কোনও কিছুতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভাববেন। শত্রুতার অবসান হবে। গুরুজনদের কথা মানা দরকার। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সুফল ... বিশদ
‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিয়ে চায় হে, কে বাঁচিতে চায়’— কবির এই বাণী সর্বাংশে সত্য। আকাশের নক্ষত্র থেকে মাটির ক্ষুদ্রতম প্রাণটি পর্যন্ত স্বাধীনতা চায়।
অজস্র রক্তপাতের মূল্যে ছিনিয়ে আনে স্বাধীনতা। পৃথিবীর অনেক দেশ এইভাবে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়েছে। আমাদের দেশ ভারতবর্ষ ২০০ বছরের পরাধীনতা থেকে মুক্ত হয়েছে। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৫ আগস্ট এই দিনটি ভারতের স্বাধীনতা দিবস।
বাড়ি, স্কুল-কলেজ, অফিস, আদালতে এই দিন সকালে উত্তোলিত হয় দেশের জাতীয় পতাকা। দেশাত্মবোধক গান, কবিতা, আবৃত্তি, নাটক, অভিনয়ের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করা হয় দেশের বীর সৈনিকদের উদ্দেশে।
সম্প্রতি মুক্ত হয়েছে সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন, যা স্বাধীনতার এই চেহারা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের কোনও সময় প্রার্থনীয় ছিল না। তবে দুঃসময় কেটে যাবে। আবার সুদিন আসবে। আমিও কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলতে চাই— ‘ভারত আবার জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে।’
সৌপর্ণ চক্রবর্তী, শ্রেণী ষষ্ঠ, হিন্দু স্কুল
আমার দেশ ভারতবর্ষ
স্বাধীনতা বলতে প্রত্যেকের স্বাধীনভাবে সমর্যাদায় বেঁচে থাকার অধিকারকে বোঝায়। স্বাধীনতার অর্থ কখনওই আদর্শের বিচ্যুতি বা উচ্ছৃঙ্খলতাকে বোঝায় না। আমার দেশ ভারতবর্ষ, যেখানে তার প্রতিটি নদী, অরণ্য, পশুপাখি এত স্বাধীন, যেখানে তার প্রতিটি পর্বতশৃঙ্গ সকল বাধা-নিষেধ অগ্রাহ্য করে আকাশকে ছুঁতে বদ্ধপরিকর, সেই দেশ কিনা অন্যের অধীন হয়ে হাতে পরেছিল শৃঙ্খলের অলঙ্কার? এই অন্যায় কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি ভারতের তরুণ সন্তানরা। তাই তারা এই বিশাল দেশের আদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে দেশমাতৃকার মুক্তিকল্পে ব্রতী হয়েছিল। ব্রিটিশের অধীন ভারত-ভূমিতে জ্বালিয়েছিল বিপ্লবের আগুন। আর সেই অগ্নিপ্রবাহে দগ্ধ হয়ে একদিন ভারত ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল ব্রিটিশ। সেই দিন থেকে আজ পর্যন্ত ভারতের আকাশে অান্দোলিত হচ্ছে এক ত্রিবর্ণরঞ্জিত পতাকা— ক্রম উন্নয়নশীল স্বাধীন ভারতের স্বাধীন পতাকা!
উস্রি পোড়িয়া, দশম শ্রেণী
রামকৃষ্ণ সারদা মিশন সিস্টার
নিবেদিতা গার্লস স্কুল
স্বাধীনতার স্বপ্ন
২০০ বছরের অধীনতা কাটিয়ে আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীনতার স্বাদ। যা ছিল আমাদের গর্বের ও আনন্দের। কিন্তু সেই উপলব্ধি আজ উপভোগ করতে পারছি না। আজও মানুষ স্বনির্ভর নয়। দেশে আছে লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক-যুবতী। ৭২ বছর পরও বহু নরনারীর অন্নবস্ত্রের সংস্থান নেই। কত মানুষ গৃহহীন। শিশুমৃত্যু, কন্যাপণ, জাতপাতের সমস্যায় আজও আমরা মগ্ন। মূল্যবোধ, নীতিবোধ, নিয়ম-শৃঙ্খলা, সম্মান, ঐক্যবোধ যেন এ সমাজ থেকে বিতাড়িত। সংবাদপত্রের পাতায় দেখি শুধু হিংসার রাজনীতি। অন্যায় করলেও বহু ক্ষেত্রে মেলে না কঠিন শাস্তি। মাঝে মাঝে ভাবি আমরা কোন সমাজে বড় হচ্ছি? বর্তমান ছাত্রসমাজ সত্যিই হতাশাগ্রস্ত। কী শিখছি আমরা? এই হানাহানির স্বাধীনতা তো বিপ্লবীরা চাননি! তাঁরা যে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন আমরাও চাই সেই স্বপ্নের সওদাগর হতে।
তন্দ্রা নস্কর, নবম শ্রেণী
থানা মাখুয়া মডেল হাইস্কুল
জাতীয় পতাকা উত্তোলন করি
