পারিবারিক সম্পত্তি ভাগাভাগিতে লাভবান হবেন । ব্যবসায়িক ক্ষেত্রটি কম বেশি চলবে। শিক্ষার্থীদের পক্ষে দিনটি শুভ। ... বিশদ
মোবাইলে বিল ভরতে ভরতে নাজেহাল অমলবাবু। হঠাৎ ডিসেম্বরে তাঁর মোবাইল সংস্থা তাঁকে পোস্ট পেড বিল পাঠিয়েছে ২৩,০০০ টাকার বেশি! বিল দেখে মাথায় বাজ ভেঙে পড়ে তাঁর। তিনি ছোটেন ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে। মামলা চলে। অবশেষে মোবাইল বিলের সিংহভাগ মকুব হয় ও এমন ‘ভুল’ বিল পাঠানোর জন্য ওই সংস্থাকে বিপুল জরিমানা করা হয়। সঙ্গে যোগ হয় গ্রাহককে স্ট্রেস দেওয়া ও নাকাল করার জন্য জরিমানাও! যে আইনের মারফত এই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলল, সেটাই উপভোক্তা বা গ্রাহক সুরক্ষা আইন।
ফিরে দেখা
গ্রাহক বা উপভোক্তাদের স্বার্থের কথা ভেবে ১৯৮৬ সালে এই আইন প্রণয়ন করা হয়। তবে এই আইন কার্যকর হয় ১৫ এপ্রিল, ১৯৮৬ সাল থেকে। অর্থ খরচ করে কোনও উৎপাদিত পণ্য বা পরিষেবা যিনি ব্যবহার করেন, তিনিই ভোক্তা। গ্রাহক বা ভোক্তা কোনও জিনিস কিনলে বা কোনও পরিষেবা নেওয়ার সময় কোনওভাবে ঠকে গেলে বা প্রবঞ্চিত হলে তাঁকে ন্যায়বিচার পাইয়ে দেওয়া এর এক লক্ষ্য। এছাড়া পরিষেবা প্রদানে ঘাটতির ক্ষেত্রে পরিষেবা প্রদানকারীর উপর কঠিন দায়বদ্ধতা প্রদান করাও এই আইনের কাজ। পরে ২০১৯ সালে এই আইন ‘গ্রাহক সুরক্ষা আইন ২০১৯’ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। সেটি ২৪ জুলাই ২০২০ তারিখে কার্যকর হয়।
কী আছে
এই আইনে?
কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা নির্দিষ্ট করা হয়েছে বা অব্যাহতি পেয়েছে এমন বাণিজ্যক্ষেত্র ছাড়া সব সংস্থা ও পণ্য এই আইনের অধীনে।
বেসরকারি, সমবায়, সরকারি সব ক্ষেত্রই এই পরিষেবার আওতাভুক্ত।
জেলা, রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ভোক্তা সুরক্ষা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করে গ্রাহকদের অধিকারকে সুরক্ষিত করা হয়। ত্রিস্তর আধা-বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে এই ধরনের অভিযোগের বিচার হয়।
কেন হল আইন?
একটা সময় পর্যন্ত নানা জিনিস কিনে গ্রাহক ঠকে গেলে বা টাকা দিয়েও উপযুক্ত পরিষেবা না পেলে কোথাও অভিযোগ জানাতে পারতেন না। থানা-পুলিসে গেলে একটা সময়ের পর এফআইআর-এর পর সাধারণ মামলার মতোই তা দেখা হতো। কিন্তু এই আইন আসার পর উপভোক্তাদের মামলাগুলি আলাদা ভাবে নেওয়ায় মামলা নিষ্পত্তি হয় দ্রুত। এই আইন আসার নেপথ্যে কয়েকটি কারণ আছে। যেমন:
সচেতনতা বৃদ্ধি: গ্রাহক ও পরিষেবা প্রদানকারী সকলের কাছে সচেতনতা পৌঁছানোই এর মূল উদ্দেশ্য। ভোক্তা সংগঠনগুলিও এই আইনের ফলে বিশেষ উপকৃত হয়েছে।
ভোক্তা সন্তুষ্টি: যে কোনও ব্যবসার ক্ষেত্রেই গ্রাহক সন্তুষ্টিই শেষ কথা। তাই ব্যবসায়ীরা গ্রাহকের থেকে নেওয়া মূল্যের উপযুক্ত মানসম্পন্ন পণ্য এবং পরিষেবা প্রদান করছেন কি না, সেই পরিষেবায় গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে কি না এগুলোও এই আইনের মাধ্যমে দেখা হয়।
ব্যবসার মানোন্নয়ন: বিশ্বায়নের যুগে কোনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান যদি গ্রাহককে না প্রতারিত করে ও ভালো মানের পণ্য বিক্রি করে, তাহলে দেশের আর্থিক ব্যবস্থায় তার ছাপ পড়তে বাধ্য। তাই গ্রাহকদের উন্নত পরিষেবা প্রদান করা ও ব্যবসায় অসাধু প্রবৃত্তি ঠেকানো এই আইনের আর এক উদ্দেশ্য।
ট্রাস্টিশিপের নীতি: যে কোনও ট্রাস্টিতে পণ্য প্রস্তুতকারী, পরিষেবা প্রদানকারীর সঙ্গে গ্রাহকও অন্যতম অংশ। তাই ট্রাস্টিশিপের নিয়ম মেনেই এই আইন। স্বাস্থ্য, অর্থ ও জীবনের জন্য বিপজ্জনক এমন পরিষেবাগ্রাহকের প্রাপ্য নয়। তাই এই আইনের মাধ্যমে সেদিকগুলি সুরক্ষিত রাখা হয়।
সামাজিক দায়িত্ব: গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষা করা ব্যবসায়িকের নৈতিক দায়িত্ব। এই ঔচিত্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই, উৎপাদক, ব্যবসায়ীদের উপর নজরদারির আইন চালু হয়।
যদি ঠকে যাই, কী করব?
কোনও জিনিস কিনতে গিয়ে যদি প্রতারিত হন বা কোনও পরিষেবা নিয়ে অসন্তুষ্টি থাকে তাহলে অভিযোগ জানানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তরের টোল ফ্রি নম্বর ১৮০০ ৩৪৫ ২৮০৮-এ ফোন করতে পারেন। ফোন করতে পারেন কেন্দ্রের ন্যাশনাল কনজিউমার হেল্পলাইন নম্বর ১৮০০ ১১ ৪০০০ বা ১৯১৫ নম্বরে। মেল করতে পারেৱন consumerhelpline.gov.in-এ। বা ‘ই দাখিল ডট কম’-এ উপযুক্ত নথি জমা করে প্রোফাইল তৈরি করেও অভিযোগ জানাতে পারেন। এই অভিযোগের উপর ভিত্তি করে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে মামলা করা যায়। এই আইনের সেকশন ২-এ গ্রাহক সম্পর্কে বিস্তারিত ব্যাখ্যা রয়েছে। সেই ব্যাখ্যা অনুসারে আপনি ‘গ্রাহক’ প্রমাণিত হলে এই মামলা গৃহীত হয়। আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিও এই মামলা লড়তে পারেন। তাঁকে ক্রেতা সুরক্ষা আদালত থেকেই উকিলের জোগান দেওয়া হয়। বিনামূল্যে মামলা লড়া যায়। সেক্ষেত্রে উকিলের ফি-ও সরকার প্রদান করেন। সরকারি উকিলে আস্থা না রাখতে চাইলে নিজেও উকিল নির্বাচন করতে পারেন। যাঁরা নিজেরা উকিল নিয়োগ করেন তাঁরা উকিলের ফি মামলা চলাকালীনও দিতে পারেন আবার মামলা শেষের পর ক্ষতিপূরণের অর্থ থেকেও দিতে পারেন।
শাস্তি কী কী?
অভিযোগ প্রমাণ হলে নানা অপরাধের শাস্তি বিভিন্ন। যেমন:
মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে পণ্য বিক্রি করলে পরিষেবাকারীর ২ বছরের জন্য জেল অথবা ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে।
গ্রাহককে শারীরিকভাবে আঘাত করলে আঘাতের পরিমাণ ও ক্ষয়ক্ষতি বুঝে শাস্তি নির্ধারিত হয়।
বড় ধরনের আঘাতে ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা ও ১ বছর অবধি জেল হতে পারে।
টাকা নিয়ে অর্ডার রিসিভ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জিনিস ডেলিভারি না করলে ও ডেলিভারি নিয়ে গ্রাহরকে অহেতুক গ্রাহককে হয়রান করলে ১ মাস থেকে ৩ বছর অবধি জেল হতে পারে। এছাড়াও নানা অভিযোগের উপর ভিত্তি করে শাস্তির বিভিন্ন প্রতিবিধান আছে।
পরিষেবা নেওয়ার সময় গ্রাহকের অবশ্য কর্তব্য
যা যা কিনছেন, তার প্যাকেজিংয়ে দেওয়া সব তথ্য ও বিল যত্ন করে রাখুন।
চুক্তিভিত্তিক কেনাকাটা হলে চুক্তি তৈরির সময় সচেতন থাকুন।
যে কোনও পরিষেবা নেওয়ার আগে বা পণ্য কেনার আগে তার গুগল রেটিং ও অন্যান্য গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা সম্ভব হলে দেখে নিন।
প্রতারিত হলে বা জিনিস কেনার পর সমস্যায় পড়লে প্রথমে সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে জানান। তাতেও কাজ না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিন।
অনলাইন স্ক্যাম নিয়ে সচেতন থাকুন। ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস বার নিয়ে নিরাপত্তাজনিত সতর্কতা এলে বা অ্যাড্রেস বারের একটি অংশ লাল হয়ে থাকলে বা কুকিজ ব্লক করা থাকলে সেসব ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবেন না।