য একে অপরের মুখোমুখি হওয়া সম্ভব নয়। তাই প্রযুক্তির ওপর ভরসা করে, এই শিক্ষক দিবসে আমার কয়েকজন গুরুজিকে অনলাইনে একটা ছোট্ট অনুষ্ঠান উপহার দিয়েছি। শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানাই তাঁদের।
বেথুন কলেজিয়েট স্কুল
আমাদের সকলেরই প্রথম শিক্ষিকা মা। শুরুতে মায়ের হাত ধরে স্কুলের সেইসব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে পৌঁছেছিলাম, যাঁরা আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের পথপ্রদর্শক। স্কুলের অনেক শিক্ষকের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হলেও বিশেষ একজন শিক্ষকের কথা আজ আমি লিখতে চাই। তিনি আমাদের স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক। তিনি আমাদের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়, ক্যুইজ, বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে উৎসাহিত করেন। তিনি যখন আমাদের পড়ান, তখন আমি মুগ্ধ হই তাঁর কথা, তাঁর বাচনভঙ্গিমায়। তাঁর সব কিছুই, বিশেষত তাঁর নিয়মানুবর্তিতা আমাকে আকৃষ্ট করে ও অনুপ্রেরণা জোগায়।
এ বছর শিক্ষক দিবসে প্রতিবছরের মতো স্কুলে গিয়ে আমরা আনন্দ করতে পারব না। শিক্ষকদের নিজেদের খুশি মতো উপহারও দিতে পারব না। বন্ধুদের সঙ্গে ক্লাসঘর সাজাতে পারব না, শিক্ষকদের সাহচর্যে দিনটি উদযাপন করতেও পারব না। তাই, আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করেছি যে, নিজেরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে ভিডিও করে ফেসবুক ও ইউটিউব-এর মাধ্যমে শিক্ষকদের উদ্দেশে দিনটিকে উৎসর্গ করব। আমি শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষকদের শ্রদ্ধা ও সম্মান জানাতে চাই।
জলপাইগুড়ি জিলা স্কুল
শিক্ষক-শিক্ষিকা ছাড়া কারও শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় না। পরিবারে ‘বাবা-মা’-র পরে যাঁরা আমাদের জীবন শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে বড় করার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেন, তাঁরা হলেন শিক্ষক-শিক্ষিকা। আমার জীবনে এরকমই একজন শিক্ষিকা হলেন সুরেলাদি (সুরেলা চক্রবর্তী)। তাঁকে প্রথম থেকেই আমি ‘দিদি’ বলে ডাকি। দিদি ডাকের মধ্যে যতটা আপনভাব থাকে, ঠিক ততটাই আপন আমার সুরেলাদি। তিনি আমাকে নবম শ্রেণি থেকে বাংলা পড়াচ্ছেন। আর তখন থেকেই শুরু হয়েছে করোনা সংক্রমণের জন্য গৃহবন্দি অবস্থা। তাই ইন্টারনেট ছাড়া আর উপায় নেই। একজন শিক্ষিকা মূলত তাঁর বিষয়েই অত্যধিক আলোকপাত করবেন এটাই দস্তুর। কিন্তু সুরেলাদি তার সময়ের বাইরে গিয়েও বলেন, ‘যা ভালো করে ফিজিক্স আর অঙ্ক কর’। আমার অবাক মুখের দিকে তাকিয়ে দিদি বলেন, ‘আমিও তো এই সময়টা পেরিয়ে এসেছি, ছাত্রছাত্রীদের কোথায় দুর্বলতা, তা আমি ভালো করেই জানি’। পড়ার ফাঁকে দিদির অনুসন্ধান, আর কোন বিষয়ে আমি পিছিয়ে রয়েছি, যে বিষয়গুলোতে বোঝার থেকেও মুখস্থই আমার ভরসা। সেই বিষয়গুলোর দায়িত্বও সুরেলাদি নিজের কাঁধেই নিয়ে নিয়েছেন। মুখস্থ নয়, বিষয়ের প্রতি ভালোবাসা আর নিজের প্রতি বিশ্বাস, একজন আদর্শ শিক্ষক তাঁর ছাত্রছাত্রীকে এর বেশি আর কী দিতে পারেন। আর এই করোনা পরিস্থিতিতে যেখানে ইন্টারনেটই শিক্ষণের একমাত্র মাধ্যম সেখানে এই ভালোবাসাবোধ যিনি জাগিয়ে তুলতে পারেন তিনিই তো আদর্শ শিক্ষক। এমন কঠিন সময়ে প্রত্যক্ষভাবে সাক্ষাৎ করে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে আমার প্রিয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের প্রতি শ্রদ্ধানিবেদনের সুযোগ এ-বছর না থাকলেও সুরেলাদি সহ আমার সমস্ত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের জানাই আমার অন্তরের শ্রদ্ধা ও প্রণাম।
বিধাননগর রাষ্ট্রীয় উচ্চ বিদ্যালয়
