বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যার বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
আর একজন সাংবাদিক নন গড় অভিনেতা। একসময় বামপন্থী শিবিরে ছিলেন। চরম বিপাকে পড়ে নিশ্চিত গ্রেপ্তারি এড়াতে মুখ্যমন্ত্রীর পায়ে পড়েছিলেন। তবু বাছবিচার না করেই মুখ্যমন্ত্রী অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সেই যাত্রায় তাঁকে শুধু গ্রেপ্তারির হাত থেকেই বাঁচাননি, একটা নিশ্চিত আয়ের বন্দোবস্তও করে দিয়েছিলেন। আন্তরিকভাবে পাশে দাঁড়িয়ে তাঁকে দিয়েছিলেন সরকারি পদ, সঙ্গে সম্মান ও মর্যাদাও। উপকার নিয়ে তা ‘ঠিক’ সময়ে ভুলে যাওয়া এক বিরল প্রতিভা। যাঁদের থাকে তাঁরা ‘সাতে পাঁচে না-থাকার’ অভিনয়ে চিরদিন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ভোট যখন শিয়রে, তখন সোনার বাংলা গড়ার ঘটি না ডোবা সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে উপকার চুকিয়ে দেওয়ার এটাই তো সঠিক পথ। উজ্জ্বল প্রতিদান। এরকমটা না করলে তাঁকে যে সঠিকভাবে চেনাই যেত না! সেই সঙ্গে তাঁর আখের গোছানো সোনার ভবিষ্যৎও যে অধরাই থেকে যেত!
তৃতীয়জন ঘরে মমতার ছবি টাঙিয়ে দশ বছর চুটিয়ে মন্ত্রিত্ব করে গিয়েছেন। যাবার সময় নেত্রীর ছবিটা বগলে করে নিয়ে যেতেও ভোলেননি। প্রকাশ্যে তা দেখিয়েওছেন সবাইকে। সেই সঙ্গে বিস্তর নাটকীয় উপাদানের অভাব ছিল না তাঁর আচরণে। বলেছেন, যেখানেই যান না কেন, ওই ছবিটা তাঁর কাছে আগামী দিনেও থাকবে। কিন্তু না জানিয়ে সামান্য একটা দপ্তর বদল করার জন্যই কি সব হিসেব ওলটপালট হয়ে গেল! ওইটুকুতেই এতটা লাগল কেন? যদি তাই হয়, তাহলে বলছেন কেন যে কেউ মন্ত্রী হয়ে জন্মান না, মন্ত্রী হয়ে মারাও যান না। এ তো আসা-যাওয়ার পথের মাঝখানে কতই ঘটে। তাহলে দশ বছর ঘর করার পর হঠাৎ এই মতিভ্রম কেন? আসলে ওসব কিছুই নয়, সোনার বাংলা গড়ার তাগিদটা আজ এতই তীব্র যে শিষ্টাচার, সহবত সবকিছু নিমেষে ব্রাত্য হয়ে যায়। প্রশ্ন একটাই, ভোট শিয়রে বলেই কি খাঁচার পাখিদের বনে বাহির হওয়ার এমন তীব্র আকুলতা! নীতিকথার আড়ালে রাজনৈতিক নেতাদের কী মধু তাড়িয়ে নিয়ে বেড়ায়, তা সবারই জানা! ভোট মিটলে বিফল মনোরথ হয়ে আবার পুরনো দলে ফেরার ব্যস্ততা বাড়বে না তো?
আর একজনও আছেন। বিস্তর লম্ফঝম্প করে বলছেন, পুরনো দলে কাজের পরিবেশটাই নাকি নেই, শুধুই তোলাবাজি! প্রশ্ন একটাই, তাহলে এতদিন ধরে ওই তোলাবাজদের সঙ্গে সপরিবারে কাটালেন কেন? মমতার মন্ত্রী কম পড়িয়াছিল নাকি? পুরসভা থেকে পার্লামেন্ট কোথাও তো ইট পাততে বাদ রাখেননি পরিবারের সদস্যরা। কম তো নেননি। এবং বলাই বাহুল্য, সবই হয়েছে মমতার দয়ায়। নিজেও ছোট বড় প্রায় তিন ডজন পদ আঁকড়ে ছিলেন। পাহাড় প্রমাণ সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে দল ছাড়ার জন্য ভোট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল কেন—মমতা কম দিয়েছেন, এই অভিমান প্রকাশ করতে এতটা সময় লাগল কেন? আর এখানেই তিনি কিন্তু ডাহা হেরে গিয়েছেন। স্বীকার করতেই হবে, কাঁচরাপাড়ার ভূমিপুত্র কিন্তু ভোটের জন্য অপেক্ষা করেননি। ল্যাজে খেলাননি। দল ছেড়েছিলেন ভোটের অনেক আগেই। ২০১৭ সালে, বিধানসভা ভোটের চার বছর আগে। তখনও এরাজ্যে গেরুয়া দলের তেমন কিছুই জনভিত্তি ছিল না। বিজেপি নেতারাই কিন্তু আড়ালে আবডালে কথাটা বারবার বলছেন। তাঁরাও স্বার্থান্বেষীদের চিনে নেওয়ার চেষ্টা করছেন কি না!
