বিদ্যার্থীরা মাঝে মধ্যে মানসিক উদ্বেগের জন্য শিক্ষায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে। কর্মপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে নানা সুযোগ আসবে। ... বিশদ
সুদূর দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলা পুর এলাকাধীন বাটানগরের মেয়ে সুমি। ষোড়শ বর্ষীয়া মেয়েটি নুঙ্গী বালিকা বিদ্যালয় থেকে এবছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। মধ্যবিত্ত পরিবারের এই কন্যে একমুঠো স্বপ্ন নিয়ে খেলার মাঠে নেমেছে। এখনও তার কৃতিত্ব দর্শক ততটা দেখার সুযোগ পাননি ঠিকই, তবে ব্যাডমিন্টন যে তার কিশোর মনে নেশা ধরিয়েছে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই কারও।
ক্রীড়ারসিক দর্শক তার দিকে সারাক্ষণ তাকিয়ে আছেন কৃতিত্ব দেখার আশায়। অধীর প্রতীক্ষায় বসে আছেন ব্যাডমিন্টনপ্রেমীরা। ব্যাডমিন্টন কোর্টে ছুটে ঝাঁপিয়ে নেটের এপার থেকে কর্কটা ওপারে পাঠিয়ে নতুন কিছু সাফল্য সুমি তার ঝুলিতে ভরে নিতে পারে কি না, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছে সবাই। ব্যাডমিন্টন খেলা শুধু নয়, সে বিষয়ে জানার আগ্রহও অসম্ভব বেশি সুমির। খেলাটাকে যেন আদ্যোপান্ত বুঝতে চায় সে। নিজের মধ্যে একাত্ম করতে চায়। আর তাই খুব অল্প বয়সেই খেলার জগতে অল্পবিস্তর নামও করে ফেলেছে। জেলাস্তরে সুমির অভাবনীয় সাফল্যের পুরস্কারস্বরূপ চলতি বছরের মার্চ মাসের ৬ তারিখ সুমি বাংলা দলে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশ গিয়ে বিষ্ণুপুর ম্যাচে দারুণ খেলা দেখিয়েছে। কথা হচ্ছিল বাটানগর আর বি ব্যাডমিন্টন ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা অঙ্কিতা অধিকারীর সঙ্গে। তিনি অত্যন্ত আশাবাদী যে সুমি মণ্ডল ব্যাডমিন্টন দুনিয়ায় একদিন উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে উঠবে। গোড়া থেকেই আর বি ব্যাডমিন্টন ক্লাবে ব্যাডমিন্টন শেখে সুমি। ২০১৭ সালে ময়দানে পা ফেলার মুহূর্ত থেকেই এক অসম্ভব দৃঢ়তা লক্ষ করা গিয়েছিল সুমির মধ্যে। তাই সামান্য কয়েক বছরের মধ্যে সে নিজেকে গভীর অনুশীলনে মগ্ন করে ফেলে। এবং ক্রমশ অসম্ভব ভালো পারফর্ম করতে শুরু করে। তার এই কৃতিত্ব ও খেলা আয়ত্তে আনার ক্ষমতা তাকে সম্ভাবনাময় ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় করেছে। তার র্যাকেটের স্পর্শ যেন জাদু জানে! সুমির আদর্শ পি ভি সিন্ধু।
ভবিষ্যতে নিজের আইডলের মতোই নামী ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হতে চায় সুমি। খেলার জগতে নতুন কিছু করে দেখাতে চায় সে। এমন কিছু, যার জন্য ক্রীড়াজগৎ তাকে মনে রাখবে। নিজের চেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয়ে প্রশংসা কুড়োতে চায় সুমি মণ্ডল। বাবা সুমন মণ্ডল ও মা সীমা মণ্ডল সুমির খেলার সাফল্যে ভীষণ খুশি। সুমির প্রেরণা তার দিদা শিপ্রা চট্টোপাধ্যায়। নাতনির ব্যাডমিন্টন খেলার সাফল্যে তিনি অভিভূত। বাটানগর আর বি ব্যাডমিন্টন ক্লাবের বর্তমান সম্পাদক তথা কোচ বিপ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায় সুমিকে নিয়ে খুবই গর্বিত। বললেন, ‘আমার ক্লাবে সুমির মতো একজন প্রতিভাময়ী খেলোয়াড়কে পেয়ে সত্যি খুব গর্ব হয়। তার সাফল্যের বার্তা দিকে দিকে বিস্তার লাভ করছে, তা খুবই প্রশংসনীয়। অনেক সময় অর্থাভাবে অনেক প্রতিভাময়ী খেলোয়াড়েরই কেরিয়ার শুরুর আগে শেষ হয়ে যায়। আশা করব সুমির েক্ষত্রে এমনটা ঘটবে না।’ স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, আগামী দিনে সুমির সাফল্য তাকে ব্যাডমিন্টনে শীর্ষস্থানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
তার বিজয়রথ এগিয়ে চলেছে দুর্বার গতিতে। পিছনে না তাকিয়ে সুমি দৃঢ়তার সঙ্গে সামনে এগিয়ে যাবে বলেই তার প্রশিক্ষকদের আশা। তাকে নিয়ে আর বি ক্লাবেরও অনেক স্বপ্ন। একদিন নিজের ইচ্ছায় ভর করেই সে দেশের জন্য সম্মান ও পুরস্কার জিতে আনবে বলে তাদের আশা। সুমি খেলার দুনিয়ায় তার দক্ষতা ধরে রাখতে এবং তা উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর করার লক্ষ্যে অবিচল। তার ভবিষ্যতের প্রতি আমাদের শুভেচ্ছা রইল।