অত্যধিক পরিশ্রমে শারীরিক দুর্বলতা। বাহন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় অগ্রগতি বিষয়ে সংশয় বৃদ্ধি। আধ্যাত্মিক ... বিশদ
তেলের দাম, গ্যাসের দাম, স্বল্প সঞ্চয়ের সুদ... বাজার দরের সঙ্গে প্রথম দু’টো পাল্লা দিয়ে বাড়লে কমছে তৃতীয়টি। উপার্জনের উপায় কি সাধারণ মানুষের বেড়েছে? ইউপিএ জমানায় ১০ হাজার টাকা যাঁরা মাসিক আয় করতেন, তাঁরা এখন কত টাকা উপার্জন করেন? আর মাস চালাতেই বা তাঁদের কত খরচ হয়? অনুপাতটা কিন্তু বিশ্লেষণ করা উচিত। একটা সহজ হিসেব করলেই বোঝা যাবে... সাত বছর আগে প্রতি মাসে আপনি কত টাকা জমাতে পারতেন। আর এখন সেই অঙ্কটা কত। এই সাত বছরে মধ্যবিত্তরা নিম্ন মধ্যবিত্ত হয়েছে, নিম্নবিত্তরা গরিব, আর গরিবদের কাছে উপার্জনের উপায় নেই বললেই চলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবার জন্য বিনামূল্যে রেশনের ব্যবস্থা করেছেন। যাঁদের একটা স্থিতিশীল ইনকাম রয়েছে, তাঁদের এটা না হলেও চলে। কিন্তু লকডাউনে যাঁদের কাজ চিরতরে চলে গিয়েছে, তাঁদের কাছে এই বিনা পয়সার রেশন বিশল্যকরণীর সমান। যাঁরা উজ্জ্বলা যোজনার গ্যাস ছেড়ে আবার কাঠের বা কয়লার আগুনে ফিরে গিয়েছেন, তাঁরা জানেন এই নিখরচার চালের মর্ম। এরপরও বিজেপি আশা করছে, এই বাংলায় তারা ২০০ আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসবে? ওই বিজ্ঞপ্তি গেরুয়া শিবিরের কাছে জোড়া ধাক্কা নয়?
অবশ্যই জোড়া ধাক্কা। জোড়ার আবার দু’রকম মানে হয়। একটা হল গিয়ে ‘ডাবল’। মানে দু’টি। অন্য মানেটি আবার একটির সঙ্গে অন্যটি জুড়ে থাকা। এক্ষেত্রে যেমনটি চাই, ঠিক তেমনটি নেওয়া যেতে পারে। অর্থনীতির সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অবশ্য প্রত্যাহার শব্দটা মোদি সরকারের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। ফারাক একটাই, আগেরগুলো এমন ভয়াবহভাবে ল্যাজে আগুন দিয়ে দৌড় করায়নি। যা করিয়েছে ‘নজর বিভ্রাট’ সিদ্ধান্ত। বহু মানুষ সকাল সকাল ভোট দিতে বেরিয়ে লাইন দিয়েছেন এবং নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন, ‘খাব কী...!’ মোদিজি ভাবতেই পারেন, এই আলোচনার প্রতিফলন ভোটযন্ত্রে পড়েছে বা আগামী দিনেও পড়বে। তাই তিনি ক্ষুব্ধ। প্রবল ক্ষুব্ধ। বাজারে যা খবর, পুদুচেরি ছাড়া পাঁচ রাজ্যের অন্য কোথাও তিনি বিজেপির পারফরম্যান্সের ব্যাপারে নিশ্চিত নন। সেটাও ক্ষোভের একটা কারণ বটে। কেরলে অবশ্য চেষ্টা তাঁরা চালাবেন। বিজেপির এক নেতাই মুখ ফস্কে বলে ফেলেছেন, ‘৩৫-৪০টা আসন পেলেই হবে।’ বাকি? তাহলে কি ঘোড়া কেনাবেচা? সেই রাস্তা কি তাহলে বাংলাতেও খুলে রেখেছে গেরুয়া শিবির? যেভাবে হোক বাংলা দখল করতে হবে... এটাই ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের ধ্যান-জ্ঞান-স্বপ্ন।