দেশ ও জাতির জীবনে এমন কিছু দিন থাকে, যে দিনগুলি আমাদের উজ্জীবিত করে নতুন ভাবনায়, অঙ্গীকারে। ৫ সেপ্টেম্বর তেমন একটি দিন। বিশিষ্ট শিক্ষাব্রতী সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের জন্মদিনে সারাদেশ তাঁকে স্মরণ করে ও শিক্ষক দিবস উপলক্ষে দিনটি উদযাপন করা হয়। সকলের জীবনে শিক্ষকের ভূমিকা অনেক। শিক্ষক মানে যাদের কাছ থেকে আমরা কিছু না কিছু শিখেছি। শুধু পড়াশোনা নয়, জীবনের নানা দিকে আমাদের ভাবনাকে ছড়িয়ে দিতে, পারদর্শিতা অর্জন করতে শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য। শিক্ষক আমাদের পরামর্শ দেন। ব্যর্থতায় কাঁধে হাত রাখেন। আমি ছোটবেলা থেকে আমার মাকে ‘মা’ এবং ‘শিক্ষক’ দু’ ভাবেই পেয়েছি। সে ‘অ আ ক খ’ থেকে ফিজিক্স বা জ্যামিতির উপপাদ্য যাই-ই হোক না কেন, মা-ই সবার সেরা। মা বলেন, সহজে কখনও হার মেনে নিও না। সব সময় চেষ্টা করে যাবে। সাফল্য একসময় আসবেই। মা ও বাবার এই শিক্ষা আমি মেনে চলবার চেষ্টা করি। শিক্ষক দিবসে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আশীর্বাদ নিয়ে তাঁদের হাতে কিছু উপহার তুলে দিতে খুব ইচ্ছে করে। এখন সেই সুযোগ নেই। দেখাই তো হয়নি কতদিন।
বালিগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়
আমার জীবনের প্রথম শিক্ষক আমার দিদুন। দিদুনই আমায় লিখতে পড়তে শিখিয়েছেন। তাঁর কাছেই আমার হাতেখড়ি। তিনি সংসারের সব কাজ সামলানোর সঙ্গে সঙ্গে আমার পড়াশোনার দেখাশোনাও করেছে। গত এক বছরে এই গৃহবন্দি পরিস্থিতিতে আমি কাবাব তৈরি করতে শিখেছি। তাই আমি ঠিক করেছি এবছর আমি নিজে হাতে কাবাব তৈরি করে দিদুনকে খাওয়াব। আর পুরো দিন দিদুন যা বলবে সব কথা শুনব ও দিদুনের সঙ্গেই সময় কাটাব। দিদুনের পর আমার কাছে শিক্ষক হিসাবে সবথেকে প্রিয় হলেন পিপি স্যার মানে প্রতীক পাইন স্যার। আমি স্যারের সান্নিধ্যে আসি প্রথম শ্রেণিতে। উনি আমার শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু আস্তে আস্তে ক্লাসরুম ও স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে আমাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছিল। পি পি স্যারের ইচ্ছাতেই আমার নাটকের ক্লাসে ভর্তি হওয়া, যা এখন আমার খুব প্রিয়। স্যারের তত্ত্বাবধানেই নাটকের ক্লাসের কয়েকজন বন্ধু ও তাদের বাবা-মা একসঙ্গে মিলে ডুয়ার্সের ইচ্ছেগাঁও বেড়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে স্যার আমাদের প্রকৃতিকে চিনতে শিখিয়েছেন। স্যার আমার কাছে বটবৃক্ষের মতো ছিলেন। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য আজ উনি আমাদের মধ্যে নেই। তাই করোনা পরিস্থিতিতে আমরা যখন একসঙ্গে হতে পারছি না তখন আমরা বন্ধুরা ঠিক করেছি আমরা অনলাইনে একটি অনুষ্ঠান করে স্যারকে শ্রদ্ধা জানাব।
দি স্কটিশ চার্চ কলেজিয়েট স্কুল
জানি না কেন শিক্ষক দিবসে আমার নিজের খুব শিক্ষক হতে ইচ্ছে করে। বেশ পড়াব কোনও স্কুলে। আমাদের দিদিদের মতো। আমি বাংলা পড়াব। দিদি যেমন সুন্দর করে পড়ান, তেমন করে। স্পষ্ট উচ্চারণ, গুছিয়ে সুন্দর বাক্য গঠন করে কথা বলা, আমার খুব ভালো লাগে। অনলাইন ক্লাসেও দিদিদের পড়ানো আমি মিস করতে চাই না। অবশ্য বাড়িতে একটা ফোন থাকায় দুপুরের দিকে একটু অসুবিধা হয়। তাও ভয়েস মেসেজে যখন কথাগুলো ভেসে আসে, আমি মন দিয়ে শুনি। ব্যাকরণ বই নিয়ে বসে সেটাই তখন আমার পড়া। এভাবেই পড়াশোনার একটা অপরিচিত জগৎ আমার সামনে দিদিরা তুলে ধরছেন। আমাদের গতানুগতিক ভাবনার বাইরে কত কী নতুন ভাবার আছে, সেটা তো আমরা এভাবেই শিক্ষক শিক্ষিকাদের হাত ধরে শিখি। সারাজীবন সেটা যেন মনে রাখি। কতদিন স্কুলে যাইনি। শিক্ষক দিবস একটা একটা করে পার হয়ে যাচ্ছে। আমরা কিছুই করতে পারছি না। এমন দিনে গান আবৃত্তি নাচ কত কী হয় স্কুলে। দিদিদের আদরটাও তো কত দামী।
বাগবাজার মাল্টিপারপাস গার্লস স্কুল