মেয়াদি সঞ্চয় থেকে অর্থাগম যোগ আছে। সন্তানের আবদার মেটাতে অর্থ ব্যয়। ধর্মকর্মে মন আকৃষ্ট হবে। ... বিশদ
জায়গার নাম যখন শিবখৌড়ি, মূল আকর্ষণ যে মহাদেব অর্থাৎ শিব, একথা বলা বাহুল্য। শিব অর্থাৎ মহাদেব। আর খৌড়ি অর্থ গুহা। তাই জায়গার নাম শিবখৌড়ি। জম্মু থেকে যাওয়া যায়। দূরত্ব প্রায় একশো চল্লিশ কিমি। কাটরা থেকে আশি কিলোমিটার দূরত্ব। কাটরা বাসস্ট্যান্ড থেকে যেতে সময় লাগে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা মতো। পথে যেতে যেতে দু’তিনটি দর্শনীয় দেবস্থান পাবেন। কাটরা বাসস্ট্যান্ড থেকে গাড়ি ও বাস পাওয়া যায়। প্রতি এক ঘণ্টা অন্তর ছাড়ে বাস। ভাড়া ২২০ টাকা। প্রাইভেট গাড়ির ভাড়া ২২০০-২৬০০ টাকার মধ্যে।
যাত্রাপথের সৌন্দর্য চোখ জুড়ানো। চারিদিকে পাহাড় আর সবুজ বনানী চোখের আরাম, প্রাণের আনন্দ দেবে। মাঝে মাঝে যাত্রীদের সমবেত কণ্ঠে ‘হর হর মহাদেব’ অথবা ‘শংকর ভগবান কি জয়’ শুনতে শুনতে এগিয়ে যাওয়া। বাসে কিছুটা যাওয়ার পর প্রথম দর্শনীয় স্থান ‘জিতো বাবা মন্দির’। সামনে ছোট্ট সুন্দর বাগান। জিতো বাবার মন্দিরে মনস্কামনা পূর্ণ হলে সবাই খেলনা দেয়। ওখানকার জল খেলে রোগব্যাধির নিরাময় হয় বলে মানুষের বিশ্বাস।
দূরে পাহাড়ি গ্রাম থেকে মানুষজন এসে জল নিয়ে যায়। যাত্রাপথে আরও খানিকটা এগিয়ে ‘ন’ দেবী মন্দির’। গুহার ভিতরে ন’টি পিণ্ডের আকারে বিরাজ করছেন দেবী মা। কী যে অপূর্ব সে রূপ! মন ভরে যায় দেখলে। ফুলে ফুলে ছাওয়া দেবীর স্থান। সাজানো নানা ফুলের মধ্যে গোলাপ, জবা চোখে পড়বে। বড় বড় সলমা চুমকি লাগানো লাল চেলি দিয়ে সাজানো ন’ দেবী মন্দির। পূজারীর অসম্ভব ভালো ব্যবহার। প্রণামী নিয়ে জোরাজুরি নেই। উল্টে মুঠোভর্তি প্রসাদ দেবেন না চাইতেই।
আবার পথচলা। দু’পাশে সবুজ পাহাড় আর চন্দ্রভাগা নদীকে সঙ্গে নিয়ে গাড়ি ছোটে। যাত্রাপথে সাময়িক বিরতি। রকমারি ফল, ডাব, চা বিস্কুট খেয়ে আবারও চলা। বাসে সময় বেশি লাগে। প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা। প্রাইভেট গাড়িতে কিছুটা কম। রানসি গ্রাম অবধি বাস বা গাড়ি যায়। এখানেই শিবম দুয়ার। এখান থেকেই যাত্রা শুরু। পায়ে হাঁটা পথ প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার। কেউ হাঁটতে না চাইলে ঘোড়া বা ডুলিও রয়েছে। যাত্রা রেজিস্ট্রেশন কাউন্টার অর্থাৎ আপনি যে যাচ্ছেন, সেই সমস্ত তথ্য ওদের কাছে রইল, সেখান থেকে যাত্রার জন্য স্লিপ নিতে হয়। ঘোড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। আর ডুলি বা পালকি ১২০০-১৪০০ টাকা। রাস্তা এখানে একটু সরু। তবে মনোরম দৃশ্য পথের ক্লান্তি দূর করে। দেড় কিলোমিটার চলার পর একটা পাহাড় আছে গণেশের আকৃতির। তাই তাকে গণেশমুখী পাহাড় বলে। রাস্তায় কালী মায়ের মন্দির। রয়েছে খাবারের দোকান। ক্লান্তি এলে মাঝেমধ্যে গলা ভেজানো যায় ফলের রসে। তবে ভুলেও হাতে খাবারের প্যাকেট রাখবেন না। হনুমানের উপদ্রব।
যাত্রাপথে সিঁড়ির একপাশে প্রচুর মানসিকের সুতো বাঁধা। মনস্কামনা পূরণের বাসনা নিয়ে ভক্তদের আকুল প্রার্থনা। কিছুটা এগিয়ে লকার। যাত্রীদের মানিব্যাগ, মোবাইল, বেল্ট বা আনুষঙ্গিক জিনিস সবই রাখা যায়। এগুলো মন্দিরের ভেতরে নেওয়া যায় না। ধীরে ধীরে পথের শেষে প্রচুর সিঁড়ি পেরিয়ে গুহার অভিমুখে যাওয়া এবং কষ্টসাধ্য যাত্রা শেষে শংকর ভগবানের দর্শনলাভ। কথিত আছে, এই গুহায় শিব সপরিবার আছেন। ভেতরে গৌরীকুণ্ড। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন ঝরনা থেকে অবিরাম শিবের মাথায় জল পড়ে যাচ্ছে। রয়েছে ভগবান শিব আর পার্বতীর অর্ধনারীশ্বর মূর্তি। গুহা লম্বায় দেড় কিলোমিটার কিন্তু ভক্তদের দেড়শো মিটার পর্যন্ত যাওয়ারই অনুমতি। গুহার আকার ভগবান শিবের ডমরুর মতো। ভেতরটা সরু। হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হবে।
পুরাণ অনুযায়ী, ভস্মাসুর কঠিন তপস্যা করে মহাদেবের বর লাভ করেন। ভস্মাসুর যার মাথার উপর হাত রাখবে সে ভস্ম হয়ে যাবে। তবে বরদানের অপব্যবহার করা যাবে না। কিন্তু ভস্মাসুর শঙ্কর ভগবানের কথা না শুনে অত্যাচার শুরু করে। এমনকী শিবের সামনে দাঁড়িয়ে শিবের মাথাতেও হাত দিতে যায়। শিব তখন ত্রিশূল ছুড়ে পাহাড়ের উপর গুহা তৈরি করেন। তার প্রবেশপথ এত সরু হয় যে বিশালাকৃতি ভস্মাসুর সেখানে ঢুকতে পারে না। শিব সপরিবারে সেই গুহায় রয়ে যান। এরপর ভগবান বিষ্ণু মোহিনী নারীর রূপে ভস্মাসুরের সামনে এলে তিনি আকৃষ্ট হন। শুরু হয় নৃত্যলীলা। ভস্মাসুরও তাতে যোগ দেন এবং সাবধানবাণী ভুলে নিজের মাথায় হাত দিয়ে ফেলেন। তৎক্ষণাৎ ভস্ম হয়ে যান তিনি। কিংবদন্তী যে, এখনও গুহায় মহাদেব বিরাজমান।