বিদ্যায় অস্থির মানসিকতা থাকবে। কর্মপ্রার্থীদের কোনও শুভ যোগাযোগ হতে পারে। রাগ বা জেদের বশে কারও ... বিশদ
আমেরিকায় যোগাসনের প্রশিক্ষণ কি ভারতের তুলনায় আলাদা?
মূলত আলাদাই বলা উচিত। ভারতে যোগাসন একটা শাস্ত্র। বহু প্রাচীন যুগ থেকেই এই শাস্ত্রের সঙ্গে আমাদের পরিচয়। কিন্তু আমেরিকায় যোগাসন একটা নতুন জিনিস। শরীর চালনা করতে এর প্রয়োজন ও উপকারিতা কতটা তা নতুন করে এদেশে শেখাতে হয়। ফলে প্রথমেই আসন শেখালে চলে না। আগে যোগ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হয়।
মার্কিন দেশে যোগাসন কতটা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে?
আমেরিকায় যোগাসনের আশাতিরিক্ত জনপ্রিয়তা। এখানে মহিলা ও শিশুদের বিভিন্ন মানসিক ও শারীরিক সমস্যা রয়েছে। আর ওষুধ ছাড়াই কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে সেগুলো সেরে গেলে লোকে তো খুশি হবেই। ফলে খুব তাড়াতাড়িই যোগাসন আমেরিকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
রোজ যোগাসন অভ্যাস করা কতটা জরুরি?
যোগাসনের অভ্যাসটা আমাদের রোজকার জীবনের অঙ্গ হয়ে ওঠা খুবই দরকার। তাতে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে।
মহিলাদের পক্ষে যোগাসন কি বিশেষভাবে উপকারী?
শুধু মহিলা নয়, পুরুষ ও শিশুদের পক্ষেও যোগাসন বিশেষভাবে উপকারী। যোগাসন রোজ অভ্যাস করলে অনেক রোগ প্রতিরোধ করা যায়। আর মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে বলব, একটা বয়সের পর আমাদের শরীরে নানারকম হরমোন বদল হয়। সেই কারণে অনেক ধরনের রোগেরও সৃষ্টি হয়। যেমন হাড় দুর্বল হয়ে যায়, ইউটেরাসে টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় ইত্যাদি। সেক্ষেত্রেও যোগাসন নিয়মিত অভ্যাস করলে এইসব রোগের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে।
রোজকার যোগাসনে কী কী
উপকার পাওয়া যায়?
বর্তমান সময়টা বড্ড কঠিন। সারাক্ষণ একটা চাপা উদ্বেগ আমাদের তাড়া করে বেড়ায়। ঘরে ও বাইরে টেনশনের মুখোমুখি হতে হয়। বিশেষত মহিলারা ঘর ও বাইরে সামলে নাজেহাল হয়ে ওঠেন। এই টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যোগাসন অত্যান্ত উপকারী। রোজ প্রাণায়াম ও অন্যান্য কিছু ব্রিদিং এক্সারসাইজ অভ্যাস করলে টেনশন ও স্ট্রেস অনেকটাই কেটে যায়। শুধু তাই নয়, ধ্যানও মানসিক অবসাদ কাটানোর পক্ষে অনবদ্য। প্রাণায়াম ও ধ্যান অভ্যাস করলে আমাদের স্নায়ু শান্ত থাকে। ফলে অবসাদ ও টেনশন রোধ করতে তা সাহায্য করে।
শুনেছি যোগাসনের মাধ্যমে মনের তীক্ষ্ণতা বাড়ে? এটা কি সঠিক?
হ্যাঁ। আগেই বললাম, ধ্যান ও প্রাণায়াম স্নায়ুকে শান্ত রাখে। স্নায়ু শান্ত থাকলে আমাদের মন অকারণে চঞ্চল হয়ে ওঠে না। আর শান্ত থাকলে যে কোনও বিষয়ে সহজেই মনোসংযোগ করা সম্ভব হয়। ফলে মনের ধারণ করার ক্ষমতা বেড়ে যায় এবং তা তীক্ষ্ণ হয়ে ওঠে।
এছাড়াও মেডিটেশন ও প্রাণায়ামের মাধ্যমে কি মন ভালো রাখাও সম্ভব?
অবশ্যই। প্রাণায়াম আমাদের মস্তিষ্ককে সজাগ করে। আমাদের মন ভালো রাখার জন্য যে সাতটি হরমোন রয়েছে সেগুলোকে দেহে সঞ্চার করে। ফলে মন চনমনে ও স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে ওঠে।
একটা বয়সের পরে মেয়েদের মানসিক অবসাদ আসে। সেক্ষেত্রে যোগাসন কি আদৌ উপকারী?
মানসিক অবসাদ কাটাতে যোগাসন অবশ্যই উপযুক্ত। যোগাসনের মাধ্যমে আমরা আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো নতুন করে আবিষ্কার করতে শিখি। তার ফলে মন ভালো থাকে। অবসাদ কেটে যায়। শুধু তাই নয়, স্নায়ুর ওপর যোগাসনের প্রচণ্ড প্রভাব। ফলে আমাদের মন চনমনে হয়ে ওঠে।
মেনোপজের ক্ষেত্রেও কি যোগাসন উপকারী?
মধ্য বয়সে পৌঁছে মহিলাদের শরীরে একটা বড়সড় হরমোনাল বদল ঘটে। মেন্সট্রুয়াল সাইকেল বন্ধ হয়ে যায়। ডাক্তারি ভাষায় যাকে আমরা মেনোপজ বলি। এই সময়ের কিছু সিম্পটম আছে। যেমন হঠাৎ হঠাৎ শরীর গরম হয়ে যায় (হট ফ্লাশ), রাতে ঘুম কম হয় (ইনসোমনিয়া), অকারণে ক্লান্ত লাগে (ফেটিগ), মানসিক অবসাদ আসে (মুড সুইং ও ডিপ্রেশন), ওজন বেড়ে যায় ইত্যাদি। সেক্ষেত্রে শরীরকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে এই সময় বিশেষ করে যোগাসন অভ্যাস করা উচিত। পদাঙ্গুষ্ঠাসন, বুদ্ধ কোণাসন, সেতুবন্ধাসন, উত্থিত ত্রিকোণাসন ইত্যাদি মেনোপজের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত।
মানসিক অবসাদ কাটাতে কেমন যোগাসন উপযুক্ত?
সামনে ও পিছনে শরীরটাকে টেনে রেখে স্ট্রেচিং করলে মানসিক অবসাদ কাটে। আসলে এই ব্যায়ামে সারা শরীরের মাসলগুলো টানটান হয়ে ওঠে। এর ফলে আমাদের ইমোশনাল হরমোন সঞ্চারিত হয়। তাতে মনের অবসাদ কেটে যায়। মহিলাদের জীবনে বিভিন্ন পর্যায় অবসাদ আসে। তবে ভারতীয় মহিলাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবসাদ আসে বয়স ষাট পেরলে। চাকরিতে অবসর, ছেলেমেয়ে অন্যত্র চলে যাওয়া ইত্যাদি নানা কারণে তখন নিজেকে অপ্রয়োজনীয় মনে হয়। সেক্ষেত্রে সাধারণ প্রাণায়ম রোজ অভ্যাস করলে এই অবসাদ অনেকটাই কেটে যাবে। মন তীক্ষ্ণ হবে, অকারণ ক্লান্তিও কাটবে এবং নিজেকে আবারও সজীব ভাবে ফিরে পাওয়া সম্ভব হবে।