একবিংশ শতাব্দীতে পদার্পণের আগে মুসলিম সমাজে নারী স্বাধীনতা প্রহসন ছিল বললে অত্যুক্তি হয় না। মাত্র কয়েক দশক আগেও মুসলিম নারী ছিল অন্তঃপুরবাসিনী। অবগুণ্ঠনের আড়াল থেকেই তাদের বিশ্বদর্শন হতো। কিন্তু সেই চিত্র আজ অনেকটাই বদলে গিয়েছে।
এই একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আপাতদৃষ্টিতে নারীর সঙ্গে পুরুষের পার্থক্যের সীমারেখা প্রায় ঘুচেই গিয়েছে বলা যায়। এখন পুরুষদের সঙ্গে নারীরাও সমানতালে সবকিছুই করছে। সে কঠিন বিজ্ঞান গবেষণা থেকে শুরু করে টোটো চালানো পর্যন্ত প্রায় সবকিছুই। একসময় যে নাইট শিফটে কাজ শুধুমাত্র পুরুষদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল এখন সেখানেও মেয়েদের মৌরুসিপাট্টা।
দীপা কর্মকারের পর আর এক বাঙালি জিমন্যাস্টকে নিয়ে ওলিম্পিকে পদক জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে গেল। ত্রিপুরার দীপা কর্মকার, তেলেঙ্গানার অরুণা রেড্ডির পর বাংলার প্রণতি নায়েক হলেন দেশের তৃতীয় মহিলা জিমন্যাস্ট যিনি আন্তর্জাতিক পদক জিতলেন।
সেকালের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষদের দিকে লক্ষ্য রেখেই সব ব্যবস্থাপনা হত। কিন্তু পুরুষতান্ত্রিকতার সম্পূর্ণ অবসান না হলেও দিন যত এগিয়েছে ততই মহিলারাও অগ্রগণ্য হয়েছে। বিভিন্নরকম ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নারীকেন্দ্রিকতাও সমাজে স্থান পেয়েছে।
বিদ্যায় অস্থির মানসিকতা থাকবে। কর্মপ্রার্থীদের কোনও শুভ যোগাযোগ হতে পারে। রাগ বা জেদের বশে কারও ... বিশদ
রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজত্বকালে খনা নামে এক জ্যোতির্বিদ্যায় পারদর্শী এবং বিদুষী নারী ছিলেন। বরাহপুত্র মিহিরের সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। খনা তাঁর বচন রচনার মাধ্যমেই সকলের কাছে পরিচিতি লাভ করেন। খনার ভবিষ্যৎ বাণীগুলি খনার বচন নামে পরিচিতি পায়। সেই খনার জীবন নিয়ে কালারস বাংলায় শুরু হয়েছে মেগা ধারাবাহিক ‘খনার বচন’। আজ আমরা খনা তথা ঐন্দ্রিলা সাহার মুখোমুখি।
কবে থেকে অভিনয়ের কথা ভাবলেন?
কোনওদিনই ভাবিনি। আমি ডান্স বাংলা ডান্স-এ অডিশন দিয়েছিলাম, সেখান থেকে আমাকে বলা হল অ্যাঙ্কারিং করতে। আমি তখন অ্যাঙ্কারিং শুরু করি, আর ওখান থেকেই সিরিয়াল করার ডাক পাই।
আপনার প্রথম অভিনয় কী?
রাইকিশোরী। এখানে আমি নায়িকার বোনের চরিত্র করেছিলাম।
প্রথম শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
যখন অ্যাঙ্কারিং করতাম তখন আমাকে বলে দিয়েছিল যে ক্যামেরার রেডলাইটের দিকে তাকিয়ে তুই কথা বলবি, তো সিরিয়ালের ক্ষেত্রেও আমি ভেবেছিলাম তাই করতে হবে। তখন বুঝিনি অভিনয়টা অন্যরকম। তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। আমি যখন ওইভাবে তাকিয়ে তাকিয়ে ডায়লগ বলতে শুরু করি, তখন সেটা বারবার এন জি হয়। তবে সবাই আমাকে ধরে ধরে অভিনয়টা বুঝিয়ে দিয়েছিল এবং আমার ডিরেক্টর বাবু বণিক আমাকে ধরে ধরে সমস্তটা শিখিয়ে নিয়েছিল। আর যেহেতু আমি সব থেকে ছোট ছিলাম, সেহেতু সবাই আমাকে সবকিছু আস্তে আস্তে বুঝিয়ে দিয়েছিল।
এখন কোন ধারাবাহিকে অভিনয় করছেন?
এখন কালারস বাংলার মেগা ধারাবাহিক ‘খনার বচন’-এ খনার চরিত্রে অভিনয় করছি।
অভিনয় করার ক্ষেত্রে বাড়ির সাপোর্ট কতটা পেয়েছেন?
আমার মায়ের সাপোর্ট সবথেকে বেশি ছিল। কারণ মা আমাকে অডিশন থেকে শুরু করে সমস্ত কিছুর খোঁজখবর নেওয়া, যোগাযোগ করা সব করেছেন। আগে শ্যুটিংয়েও নিয়ে যেতেন। এখন মার বদলে দিদা আমাকে শ্যুটিংয়ে নিয়ে যায়। আর আমার বাড়ির সবাই টিভিতে আমার অভিনয় দেখতে খুব ভালোবাসে।
আপনারা ক’ভাই বোন?
আমরা দুই বোন। আমার বোন তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী।
পড়াশুনা কোথায় করেছেন?
