সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি প্রচেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা। ন্যায্য অর্থ সঠিক সময়ে নাও পেতে পারেন। অর্থপ্রাপ্তির যোগ ... বিশদ
আপনার শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমছে? ঝরাতে চান অথচ রোজকার ব্যায়ামে অনীহা? তাহলে একটা নতুন ধরনের ফিটনেস এক্সারসাইজের সন্ধান দিই। নাম তার জুম্বা। শরীরচর্চার এই ধরনটির সঙ্গে একটা অনায়াস ছন্দ যুক্ত হয়ে গিয়েছে। যার ফলে গড়পড়তা ব্যায়ামের তুলনায় অনেকের কাছেই এর গ্রহণযোগ্যতা বেশি। এই শব্দটির সঙ্গে অল্পবিস্তর পরিচিত হলেও অনেকেই হয়তো শরীরচর্চার এই ধরনটি সঠিকভাবে অভ্যাস করার উপায়গুলো জানেন না। তাঁদের পরামর্শ দিলেন ফিটনেস কোম্পানির জুম্বা বিশেষজ্ঞ নীলাদ্রি গুহ।
প্রাণশক্তি
যে কোনও ব্যায়ামের চেয়ে জুম্বা অনেকটাই আলাদা, জানালেন নীলাদ্রি। এটাকে এক্সারসাইজ বলে মনেই হয় না। তার অন্যতম কারণ, এর সঙ্গে মিউজিক ও ডান্সের সরাসরি যোগ রয়েছে। যার ফলে অনেকেই এতে প্রাণশক্তি খুঁজে পান। তখন আর যোগাসনের মতো একঘেয়ে লাগে না জুম্বাকে। নীলাদ্রি জানালেন, গৃহিণীদের মধ্যে জুম্বার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। সারাদিনের ঘর ও বাইরের কাজ সামলে আর হয়তো যোগাসন বা অন্য কোনও ব্যায়াম করতে মন চায় না, কিন্তু মিউজিকের মাধ্যমে জুম্বা অভ্যাস করতে ক্লান্তি আসে না, বরং ভালো লাগে। এই প্রসঙ্গে তিনি নিজের এক ছাত্রীর কথা শোনালেন, বয়স পঞ্চাশের আশপাশে। হোমমেকার এই ছাত্রীটি রোজ দুপুরে নীলাদ্রির কাছে অনলাইন জুম্বার প্রশিক্ষণ নেন। বলেন, জুম্বা তাঁকে রিল্যাক্স করতে সাহায্য করে।
বাড়িতে ক্লাস
নিজেই বাড়িতে এই আসন অভ্যাস করা কি সম্ভব? নীলাদ্রির মতে, অবশ্যই সম্ভব। জুম্বা এমন একটা এক্সারসাইজ যা শরীর চাঙ্গা করে এবং মন শান্ত করে। সারাদিনের খাটুনির পর একটু আরামের প্রয়োজনেও অনেকেই এই এক্সারসাইজটি অভ্যাস করেন। ফলে বাড়িতে, পছন্দসই একটা জায়গায় এই ব্যায়াম করা সবচেয়ে ভালো। কিন্তু কীভাবে করবেন? জুম্বার বিভিন্ন অনলাইন কোর্স রয়েছে। ধাপে ধাপে সেখানে এই এক্সারসাইজ শেখা সম্ভব। ধাপে ধাপে শেখার সুবিধে হল নিজেকে তৈরি করার সুযোগ পাবেন। প্রথমেই অ্যাডভান্সড কোর্স করতে শুরু করলে অযথা শরীরকে ব্যস্ত করা হবে। এছাড়াও ইউ টিউবেও এই ধরনের ভিডিও থাকে, সেখানেও প্রাথমিক প্রশিক্ষণের ভিডিও অনুযায়ী অভ্যাস করাই ভালো। বাড়িতে এই এক্সারসাইজ করতে গেলে কয়েকটা জিনিস জানতে হবে।
আরামদায়ক পোশাক বাছবেন। সেই পোশাক পরে স্ট্রেচিং, ফোল্ডিং ইত্যাদি শারীরিক ওঠাবসা যাতে সহজেই করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখবেন। সুতির পোশাক, যা পরে হাত পা স্ট্রেচ করা যায়, উবু হয়ে বসা, বসা অবস্থা থেকে দাঁড়ানো বা নাচের বিভিন্ন ভঙ্গি অভ্যাস করা যায়, তা-ই জুম্বার জন্য উপযুক্ত।