ইতিহাস। বরাবরই প্রিয়। বাবার মুখে শোনা স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস শোনার জন্য মুখিয়ে থাকি। যখন বিপ্লবীদের রক্তাক্ত সংগ্রামের কাহিনী শুনি গা যেন কাঁটা দেয়। আমাদের পড়াশুনা হয়ে যাবার পর বাবা নিবু নিবু আলোতে বসে গল্প বলেন। আর সেই অশরীরী চরিত্রগুলো কখন যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। বিনয়, বাদল, দীনেশের রাইটার্স অভিযান। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন, আজাদ-হিন্দ-ফৌজের মণিপুরের মৈরাং-এ ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের ঘটনা আমায় নাড়া দেয়। তাই ভারত মাতার কথা মাথায় রেখে ১৫ আগস্ট আমরা জাতীয় পতাকা তুলি। আমাদের দীপায়ন সংস্থায় ১০০ জন ভাইবোনের সঙ্গে জড়ো হয় গ্রামের মানুষ। গান, নাচ, অঙ্কন ও ফুটবল প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস।
আকাশ সামন্ত, নবম শ্রেণী
উত্তরপাড়া অমরেন্দ্র বিদ্যাপীঠ
প্রথম মহিলা স্বাধীনতা সংগ্রামী
নারী ও শিশু ছিল সেই সময় অবহেলিত। তাই সমাজের অগ্রভাগে এসে নারীর কথা বলার অধিকার ছিল না। সেই সময় দাঁড়িয়ে তাদের মুখে কথা বলার শক্তি জুগিয়েছিলেন প্রীতিলতা। পেশায় শিক্ষিকা। ২১ বছরে নিজের জীবন বলিদান দিয়েছেন দেশের জন্য। বহু সহযোদ্ধাদের প্রাণ বাঁচিয়ে একা লড়াই চালিয়ে গেছেন। বন্দুকের গুলি শেষ হলেও পুলিসের হাতে ধরা দেননি। নিজে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। ব্রিটিশ শাসকের কাছে মাথা নোয়াননি। তাই স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে সেই বীর সেনানীর জীবন আমায় নাড়া দেয়। তাঁদের আদর্শ ও মূল্যবোধ আমার আগামী দিনের পাথেয়। ভারতের প্রথম স্বাধীনতা সংগ্রামী প্রীতিলতা আমাদের প্রেরণার উৎস।
মৌসুমী মণ্ডল, অষ্টম শ্রেণী
উত্তরপাড়া উচ্চ-বালিকা বিদ্যালয়
নদীয়ার অবদান অনস্বীকার্য
ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নদীয়া জেলার শান্তিপুরের অবদান অনস্বীকার্য। ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধাচরণের বিরুদ্ধে সাহস দেখিয়েছিলেন শান্তিপুরের তাঁতিরা। এমনকী ১৮৫৭ সালে বিদ্যাসাগরের বিধবা বিবাহের সমর্থনে গান গেয়ে শাড়ির পাড়ে নকশা এঁকেছিলেন। বিপিনচন্দ্র পালের উপস্থিতিতে শান্তিপুরে পালিত হয় ‘শিবাজী উৎসব’। এরই মধ্যে মুরারীপুকুর ষড়যন্ত্র মামলায় যাবজ্জীবন
কারাদণ্ড হয় নিরাপদ রায় ও
বিভূতি সরকারের।
১৯১৫ সালে শান্তিপুরের নবীন যুবকদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য গড়ে ওঠে ‘সাহিত্য পরিষদ’। এছাড়া অসহযোগ খিলাফৎ ও রাওলাট
আইন বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়ে পড়ে শান্তিপুর। চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনে কারাবন্দি হন নীরদ খাঁ,
শশী খাঁ ও নারায়ণ গোস্বামী।
নেতাজি সুভাষ বোসের ফরোয়ার্ড ব্লকের শাখা সংগঠন নিয়ন্ত্রণ করতেন জয়ন্ত দাস ও বারীন সান্যাল। বিয়াল্লিশের আন্দোলনেও ঝাঁপিয়ে পড়েছিল শান্তিপুর। স্বাধীনতা আন্দোলনে শান্তিপুরের অবদান অনেক।
স্নিগ্ধা দাস, দশম শ্রেণী
রাধারানি নারী শিক্ষা মন্দির
স্বাধীনতার ইতিহাসে শান্তিপুর
ভারতের স্বাধীনতার ইতিহাসে অগ্রগণ্য ভূমিকা নিয়েছিল শান্তিপুর। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এইরকম একটি প্রাচীন শহর ও হিন্দুদের তীর্থক্ষেত্র দেশভাগের সময় চলে গিয়েছিল পাকিস্তানে। আমরা সবাই জানি ব্রিটিশরা
যাওয়ার সময় আমাদের দেশটাকে দু’ভাগে ভাগ করে দিয়েছিল। মানচিত্রের উপর পেন্সিলের দাগে একটি হঠকারী সিদ্ধান্তের শিকার হয় শান্তিপুর। তখন লক্ষ্মীকান্ত মৈত্রের তৎপরতায় ও জওহরলাল নেহরুর সহযোগিতায় ১৭ আগস্ট মধ্যরাতে শান্তিপুরকে ভারতবর্ষের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ১৮ আগস্ট শান্তিপুরের ডাকঘর মোড়ে জাতীয় পতাকা তোলা হয়। পতাকা উত্তোলন করেন কবি করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়। আজও শান্তিপুরে আঞ্চলিক লাইব্রেরি’তে পতাকাটি রাখা আছে। তাই একজন শান্তিপুরবাসী হিসেবে আমি গর্বিত।
