সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি প্রচেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা। ন্যায্য অর্থ সঠিক সময়ে নাও পেতে পারেন। অর্থপ্রাপ্তির যোগ ... বিশদ
বাঙালির বিদেশ ভ্রমণের তালিকায় অন্যতম সংযোজন নীল নদের দেশ মিশর। আফ্রিকা মহাদেশের উত্তরাংশে সাহারা মরুভূমির গা-ছোঁয়া এই দেশে সারা দুনিয়ার পর্যটকরা ভিড় জমায় ফারাওদের ফেলে যাওয়া ঐতিহাসিক স্থাপত্যের টানে। যার মধ্যে সবথেকে আকর্ষণীয় পিরামিড। ভালোভাবে মিশর ঘুরতে যাতায়াত নিয়ে মোট ১২ দিন সময় হাতে রাখুন। মিশরে সাহারা মরুভূমির অংশ ‘ওয়েস্টার্ন ডেজার্ট’ নামে পরিচিত। দেশের উত্তরে ভূমধ্যসাগর আর পূর্বের লোহিত সাগরের মাঝে যোগাযোগ রেখা টেনেছে সুয়েজ খাল। মিশর বেড়াতে এসে অবশ্যই নীলনদের বুকে তিনরাত্রির বিলাসবহুল রিভার ক্রুজ করবেন। এ এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। মিশর যাওয়ার আগে নয়াদিল্লির ইজিপ্ট দূতাবাসে ভিসার জন্যে আবেদন করুন।
মিশর ভ্রমণ শুরু হবে সে দেশের রাজধানী কায়রো থেকে। কলকাতা থেকে বিমানে দুবাই বা দোহা হয়ে সেখান থেকে বিমান বদলে কায়রো যাওয়া যায়। মুম্বই থেকে সরাসরি কায়রো যাচ্ছে ইজিপ্ট এয়ারের বিমান। নীলনদের দু’পাশে গড়ে উঠেছে কায়রো শহর। শহরের মধ্যে যাতায়াতে মেট্রো রেল, লোকাল বাস পাবেন। স্থানীয় মুদ্রা ইজিপশিয়ান পাউন্ড। তবে সর্বত্র ডলার চলবে। এই দেশে জলের সমস্যা থাকায় খাবার জল কিনে খেতে হবে। স্থানীয় সময় থেকে ভারতীয় সময় সাড়ে ৩ ঘণ্টা এগিয়ে। মিশর ভ্রমণের ক্ষেত্রে স্থানীয় গাইড অবশ্যই নিতে হবে।
কায়রো শহরের ৬ কিলোমিটার দূরে নীল নদের পশ্চিম তীরে মরুপ্রকৃতি ঘেঁষা গিজা অঞ্চলে রয়েছে বিখ্যাত তিনটি পিরামিড ও আরও অনেক পিরামিড। পিরামিড হল ফারাওদের সমাধিক্ষেত্র। এদিকে দেখবেন ফারাও খুফু, খেফ্রেন আর মেলকাউরের পিরামিড। পিরামিডের মধ্যে সুড়ঙ্গপথ দিয়ে প্রবেশ করা যায়। দেখে নিন স্ফিংসের মূর্তি। প্রতিদিন সন্ধেবেলা পিরামিড সংলগ্ন অঞ্চলে অনবদ্য আলো-ধ্বনির অনুষ্ঠান হয়। গিজা অঞ্চলে মরুর বুকে ক্যামেল রাইড করতে পারেন। নীলনদের জলে জলবিহারের ব্যবস্থাও রয়েছে।
কায়রো শহরে দেখবেন বিখ্যাত ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম। এর মমি গ্যালারি আর জুয়েলারি গ্যালারিটা অবশ্য দ্রষ্টব্য। শহরের কায়রো টাওয়ারের মাথায় ওঠা যায়। পুরনো শহরের খালাদিন সিটাডেল ও ১৪ শতকের খান-এন-খালিলি বাজারটিও দেখার মতো। এই বাজারে স্থানীয় হস্তশিল্পের অজস্র দোকান রয়েছে। কায়রোতে আরেকটা দিন বরাদ্দ রাখুন মেমফিস ও সাকারা ভ্রমণের জন্যে। শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে সাকারায় দেখবেন ফারাও মোসেরের স্টেপ পিরামিড। এটি মিশরের প্রাচীনতম পিরামিড। দেখে নিন মিশরের প্রাচীন রাজধানী মেমফিসের একাধিক স্থাপত্য।
কায়রো থেকে ২৩০ কিলোমিটার দূরে আলেকজান্দ্রিয়া শহর। যেতে ট্রেন ও বাস পাবেন। বাস যাবে দারুণ হাইওয়ে দিয়ে। ৩৩১ খ্রিস্টপূর্বে এই শহর নির্মাণ করেন আলেকজান্ডার। শহরের গায়ে আছড়ে পড়ছে ভূমধ্যসাগর। বর্তমানে এটি ব্যস্ত বন্দরনগরী। একদিনেই শহরের দ্রষ্টব্য ক্যাটাজম্ব সমাধিক্ষেত্র পম্পেই পিলার, বাগানে সাজানো মোন্তাজা প্রাসাদ, বিবলিওথিকা লাইব্রেরি, সেন্টমার্ক চার্চ আর সাগরতীরের কোয়েত বে দুর্গ। এই শহরে ট্রাম চলে। দেখে নিন ভূমধ্যসাগরের তীরে সাজানো সৈকত রেখা।
