সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি প্রচেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা। ন্যায্য অর্থ সঠিক সময়ে নাও পেতে পারেন। অর্থপ্রাপ্তির যোগ ... বিশদ
পাহাড় ঘেরা অপরূপা প্রকৃতির কোল ঘেঁষে পথ চলে গিয়েছে কল্পার উদ্দেশ্যে। সাংলা উপত্যকা থেকে প্রায় আটত্রিশ কিমি দূরে কল্পার অবস্থান। পাশে শতদ্রু নদীর পাহাড়ি পথ চলার ছন্দ দেখতে দেখতেই পৌঁছে গেলাম কারছাম পয়েন্টের কাছাকাছি। বসপা নদীর তুঁতে রঙা জলধারার সঙ্গে মিলে মিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে সবুজ শতদ্রুর জলরাশি এই কারছাম পয়েন্টে! সেই অপূর্ব নিদর্শন মনের ক্যামেরায় বন্দি করে নিয়ে আবার শুরু হল আমাদের পথচলা। ক্রমশ টাপরি পার হয়ে মিলিটারি ছাউনি পেরিয়ে আমরা হাজির হলাম রেকং পিও-র জমজমাট বাজারে। শিবলিঙ্গ পর্বতের উঁকিঝুঁকি নজরে এল এখান থেকে। তারই পাশে আবার কিন্নর কৈলাস পর্বতও দেখলাম এক ঝলক। বরফের মুকুট মাথায় দিয়ে রেকং পিও-র প্রকৃতিকে আগলে রেখেছে এই দুই শৃঙ্গ। স্থানীয় লোকজনের এমন নিস্বর্গের মাঝেই বাস। তাই আলাদা করে যে কোনও মুগ্ধতা তাদের চোখে ধরা পড়ছে তা নয়। বরং এটাই স্বাভাবিক বলে দৈনন্দিন জীবনে ব্যস্ত তাঁরা।
১৯৯২ সালে আগস্ট মাসে, দালাই লামা এই শহরে কালচক্র ভাষণ দেন। স্মারক হিসেবে মহাবোধি গুম্ফায় বুদ্ধের সোনার মূর্তি গড়ে তোলা হয়েছে। বেশ কিছুটা ওপরে এই গুম্ফাটি। দূর থেকে বুদ্ধের চরণে প্রণাম জানিয়ে আমরা সবাই চললাম কল্পার উদ্দেশ্যে। প্রায় ন’হাজার সাতশো এগারো ফুট উপরে কল্পার অপরূপ প্রকৃতির সঙ্গে বিরাজ করছে অজস্র আপেলের বাগান! চির, চিলগোঁজা ও খোবানির চাষাবাদ হয় কল্পার বুকে।
শিবলিঙ্গ পর্বত ক্রমশ প্রকট হয়ে ওঠে চোখের সামনে। বানাসুরের শিবলিঙ্গ রূপে পূজিত হয় এই পর্বত শৃঙ্গে। দিনের বিভিন্ন সময়ে, এর পাথরের রং পরিবর্তন নজরে ধরা পড়ে। শক্তিশালী দূরবীনের সাহায্যে সহজেই দেখা যায় এই রংবদল।
আমরা পৌঁছে গিয়েছি কিন্নর কৈলাস পর্বতের পাদদেশে! নির্দিষ্ট লজের ঘরে মালপত্র রেখে, মধ্যাহ্নভোজনের পালা শেষ করে আবার ব্যালকনি থেকে বিভোর হয়ে দেখছি অপরূপা প্রকৃতি! লজ ঘিরে আপেলের বাগান। হাতের নাগালেও চলে এসেছে তার কয়েকটি! কিন্তু বিনা অনুমতিতে তা নেওয়া যাবে না।
কিছু সময় বাদেই, সূর্যাস্ত শুরু হল! আমাদের চোখের সামনে কিন্নর কৈলাস পর্বতশৃঙ্গ সূর্যের সোনালি নরম আলো মেখে, এক অপূর্ব রূপে ধরা দিল! সমস্ত আকাশ অস্ত যাচ্ছেন সূর্যদেব আর তার অপরূপ রূপের মহিমা ছড়িয়ে পড়ছে কিন্নর কৈলাস পর্বতের গায়ে। উড়ন্ত মেঘের গায়েও লাগল সেই সোনালি রঙের পরশ! মোহিত হয়ে প্রকৃতির রূপে বিভোর সবাই!
সন্ধে ঘনিয়ে এল অবশেষে, ভালোলাগার রেশটুকু লেগে রইল মনে।
পরের দিন কল্পার সবচেয়ে পুরনো গ্রাম ‘রোগী গাঁও’ দেখতে যাব আমরা। গ্রামের অলস ছন্দে দিনযাপন দেখে মনটা ভরে গেল। পুরুষ ও নারী উভয়ই সকালের নরম রোদ গায়ে মেখে দিনটি শুরু করেছেন সবে। আমাদের দেখে সাদর অভ্যর্থনা জানালেন তারা। কিন্নর কিন্নরীদের সান্নিধ্যে বেশ কিছু সময় কাটিয়ে চলে এলাম অপর এক গ্রামে। নাম তার ‘চিনি গ্রাম’। ব্রিটিশ আমলে জেলা সদররূপে পরিচিত ছিল এই গ্রামটি। ১৯৬০ সালে গড়ে তোলা কিন্নর জেলার সদর ছিল কল্পা। ১৯৬২ সালে কল্পার সঙ্গে যুক্ত হয় চিনি গ্রামের অস্তিত্ব! সেই গ্রামের দোরগোড়ায় আজ আমরা! নারায়ণ নাগিনী মন্দির এই গ্রামের অন্যতম ঐতিহ্য।
মন্দির প্রাঙ্গণে এসে মুগ্ধ আমরা! অপূর্ব সুন্দর কারুকাজ মন্দিরে। তিব্বতি গঠনশৈলীতে গড়ে তোলা হয়েছে এই মন্দির। পাশাপাশি একটা বৌদ্ধ গুম্ফাও রয়েছে কিছুটা ওপরে। নাম লোচাবা লাখাং। মন্দির ও গুম্ফাদর্শন সেরে কিন্নর কৈলাসের অপূর্ব শোভা স্মৃতির ক্যামেরায় বন্দি করে ফিরতি পথ ধরলাম আমরা।