তাই ‘নজর বিভ্রাট’ মানতে বাধ্য হলেন নির্মলা। যা হওয়ার কথা নয়। স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের সুদে হেরফের হচ্ছে, অথচ অর্থমন্ত্রী জানেন না... এ হতে পারে না। অর্থাৎ, ‘ডাল মে কুছ তো... হ্যায়’। মানুষ বিশ্বাস করছে না। এমনিতেই এখন স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পগুলির যা সুদের হার, সাধারণ মানুষকে একমুঠো ভাত রাতের জন্য তুলে রাখতে হয়। গত ২০১৩ সালের ১ এপ্রিল অনুযায়ী, পিপিএফে সুদের হার ছিল ৮.৭ শতাংশ। এই মুহূর্তে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৯ শতাংশে। কেন্দ্রীয় সরকার এই হার আরও কাটছাঁট করে ৭.১ শতাংশ করতে চায়। প্রবীণ নাগরিকদের জন্য সঞ্চয় প্রকল্পে ইউপিএ জমানায় সুদের হার ছিল ৯.২ শতাংশ। এখন কমে হয়েছে ৭.৪ শতাংশ। নরেন্দ্র মোদি সরকারের ‘নজর বিভ্রাট’ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী সুকন্যা সমৃদ্ধি ৭.৬ শতাংশ, এমআইএস ৬.৬ শতাংশ, রেকারিং ডিপোজিটের সুদের হার ৫.৮ শতাংশ হওয়ার কথা ছিল।
ভোট বড় বালাই। তাই আপাতত এই প্রক্রিয়া স্থগিত রাখা হয়েছে। আপাতত শব্দটি এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২ মে ভোটের ফল প্রকাশ। একটা বিষয় কিন্তু নিশ্চিত... তারপরই এই তালিকা কার্যকর হবে। সামান্য কিছু বেসিস পয়েন্টে এধার-ওধার হতে পারে। কিন্তু মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত কিংবা সুদের টাকায় শেষ বয়স গুজরান করেন, সেই প্রবীণ নাগরিকদের স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার মতো কোনও কারণ নেই। সরকারি স্তরে সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তি তারই ফল। আজ আমরা মজা করতেই পারি, ১ এপ্রিলের একটা নয়া নামকরণ হল... ‘হ্যাপি ওভারসাইট ডে’ বলে। সেই আনন্দ অচিরেই ঘুচে যাবে। রাজ্যে ক্ষমতায় কে এল... তৃণমূল না বিজেপি... তার উপর কিছুই নির্ভর করবে না। ‘ডবল ইঞ্জিন’ সরকার হলে ‘ডবল বেনিফিট’ আদৌ হবে কি না জানা নেই। কিন্তু হ্যাঁ, সাঁড়াশির ডবল চাপে মানুষ ব্যতিব্যস্ত হবে—সেটা নিশ্চিত। যেমন হচ্ছে ত্রিপুরায়। যেমন হচ্ছে অসমে। প্রতিশ্রুতি আমরা আজ শুনছি... তখন স্মৃতি রোমন্থন করব। যেমন এখন করছি... সবার অ্যাকাউন্টে ১৫ লক্ষ টাকা—হয়নি। বছরে এক কোটি চাকরি—হয়নি। ২০১১-১৩ অর্থবর্ষে নির্মাণ, আবাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তির মতো মূল সেক্টরগুলিতে ১২ লক্ষ ৮০ হাজার কর্মসংস্থান হয়েছিল। ২০১৪ থেকে ’১৬ অর্থবর্ষে সেটাই নেমে গিয়েছে ৬ লক্ষ ৪১ হাজারে। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ—কমেছে। স্বচ্ছ ভারতও তো ছিল নরেন্দ্র মোদির প্রতিশ্রুতি! এখানেও একটা হিসেব দেখা যাক। ২০০৮ থেকে ’১১ সালের মধ্যে ভারতে ১ কোটিরও বেশি শৌচাগার নির্মাণ হয়েছে। অথচ ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে সংখ্যাটা মেরেকেটে ৮০ লক্ষ। এর একটা লেজুড়ও আছে... সেই সব শৌচাগারের বেশিরভাগেই জল সরবরাহ নেই।
প্রতিশ্রুতি আছে। বাস্তব নেই।
গত ১ এপ্রিলের ভোটের পর প্রশ্ন করেছিলাম এক ভোটারকে... কাকে দিলে ভাই? নতুন ভোটার সে। বলল, ‘শুভেন্দু’। শুনে মনে হল, বাহ... শুভেন্দুবাবু তাহলে ভালোই প্রভাব ফেলেছেন। কিন্তু তারপরই কী মনে হল, জিজ্ঞেস করলাম... ‘কোন ফুলে?’ সে বলল, ‘কেন? জোড়া ফুল!’ শুভেন্দু অধিকারী দলবদলু। তিনি জোড়া ফুল ছেড়ে এক ফুলে পাড়ি দিয়েছেন। দিন আনি দিন খাই এমন বহু মানুষের কাছে কিন্তু তাঁর প্রতীক তৃণমূলই। এটাও বাস্তব।
আজ আবার ভোট বাংলায়... তৃতীয় দফা। প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তবের তুমুল টানাটানি চলছে। ভোটাররা ভাবছেন...। এখন প্রশ্ন একটাই, ‘আসোল পোরিবর্তন’ কতটা দরকার?