বিদ্যার্থীরা মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
শেরনি ছবির সাফল্য আপনার কাছে কতটা বিশেষ?
সাফল্য আমার কাছে নতুন নয়। কিন্তু প্রতিবারই সফলতা জীবনে খুশির জোয়ার আনে। ওটিটি-তে ছবিটা রিলিজ করছে বলে ভেবেছিলাম ধীরে ধীরে প্রতিক্রিয়া পাব। কিন্তু ‘শেরনি’ মুক্তির সঙ্গে সঙ্গে যে হারে প্রতিক্রিয়া পেতে শুরু করি, তা অবাক করার মতো। সবাই ছবি মুক্তির অপেক্ষায় ছিল। তাই আমার কাছে এই সাফল্য বিশেষ তো বটেই।
এমন কোনও মেসেজ পেয়েছেন, যা আপনার হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছে?
আমার কাছে সব মেসেজই বিশেষ বার্তা বহন করে। তবে এক্ষেত্রে বিশেষ একজনের কথা বলতে হয়। শর্মিলা (ঠাকুর) ম্যামের মেসেজ পড়ে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম। আরও উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত বোধ করেছি। এই ছবিটি ওঁর খুব পছন্দ হয়েছে। শর্মিলা ম্যাম লিখেছেন যে এই ধরনের বিষয়ের উপর সিনেমা ভারতে তৈরি হচ্ছে দেখে উনি অত্যন্ত খুশি।
আমাদের সমাজে সাধারণ মেয়েদের স্বপ্ন দেখার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। এ ব্যাপারে আপনার কী অভিমত?
আমার ছবির সূত্র ধরেই আপনার প্রশ্নের উত্তর দিই। মেয়েদের এবার বাঘিনীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে। অর্থাৎ চুপচাপ বসে থাকতে হবে শিকারের অপেক্ষায়। যখন শিকার সামনে আসবে, তখন ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে কব্জা করতে হবে। অর্থাৎ যখন নিজের স্বপ্নপূরণ করার সময় আসবে, তখন তা যেভাবেই হোক পূরণ করতে হবে। মেয়েদের স্বপ্নপূরণ সহজে হবে, এটা কিন্তু ভাববেন না। অনেকে নানা কটু কথা শোনাবে। স্বপ্নকে তুচ্ছ করবে, গুরুত্ব দেবে না। কিন্তু তাদের কথায় কান দিলে চলবে না। বরং নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে। এমনকী, কাছের কেউ যদি কটু কথাও বলে, ভেঙে পড়লে চলবে না। একটাই জীবন। তাই এই জীবনে নিজের স্বপ্নপূরণ করতে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। প্রতিটি মেয়ের অধিকার আছে স্বপ্ন দেখার এবং সেই স্বপ্নের লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার। আসলে আমাদের সমাজে মেয়েদের অতিরিক্ত সুরক্ষিত বাতাবরণে বড় করা হয়। ছোট থেকেই তাদের ঝুঁকি নিতে বাধা দেওয়া হয়। ফলে মেয়েরা অল্পেই ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায়। কিন্তু এই ভয়কে জয় করা জরুরি। মেয়েদের বুঝতে হবে তাদের অন্তরে এক অন্য ধরনের শক্তি লুকিয়ে আছে। সেই শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে হবে। একমাত্র তাহলেই মেয়েরা এগিয়ে যেতে পারবে।
মেয়েদের হামেশাই অবমূল্যায়ন করা হয়। এর কারণ কী বলে আপনার মনে হয়?
মেয়েরা নিজেরাই নিজেদের অবমূল্যায়ন করে। নিজেদের দূর্বল মনে করে। নিজেদের যোগ্যতার প্রতি আস্থা নেই নিজেদেরই। আসলে একটা দীর্ঘ সময় আটকে থাকার পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ পেয়েছে মেয়েরা। তাই নিজেদের প্রতি এই আস্থা জন্মাতে সময় লাগবে।
আপনাকে কি কখনও এরকম পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে?
কেরিয়ারের শুরুতে অনেকবার আমাকেও এই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। অনেকেই আমার যোগ্যতার অবমূল্যায়ন করেছেন। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে তো নারীকেন্দ্রিক সিনেমাকে গুরুত্বই দেওয়া হতো না। এখনও যে খুব একটা দেওয়া হয়, তা বলব না, তবে দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে। ‘কাহানি’ ছবিটা করার সময় অনেকে বলেছিল, এই ছবি চলবে না। একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা যে স্বামীর সন্ধানে বেরিয়েছে, তাকে নিয়ে ছবি কে দেখবে? ‘কাহানি’-র সাফল্য সবাইকে চুপ করিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু ‘দ্য ডার্টি পিকচার’ ছবির সময় কেউ একথা বলেনি। কারণ ওটা মশালাদার ছবি ছিল। মেয়েদের চেহারা, সৌন্দর্য ইত্যাদি নিয়ে এখনও চর্চা হয়। তাদের রূপের কদর করা হয়, গুণের বিচার খুব কমই হয়।
বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে লিঙ্গবৈষম্য নিয়ে কয়েকজন নায়িকা সরব হচ্ছেন। আপনি কি কখনও এই ধরনের বৈষম্য অনুভব করেছেন?
একাধিকবার। কারণ আশপাশের মানুষের ধারণা যে ছেলে এবং মেয়েদের কাজের মধ্যে পার্থক্য আছে। যখন মেয়েরা এই বেড়া ভেঙে এগিয়ে যায়, তখন তাকে বাধা দেওয়া হয়। আমি যখন ‘ইশকিয়া’ ছবিটা করি, তখন অনেকেই বলেছিল অনেক কষ্টে একটা নারীকেন্দ্রিক ছবি ইন্ডাস্ট্রিতে হয়। আমি ১৩ বছরে তাদের এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছি। মুখে জবাব দিইনি, কাজে করে দেখিয়েছি। কেরিয়ারের শুরুর দিকে আমাকে একজন পুরুষ অভিনেতার সুবিধা মতো ডেট দেওয়া হতো। সবক্ষেত্রেই পুরুষরা বেশি সুযোগ সুবিধা পেত। অভিনেতারা সবসময় হোটেলের বড় ঘর, বড় ভ্যান পেত। এই নিয়ম কিন্তু শুধু সিনিয়রদের জন্য ছিল না, নবাগত অভিনেতাও একই সুবিধা পেত। আমার এগুলো কখনওই ঠিক মনে হতো না। আমাকে সময়মতো সেটে এসে বসে থাকতে হতো। আর অভিনেতারা তিন-চার ঘণ্টা পরে আসত। তখন ভাবতাম, এসব কবে বদলাবে। এখন বদলেছে। আর কারও জন্য এখন আমাকে অপেক্ষা করতে হয় না।