অন্য যে কোনও ব্যায়ামের মতোই জুম্বাতেও ওয়ার্ম আপ এক্সারসাইজ দিয়ে শুরু করতে হয়। শুরুর সময় মিউজিকের তালে তাই ফ্রন্ট বেন্ডিং, বডি স্ট্রেচিং, সাইডলাইন বেন্ডিং, ফরওয়ার্ড মার্চিং-এর মতো কিছু স্টেপ অভ্যাস করানো হয়। বাড়িতে অভ্যাস করার সময় ভিডিও খুব মন দিয়ে দেখে অভ্যাস করতে হবে।
জুম্বার কয়েকটা সহজ ধাপের কথা আলোচনা করা যাক, বললেন নীলাদ্রি। যেহেতু নাচের সঙ্গে এই ব্যায়ামের অনেক সাদৃশ্য রয়েছে তাই নাচের কিছু বেসিক স্টেপস এই ক্ষেত্রে কাজে লাগে। মেরেং স্টেপ নামে একটি ধাপ রয়েছে জুম্বাতে। সাধারণভাবে মিউজিক চালিয়ে একটা পা হাঁটু থেকে ভাঁজ করে উপরে তুলতে হয়। তার সঙ্গে একটু কোমর দোলাতে পারেন। এক পা এক পা করে এই স্টেপ অভ্যাস করতে হবে।
সালসা নৃত্য ভঙ্গিতে নিজের শরীরের ওজনটা দুই পায়ে সমানভাবে ফেলে মিউজিকের তালে শরীরটাকে হেলান। এইভাবে মিনিট দশেক অভ্যাস করুন।
আরও বিভিন্ন ধাপ রয়েছে জুম্বায়। তার মধ্যে কামবিয়া স্টেপ, চা চা চা স্টেপ, বেসিক মাম্বো স্টেপ অনায়াসেই বাড়িতে অভ্যাস করা যেতে পারে। এতে মেদ তো ঝরবেই, একইসঙ্গে শরীর চাঙ্গাও থাকবে।
খেয়াল রাখা দরকার
বাড়িতে যখন জুম্বা অভ্যাস করবেন তখন কিছু জিনিস খেয়াল রাখা জরুরি। প্রথমত এক একটা স্টেপ যতবার উল্লেখ করা থাকবে তার বেশি অভ্যাস করবেন না। দ্বিতীয়ত নিজে যতটা করতে পারছেন বা অনায়াসে যতটুকু করতে পারছেন, ততটাই অভ্যাস করবেন। শরীর সায় না দিলে অতিরিক্ত কিছু করবেন না। জুম্বা অভ্যাস করার মধ্যেই জল খাবেন। একটা ধাপ পেরিয়ে অন্য ধাপে যাওয়ার মাঝে কয়েক সেকেন্ডের বিরতি দিন। পা এবং শরীরের সঙ্গে হাতেরও মুভমেন্ট জুরুরি, সেদিকেও নজর রাখবেন। বাজনার তালে শরীর দোলানোর জন্য একটা ছন্দ প্রয়োজন। অনেকেই একদিনে সেই ছন্দ আয়ত্ত করতে পারেন না। তাই বলে হাল ছাড়বেন না। লেগে থাকলে এই এক্সারসাইজ আয়ত্ত করা সম্ভব।
কেন করবেন জুম্বা?
জুম্বা শুধুই যে শরীর মেদমুক্ত করে তা নয়। এতে শরীরে একটা ছন্দ আসে। চলাফেরাও অনায়াস হয়। যাঁরা ব্যালান্সের অভাবে বারবার পড়ে যান, তাঁরা অবশ্যই এক্সারসাইজের এই ধরনটি অভ্যাস করবেন। শরীরের পাশাপাশি মনকেও শান্ত করে জুম্বা। মানসিক অবসাদ দূর করতেও এই ব্যায়াম খুবই কাজের। শুধু যে মনকে শান্ত করে তা-ই নয়, মনে এক ধরনের এনার্জি আনে জুম্বা। বাজনা, নাচ ইত্যাদির মধ্যে মন ভালো করার প্রভূত উপাদান থাকে। তাতে অশান্ত মন প্রশান্ত হয়, আবার একইসঙ্গে একটা চনমনে ভাবও আসে। সার্বিক এনার্জি বর্ধক হিসেবে এই এক্সারসাইজকে কাজে লাগানো যায়। শরীর এবং মন একটা ছন্দে চলে বলেই বোধহয় এনার্জির সঞ্চার ঘটে। দিনের যে কোনও সময় এই ব্যায়াম করা যায়। অফিস থেকে বাড়ি ফিরে করুন, দুপুরে নিজের সময়মতো করুন অথবা সকালে করুন— যখনই করবেন আপনার শরীর তরতাজা হয়ে উঠবে। মন ফুরফুরে হবে, ক্লান্তি নিমেষে চলে যাবে।