অভিজিৎ দত্ত, নবম শ্রেণী
শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র
১৫ আগস্ট আমাদের জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিন। পরাধীনতার শৃঙ্খল কাটিয়ে আমরা পেয়েছিলাম স্বাধীনতা। দুশো বছরের সংগ্রামের
পর একটু মুক্তির নিঃশ্বাস। কত মানুষের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর সুজলা সুফলা এক ভারতবর্ষের স্বপ্ন দেখেছিল সবাই। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে সাম্প্রদায়িকতার বীজ উপড়ে ফেলতে চেয়েছিল সবাই। আমাদের সেই স্বপ্নের ভারত স্বাধীনতার ৭২ বছর পরও দেখতে পাইনি। আজও দেশের অন্দরে রয়েছে হিংসা, হানাহানি, অশিক্ষা, কুসংস্কার ইত্যাদি। বিপ্লবীদের বলিদান ভুলে রাজনৈতিক নেতারা নিজের আখের গোছাতে ব্যস্ত। দেশ ও দেশের মানুষকে শোষণ করে নিজের সম্পত্তি বাড়াতে মগ্ন। তাই দেশভক্তি ও দেশমাতাকে নিয়ে যুব সমাজের চিন্তা-ভাবনা সীমিত। তাই শুধু ১৫ আগস্ট নয়, দেশের এই স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখতে নতুনভাবে চিন্তাভাবনা করা উচিত। যাতে যুবসমাজ উদ্বুদ্ধ হয়। আমরা যেন স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ খুঁজে পাই।
অনির্বাণ গুপ্ত, দশম শ্রেণী
মিত্র ইনস্টিটিউশন (মেন)
স্বাধীনতার অপব্যবহার নয়
সেই ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে শুরু করে স্কুল, কলেজ, বিভিন্ন সরকারি বেসকারি প্রতিষ্ঠানে সাড়ম্বরে পালিত হয়ে আসছে স্বাধীনতা দিবস।
কিন্তু স্বাধীনতা দিবস পালন মানে কি শুধুই জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহিদ বেদিতে মাল্যদান করা, জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া বা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জয়ধ্বনি দিয়ে প্রভাতফেরি করা। আমার মনে হয় এখন স্বাধীনতা দিবস পালন একটা গতানুগতিক নিয়মে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। তাই দিনটি পালনের সঙ্গে সঙ্গে কেন আমরা এই বিশেষ দিনটি পালন করি, তার মূল উদ্দেশ্য কী— তার একটা সুন্দর বার্তা সব স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া দরকার। অবক্ষয় রুখতে স্বাধীনতা দিবসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সংগ্রামীদের জীবনের বিভিন্ন ঘটনা বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। আর তাঁদেরই তৈরি করে দেওয়া পথ ধরে চলার জন্য আমাদের শপথ নিতে হবে। মনে রাখতে হবে ‘স্বাধীনতা’ মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়, তার অপব্যবহারও নয়। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত, দেশকে রক্ষা করা। দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, ভৌগোলিক সীমা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, শিল্প প্রভৃতি মানুষকে স্বদেশ সম্পর্কে চেতনাসম্পন্ন করে তোলে।
দেশাত্মবোধের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় অগ্রগতি গভীর ভাবে সম্পর্কযুক্ত। এর জন্য চাই দেশের প্রতি ভালোবাসা। মাতৃসমা জন্মভূমিকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা প্রত্যেকের পবিত্র কর্তব্য। সেখানে যেন কোনও জায়গায় কোনওরকম বৈষম্য না থাকে। তাই তো দেশকে ভালোবেসে বিবেকানন্দ বলেছেন— ‘ভারতের মৃত্তিকা আমার স্বর্গ। ভারতের কল্যাণ আমার কল্যাণ’। সমগ্র দেশবাসী যখন এই বাণীর মর্ম উপলব্ধি করবে, তখনই জাতীয় অগ্রগতি সম্ভব হবে। আর তবেই তো ভারত জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন গ্রহণ করবে।
লোকনাথ সাউ, অষ্টম শ্রেণী
এগরা রামকৃষ্ণ শিক্ষা মন্দির
সংকলন শম্পা সরকার
ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে