পারিবারিক সম্পত্তি ভাগাভাগিতে লাভবান হবেন । ব্যবসায়িক ক্ষেত্রটি কম বেশি চলবে। শিক্ষার্থীদের পক্ষে দিনটি শুভ। ... বিশদ
শিশুর অমনোযোগী হয়ে পড়া, পড়াশোনায় মন না বসা বা স্মৃতিশক্তির অভাব কোনও অসুখ নয়, একটা মানসিক অবস্থা। জানালেন সাইকোলজিস্ট নিধি প্রকাশ। তিনি বললেন বাচ্চার মনোযোগ বা স্মৃতিশক্তি বাড়াতে হলে কয়েকটা নিয়ম মানতে হবে বাবা মাকে। কনসেনট্রেশন আর স্মৃতিশক্তি একে অপরের হাত ধরে আসে। একটা বাড়লে অন্যটা আপনিই বাড়বে।
মনোযোগ কেন ভঙ্গ হচ্ছে সেটা ভালোভাবে বুঝতে হবে। আপনার সন্তান পড়ার সময় বাইরে তাকিয়ে আকাশ দেখছে? নাকি ফোনে মন দিয়ে ফেলছে? নাকি পড়ার বইয়ের বাইরে অন্য বই (গল্প, কবিতা, কল্পবিজ্ঞান, ভ্রমণ) তাকে টানছে বেশি? এগুলো খেয়াল করতে পারলে আপনার সন্তানের মনোযোগ কেন ভাঙছে তা বুঝতে অসুবিধে হবে না। কারণটা বুঝে গেলে সমাধানও অনেক সহজ হয়ে যাবে।
যে কারণে কনসেনট্রেশন বা মনঃসংযোগে ঘাটতি হচ্ছে সেটা সরিয়ে ফেলতে হবে। আপনার সন্তান যদি প্রকৃতি দেখে সময় কাটায় তাহলে পড়ার জায়গা এমনভাবে তৈরি করুন যেখান থেকে বাইরের পৃথিবী দেখা যাবে না। ঘরের এমন কোণে পড়ার টেবিল রাখুন যার ধারে কোনও জানালা থাকবে না। যদি তার মোবাইলে আকর্ষণ থাকে তাহলে মোবাইল সরিয়ে নিন। গল্পের বই বা অন্য ভালোলাগার বিষয়ে বই পড়লে সেগুলো পড়ার সময় নাগালের বাইরে রাখুন।
হোমওয়ার্ক বা টাস্ক সবই ছোট ছোট পর্যায়ে ভেঙে দিন। বাচ্চারা একসঙ্গে অনেকটা পড়া মনে রাখতে পারে না। ভেঙে ভেঙে টাস্ক দিলে তাদের মন বসাতে সুবিধে হয়।
একই দিনে বিভিন্ন বিষয় রাখুন পড়ার রুটিনে। বিষয় প্রতি সময় মেপে দিন। এর ফলে পড়ায় মনও বসবে আর বিষয়গুলিকে একঘেয়েও লাগবে না।
সহজেই মনঃসংযোগ ভঙ্গ
অনেক বাচ্চা থাকে স্বভাবেই চঞ্চল। সেক্ষেত্রে তাদের দিনে দশ মিনিট থেকে আধ ঘণ্টা ধ্যান করাতেই হবে। কনসেনট্রেশন ও স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর এর চেয়ে ভালো উপায় আর নেই, জানালেন মনোবিদ। আর একটা ভালো এক্সারসাইজ হল বেলি ব্রিদিং। শ্বাস নেওয়ার সময় পেটটাকে টেনে ভেতরে করে নিতে হবে আর তা ছাড়ার সময় পেটটা আস্তে করে ছেড়ে দিতে হবে। এইভাবে দশ মিনিট থেকে কুড়ি মিনিট রোজ অভ্যাস করতে পারলে বাচ্চার স্ট্রেস, টেনশন কমবে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়বে।
তাছাড়াও কিছু ইনডোর গেমস রয়েছে যার মাধ্যমে কনসেনট্রেশন বাড়ে। যেমন সহজ থেকে কঠিন পাজল সলভ করতে দিন। এতে কনসেনট্রেশন বাড়বে। সঙ্গে স্মৃতিশক্তিও। অঙ্কের পাজল, বিজ্ঞান ভিত্তিক পাজল, ওয়ার্ড গেমস, মেমরি গেমস, টাং টুইস্টার ইত্যাদি খুবই ভালো উপায় তা বাড়ানোর।
মনোযোগ আর মনে রাখা
খুব মন দিয়ে কিছু করলে ভুল কম হয়, তা মনেও থাকে অনেকদিন। ফলে মনোযোগ বাড়িয়ে তুলতে পারলে পড়া সহজে মনেও থাকবে। নিধি বললেন, মনোযোগ বাড়াতে হলে বাচ্চার সামনে নির্দিষ্ট কিছু গোল সেট করে দিতে হবে। অর্থাৎ একটা বিষয় পড়ার জন্য দিন নির্দিষ্ট করে দেওয়ার পর সেটার উপর পরীক্ষা নিতে হবে এবং সেই পরীক্ষার ফল অনুযায়ী তাকে পুরস্কৃত করতে হবে। এইভাবে পড়ালে বাচ্চার আগ্রহ বজায়
থাকবে এবং সে পড়াশোনা মন দিয়ে করবে।
একসঙ্গে অনেক কাজ বাচ্চাকে করতে দেবেন না। এতে কোনও কিছুতেই শিশু মন দিতে পারবে না। বাচ্চারা স্বভাবেই চঞ্চল। ফলে তাদের সামনে যদি বাবা বা মা ক্রমাগত একগাদা কাজ একই সঙ্গে করতে থাকেন (মাল্টিটাস্কিং) তাহলে তারাও সেটা করতে চাইবে অথচ কোনওটাই ঠিকমতো করতে পারবে না।
বাচ্চাকে যখন পড়াতে বসবেন তখন আপনার মন যেন সম্পূর্ণ বাচ্চার উপর থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
চার ঘণ্টা পড়ার মাঝে দশ মিনিটের ব্রেক অন্তত দুই থেকে তিনবার নিন। এতে বাচ্চার মন রিফ্রেশড হয়ে যাবে এবং সে আবারও ভালো করে মন বসাতে পারবে, বললেন নিধি।
উপযুক্ত ডায়েট
সবশেষে ডায়েট প্রসঙ্গে জানালেন সাইকোলজিস্ট নিধি প্রকাশ। তিনি বললেন, সবুজ পাতাওয়ালা সব্জি, শাক, ওমেগা-থ্রি অ্যাসিডযুক্ত খাবার যেমন কয়েক ধরনের মাছ, বাদাম ইত্যাদি, ভিটামিন বি যুক্ত খাবার যেমন ডিম, গোটা শস্য ইত্যাদি, ডার্ক চকোলেট, অ্যাভোকাডো, ব্রকোলি, কুমড়োর বীজ ইত্যাদি খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। ফলে এই ধরনের খাবার শিশুর ডায়েটে রাখা জরুরি।
পাশাপাশি পানীয় হিসেবে চকোলেট জাতীয় ড্রিংকস, গ্রিন টি রাখুন। পরীক্ষার আগে অন্তত এক মাস জাঙ্ক ফুড সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিন। এগুলো মেনে চললে বাচ্চার মনঃসংযোগ ও স্মৃতিশক্তি দুই-ই বাড়বে।
কমলিনী চক্রবর্তী