আমি মধ্যমগ্রামের মেয়ে। ওখানে মধ্যমগ্রাম হাইস্কুল থেকে আমি মাধ্যমিক দিয়েছি। এখন আমি ক্লাস টুয়েলভে উঠব। আমার স্কুলের শিক্ষিকা আর কয়েকজন বন্ধু আমাকে ভীষণ সাপোর্ট করেন। অভিনয়ের জন্য রোজ স্কুলে যেতে পারি না। তাই আমার শিক্ষিকারা সে বিষয়ে খুব সাহায্য করেন।
প্রেম করছেন?
না। আমি খুব একটা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটগুলি ব্যবহার করি না। তাই কারও প্রেমপত্র সেভাবে পাইনি। আসলে চ্যাট করার সময় নেই। পুরো সময়টা অভিনয়ের দিকে আর পড়াশুনার দিকে দিয়ে থাকি। প্রেম যে করব তার সময় কোথায়?
আপনার বাড়িতে কে কে আছেন?
আমাদের জয়েন্ট ফ্যামিলি। সেখানে মা-বাবা-বোন, কাকু-কাকিমা, খুড়তুতো ভাই, ঠাম্মা আর দাদু থাকেন। আমি ছোট থেকে দিদার বাড়িতে দিদার সঙ্গেই থাকি। আমাদের দুটো বাড়ির দূরত্ব খুব বেশি নয়।
রান্না করতে পারেন?
আমি রান্না করতে পারি। তবে ভাত রাঁধতে পারি না। আমি চিকেন তরকা, চিকেন চাউমিন, মানে যেগুলি নিজে খেতে ভালোবাসি, সেগুলি বারবার চেষ্টা করি। আমার হাতের চিকেন তরকা সবার খুব প্রিয়।
এখন তো অনেক রোজগার করছেন। রোজগারের টাকা কীভাবে খরচ করেন?
আমার টাকা-পয়সা সমস্তটাই মা দেখেন। তবে আমি মায়ের কাছ থেকে নিয়ে সেটা দিয়ে সবার জন্য উপহার কিনি, দরকার পড়লে আমার মেকাপ কিট কিনি। তবে সব থেকে বেশি আমার বোনের জন্য কেনাকাটা করি।
ভবিষ্যতে গাড়িবাড়ি করার ইচ্ছে আছে?
আমার একটা বড় গাড়ি কেনার ইচ্ছে আছে। কারণ আমরা বছরে একবার পরিবারের সবাই মিলে দিঘা যাই। সে প্রায় কুড়ি একুশ জন মিলে যাওয়া হয়। কিন্তু সবাই তো এক গাড়িতে ধরে না, তাই আমার মনে হয় আমার ফ্যামিলির কয়েকজন যদি একগাড়িতে যেতে পারে, সেরকম একটা ফ্যামিলি কার কিনব। আর ফ্ল্যাট আমার খুব একটা পছন্দ নয়। তাই আপাতত দিদার বাড়িটাকে সাজানোর ইচ্ছে আছে।
আজ যে আপনি অভিনেত্রী হয়েছেন, তার পেছনে কার অবদান বেশি?
আমার মা অর্পিতা সাহার।
আগের জীবনের সঙ্গে এখনকার জীবনের ফারাক কতটা টের পান? লাইফ স্টাইল কতটা বদলেছে?
আমার কোনও বদল হয়নি। ওই যে সবাই বলে, পরিচিত মুখ হয়ে গেলেই আর রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়া যায় না। ওটা আমার বোকা বোকা মনে হয়। রাস্তায় বেরলে লোকে যখন চিনতে পারে খুব ভালো লাগে, সবাই ছবি তুলতে চায়। এগুলি বেশ ভালো লাগে। আমি তো সাধারণভাবেই রাস্তায় বেরই। তাতে কেউ যনি চিনে ফেলে ক্ষতি কী? আমি পরিচিতিটা এনজয় করি।
পশুপাখি ভালোবাসেন?
ভীষণ। আমার দুটো ডগি আছে। দুষ্টু আর কিউটি।
বর্তমান সমাজে মেয়েদের অবস্থান কেমন?
এখন মেয়েরা ভীষণ স্মার্ট। তবুও অনেক জায়গায় অনেক রকম বাজে ঘটনা ঘটছে। আসলে আমাদের সমাজ মেয়েদের একটু বাঁকা নজরে দেখে। প্রথম প্রথম শ্যুটিং সেরে আমি যখন অনেক রাতে ফিরতাম বা ভোর হয়ে যেত তখন অনেকে অনেক রকম মন্তব্য করত। কিন্তু একটা ছেলে এটা করলে তাকে কেউ কিছু বলে না।
ভূত আর ভগবানে বিশ্বাস আছে?
ভগবান এবং ভূত দুটোতেই বিশ্বাস আছে। তবে ভূতে খুব একটা ভয় পাই না। অবশ্য ভয় পাওয়ার মতো তেমন কোনও অভিজ্ঞতাও এখনও হয়নি।
সিনেমায় অভিনয় করতে চান? স্বপ্নের চরিত্র কী?
অবশ্যই করতে চাই। আর মণিকর্ণিকার চরিত্রটা আমার খুব পছন্দের। যদি সুযোগ আসে, তবে আমি ওই চরিত্রটা করতে চাই। চরিত্রটার মধ্যে একটা চার্ম আছে। আমি সেই চার্মটাই ফুটিয়ে তুলব।
পরজন্মে বিশ্বাস করেন?
না। যা হওয়ার এই জন্মেই হবে।
অবসর সময়ে কী করেন?
আড্ডা দিই, বোনের সঙ্গে খেলি, আমার ডগি দুটোর সঙ্গে খেলি। বন্ধুদের সঙ্গে ফোনে কথা বলি আর বাড়ির সবার সঙ্গে মজা করে কাটিয়ে দিই।
সাক্ষাৎকার: কাকলি পাল বিশ্বাস