কায়রো থেকে এবার চলুন মিশরের দক্ষিণপ্রান্তে। প্রথম গন্তব্য আসোয়ান। দূরত্ব ৯৮২ কিলোমিটার। যেতে বিমান অথবা ট্রেন দুইই পাবেন। নীলনদের বিলাসবহুল জলসফরের শুরু হয় এই শহর থেকে। নীলনদের তীরের প্রাচীন এই শহরে দেখবেন হাইড্যাম, ওবেলিক্স স্তম্ভ, এজিলিকা দ্বীপ। এজিলিকা দ্বীপে রয়েছে ফিলে মন্দির। নীলনদের জলে পালতোলা ফেলুকা নৌকায় চড়ে দেখে নিন নুবিয়া আদিবাসীদের গ্রাম, বোটানিক্যাল গার্ডেন, এলিফ্যান্টাইন দ্বীপে আগা খাঁ সৌধ। আসোয়ান থেকেই যেতে হবে ৩০০ কিলোমিটার দূরের আবু সিম্বেল মন্দির দেখতে। নাসের হ্রদের ধারে গড়ে উঠেছে এই মন্দির। আবুসিম্বেলের একটি মন্দিরে রয়েছে ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস আর অন্যটিতে রয়েছে রানি নেফারতারির মূর্তি।
আসোয়ান থেকে জাহাজ রওনা দিয়ে প্রথমে থাকবে ৫৫ কিলোমিটার দূরের কোমওম্বো-তে। নদীর গায়েই কোমওম্বো মন্দির। এখান থেকে আবার জাহাজ ছেড়ে সারারাত জলযাত্রার পরে ভোরবেলা থামবে কোমওম্বো থেকে ১১০ কিলোমিটার দূরের এডফু জনপদে। এখানে দ্রষ্টব্য এডফু মন্দির। দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য। ঘোড়ায় টানা টাঙ্গায় চড়ে পুরনো শহরে একচক্কর ঘুরে নিন। নীলনদের রিভার ক্রুজের জাহাজে থাকা-খাওয়ার এলাহি ব্যবস্থা থাকে। জাহাজের মধ্যে স্থানীয় লোকসংস্কৃতির অনুষ্ঠানও হয় যাত্রীদের মনোরঞ্জনের জন্য। অনেক জাহাজের আপার ডেকে সুইমিং পুলও রয়েছে। এই জলযাত্রায় এসনা ড্যাম পেরতে হবে।
এসনা ড্যাম পেরিয়ে পৌঁছবেন লাক্সার শহরে। নীলনদে জলযাত্রার সমাপ্তি এই শহরে। লাক্সার বড় শহর। নীলনদের ওপরে তৈরি করা হয়েছে বিশাল সেতু। নদীর দু’পাড়েই শহরের বিস্তার। জাহাজ ভিড়বে নদীর পূর্বতীরে। এখানের অন্যতম আকর্ষণ হট এয়ার বেলুন সফর। প্রতিদিন ভোরবেলা পর্যটকদের জন্যে বেলুন সফরের ব্যবস্থা করা হয়। আকাশ থেকে নীলনদ আর লাক্সার শহরটাকে দারুণ সুন্দর দেখতে লাগে। শহরে রয়েছে হস্তশিল্পের বাজার আর মিউজিয়াম।
লাক্সার থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে ভ্যালি অব কিংস। এখানে পাহাড়ের মাঝে রয়েছে ফারাওদের সমাধিগুহা। এখানে দেখবেন অন্যান্য ফারাওয়ের সঙ্গে তুতেনখামেনের মমি। পাশেই রানিদের সমাধিগুহা ভ্যালি অব কুইনস। সেদিকে পর্যটকদের ঢুকতে দেয় না। এরপর একে একে দেখে নিন রানি হাটসেপশুট মন্দির, কলোসি অব মেমনন স্ট্যাচু। এইসব দ্রষ্টব্য নদীর পশ্চিমতীরে অবস্থিত। নদীর পূর্বতীরে রয়েছে বিখ্যাত কারনাক ও লাক্সার মন্দির দু’টি। লাক্সার থেকে কায়রো ফিরতে ট্রেন ও বিমান পাবেন। দূরত্ব ৭২১ কিলোমিটার।
মিশরের লোহিত সাগরের তীরে হুরগাদা শহর ইদানীং পর্যটকমহলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। লাক্সার থেকে সড়কপথে এই শহর ৩০০ কিলোমিটার দূরে। যেতে বাস পাবেন। হুরগাদায় লোহিত সাগরের তীরে থাকার সুব্যবস্থা রয়েছে। এখানে সাগরজলে ওয়াটারস্পোর্টস হয়। লঞ্চে করে যেতে পারেন আইল্যান্ড ট্যুরে। ঘুরে দেখুন শহরের পুরনো পাড়া এলদাহার। হুরগাদা থেকে কায়রোর দূরত্ব ৪৭০ কিলোমিটার। এই পথে বিমান যোগাযোগ রয়েছে।