সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি প্রচেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা। ন্যায্য অর্থ সঠিক সময়ে নাও পেতে পারেন। অর্থপ্রাপ্তির যোগ ... বিশদ
দার্জিলিং মেল নির্ধারিত সময় এনজেপি পৌঁছল। ওখান থেকে টোটোয় করে বাসস্ট্যান্ডে এলাম। সেখান থেকে কালিম্পং যাওয়ার মিনিবাস ধরে ঘণ্টা দুয়েক পর কালিম্পং এসে পৌঁছলাম। ঘড়িতে এগারোটা বেজে গেলেও দোকানপাট তেমন জমজমাট নয়। সকাল থেকে খাওয়া হয়নি। সামনে চায়ের দোকানে কেক পেস্ট্রি বিক্রি হচ্ছে। চায়ের তেষ্টা মেটাতে দোকানের সামনে পাতা বেঞ্চে কাঁধের ব্যাগ নামিয়ে বসে পড়ি। সামনের লোকজন অধিকাংশ নেপালি। একজনকে জিজ্ঞেস করি, পাবং যাওয়ার বাস কোথা থেকে পাব? ছেলেটি আমার দিকে চায়, মুখে মৃদু হাসি। একটু চুপ করে থেকে বলে, তেমন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেই, বেলা দুটো নাগাদ একটা সার্ভিস ট্রেকার আসবে বাসস্ট্যান্ডে। চায়ের দাম মিটিয়ে বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আছি পাবং যাওয়ার ট্রেকার ধরতে। এক বাঙালি দোকানি বলল, ‘পাবং-এর রাস্তা খুব দুর্গম। লোকজন তেমন নেই। তাই ও রাস্তায় বাস চলে না। সার্ভিস ট্রেকার যেটা যায়, তাতে বাদুড়ঝোলা লোক আর জিনিস। আপনি তাতে যেতে পারবেন না। তাছাড়া বেলাও হচ্ছে, প্রায় ৩৪ কিলোমিটার যেতে হবে। গাড়ি বুক করে চলে যান।’ অফিসের কাজে শিলিগুড়ি এসেছিলাম। টাকাপয়সা অনেকটা খরচ হয়ে গিয়েছে। তবু উপায় নেই, তাই দেরি করলাম না। ড্রাইভার দু’হাজার চাইলে ওই দোকানদার দরদাম করে ১৫০০-তে রাজি করালেন।
চলতে শুরু করে গাড়ি। মেঘলা আকাশ আরও মেঘলা। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। কালিম্পং শহর ফেলে অনেকটা এগিয়েছি। আকাশ গভীর মেঘে আচ্ছন্ন। পাইন বনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। কোথাও কোথাও কমলালেবু বা সিঙ্কোনা গাছের জঙ্গল। ডানদিকে নজরে আসে রোলি নদী। তার পাশ দিয়ে নির্জন অরণ্য চিরে রাস্তা গিয়েছে। কিছুটা যাওয়ার পর টিনের সাইনবোর্ডে লেখা ‘ওয়েলকাম টু পাবং’। ছোট গ্রামটি ছবির মতোই সুন্দর। কাছাকাছি একটা হোমস্টে পেলাম। পাইন বনে ঝোড়ো বাতাস বইছে, একটানা একটা শব্দ। উষ্ণ চায়ে চুমুক দিতে দিতে পাবং গ্রামের দিকে তাকাই। হাতে গোনা কয়েকটি ঘরবাড়ি। আকাশ অনেকটা পরিষ্কার হয়েছে। নজরে আসে ধোঁয়াটে ধূসর তরাই অঞ্চলের পাহাড়শ্রেণি। সবুজ অরণ্য, কোথাও বা ঘন বাঁশবন। আর আছে বিচিত্র সব পাখি। সারাক্ষণ ডাকছে।
দুপুরের খাওয়া একেবারে সাদামাটা। ডাল, ভাত, সব্জি, আলুভাজা, ডিমের ঝোল, চাটনি। অপরাহ্নে আকাশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। দিগন্তবিস্তৃত মুক্ত প্রকৃতিকে দেখা যাচ্ছে। কোনও এক পাখির সুরেলা ডাক মন মাতিয়ে দেয়। হোমস্টের মালকিনের কথায় জানতে পারলাম উত্তরবঙ্গে হোমস্টে করে পর্যটন শিল্পকে উন্নত করার জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। পরিকাঠামো ঢেলে সাজানো হচ্ছে। খাওয়ার পর হেঁটে পাকদণ্ডী পথ ধরে ঘুরে আসি। একটা মাত্র দোকান সেখানে। চা, বিস্কুট, চাল, ডাল, সাধারণ জিনিস, যৎসামান্য ওষুধও পাওয়া যায়। অন্ধকার নেমে আসছে। চা খেয়ে টর্চ নিয়ে ফেরার পথ ধরি।
পরেরদিন ভোরবেলায় দরজায় কে যেন আওয়াজ করল। দরজা খুলে দেখি মালকিনের বাবা। সামনের দিকে তাকাতে বললেন আমায়। ওঁর কথায় সামনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলাম। মেঘমুক্ত আকাশে হীরের নেকলেসের মতো জ্বলজ্বল করছে তুষারধবল হিমালয়ের বরফাবৃত শৃঙ্গ। কাঞ্চনজঙ্ঘা ১ ও ২ শৃঙ্গ, কুম্ভকর্ণ আর মাকালুর উপরে প্রথম সূর্যের আলো পড়ল। মনে হচ্ছে শৃঙ্গের উপরে সোনা গলিয়ে ঢেলে দিয়েছে কেউ। এই রূপ নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। দ্রুত ক্যামেরাবন্দি করি। ক্রমশ আলো ফুটে গেল। কুয়াশা জমতে আরম্ভ করল। তুষারধবল শৃঙ্গ কুয়াশার আড়ালে চলে গেল। পরের দিন গাড়ি নিয়ে ঘুরে এলাম আরও দু’টি সুন্দর জায়গা, চুইখিম ও চারখোল। এবার ফেরার পালা জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ি। সকাল সাতটায় সার্ভিস ট্রেকার আসবে। সাড়ে পাঁচ ঘণ্টায় পৌছে দেবে শিলিগুড়ি।
কীভাবে যাবেন ও কোথায় থাকবেন:
ট্রেনে এনজেপি নেমে সেখান থেকে কালিম্পং। কালিম্পং থেকে পাবং যাওয়ার জন্য গাড়ি বুক করতে হবে। পাবং-এ থাকার জন্য হোমস্টে আছে। এছাড়া কালিম্পঙের জন্য wbtdcl.wbtourismgov.in দেখতে পারেন।