যাই হোক, এই দলছুটদের ঘাড়ে চেপেই সোনার বাংলার স্বপ্ন ফেরি করছে গেরুয়া শিবির। অবাঙালি আর বহিরাগত, এই বদনাম ঘুচিয়ে দিতে তৃণমূল থেকেই নেতা কিনছে। ওটাই আপাতত ছদ্ম বাঙালি সাজার হ্যাপি হান্টিং গ্রাউন্ড। আর দলকে ঘাসফুলে বোঝাই করে সেই তৃণমূলের নামেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলছে। ইডি, সিবিআইকে কাজে লাগাচ্ছে। তোলাবাজের দল বলে আক্রমণ শানাচ্ছে, আবার সেই দলেরই টাকা তোলা নেতা-কর্মীদের উপর ভর করে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে! সোনার বাংলার আফিম খাওয়াচ্ছে। নীতি আদর্শ বর্জিত এ বড় অদ্ভুত হিসেব। এই হিসেব বাংলার উন্নয়ন করবে নাকি বহিরাগত বর্গিরা এসে বাংলার সুজলা শ্যামলা ধানখেতটাকেই মুড়িয়ে খেয়ে যাবে, কে জানে! শেষে সব হারিয়ে বাঙালি যে তিমিরে সেই তিমিরেই থেকে যাবে। আমও যাবে, ছালাও যাবে। সাইডলাইনে দাঁড়িয়ে আঙুল চুষতে হবে। জেলায় জেলায় ভোটে লড়ার টিকিট পাওয়া নিয়ে নরক গুলজার পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে। তাই এরাজ্যের মানুষকেই প্রকৃত বাস্তবটা বুঝে নিতে হবে। সিদ্ধান্ত নিতে ভুল চুক হলে সংশোধনের সুযোগ কিন্তু খুব একটা মিলবে না।
আজ বাংলার জন্য দরদ যখন উথলেই উঠছে, তখন একটা আস্ত বাজেটে বাংলার ভাগ্যে তেমন কিছুই জুটল না কেন? অধিকাংশ রেল প্রকল্পেই মাত্র হাজার টাকা বরাদ্দ! মমতার ঘোষণা করা বহু
প্রকল্পের উল্লেখ পর্যন্ত নেই। সড়ক নির্মাণে তামিলনাড়ু, কেরল, অসমের তুলনায় পশিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে কম। বাংলার জন্য বলার মতো নতুন কিছু নেই। আলাদা করে কোনও ভাবনার ছাপও নেই। তাহলে কিছু দলত্যাগীর এত আস্ফালন কেন? তাঁদের সঙ্গে আসল ‘ডিলটা’ কী হয়েছে, একবার সামনে আনুন। বাংলার মানুষ তো জানতে চাইছে। কোচি, নাসিকের মতো শহরের জন্যও নতুন মেট্রোরেল প্রকল্পের ঘোষণা হল।
আর বাংলা ব্রাত্যই। উল্টে পেট্রল-ডিজেলের দাম
তো বাড়ছিলই, বাজেটের পর পরই রান্নার গ্যাসের দামও সিলিন্ডার পিছু আরও ২৫ টাকা বাড়িয়ে
দেওয়া হল। পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য নতুন কোনও ঘোষণা দেখতে পাওয়া গেল না। লকডাউনে কাজ হারানো শ্রমিকদের জন্যও কিছু নেই। কর্মসংস্থানের নতুন কোনও দিশা নেই। লোকে যাতে খরচ করতে পারে, বাজারে কেনাকাটা উৎসাহ পায়, তার জন্য নগদের জোগান বাড়াতে আয়করেও বিশেষ কোনও ছাড় নেই। এই বঞ্চনার জবাব তো দলবদলুদেরই
দিতে হবে। উল্টে স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর দায়ও নিতে হবে। যাঁরা মিথ্যে স্বপ্ন ফেরি করে পশ্চিমবঙ্গকে নিজেদের স্বার্থে নরকের পথে ঠেলে দেওয়ার বন্দোবস্ত পাকা করতে মরিয়া, বাংলার মানুষ তাঁদের কাছে হিসেব তো নিয়েই ছাড়বে। পাশাপাশি মানুষ মনে রাখবে, অত্যন্ত সীমিত আর্থিক ক্ষমতার মধ্যেও শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে জনমুখী, জনদরদি বাজেট উপহার দিলেন তার কথা। দৃষ্টিভঙ্গির এই ফারাকটা বিচার করেই বাংলার মানুষকে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে।