কর্ম, বিদ্যা ক্ষেত্রে উন্নতির যোগ। আয় ব্যয় ক্ষেত্রে সমতার অভাব। স্বাস্থ্য ভালো থাকলেও আঘাতযোগ থাকায় ... বিশদ
সাংখ্য যোগ মতে শারীরিক ও মানসিক সমস্ত উপাদান মূলা প্রকৃতি থেকে উৎপন্ন। প্রথমে তিনগুণ সাম্য অবস্থায় থাকে। এই সাম্য অবস্থা বিঘ্নিত হলে সৃষ্টি কার্য আরম্ভ হয়। প্রকৃতির ক্রমাণ্বয় রূপান্তর হল মহৎ (বিশুদ্ধ চিত্ত); অহঙ্কার; মন (অন্তরিন্দ্রিয়); পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয়; পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয়; পঞ্চ সূক্ষ্ম ভূত; পঞ্চ স্থূল ভূত। এগুলি প্রকৃতি থেকে ক্রমান্বয়ে উৎপন্ন হয়েছে। সুতরাং প্রকৃতি সহ মোট তত্ত্ব চব্বিশ। পুরুষকে নিয়ে তত্ত্বসংখ্যা হয় পঁচিশ। সাংখ্যমতের প্রবর্তক কপিলের মত এটি।
প্রকৃতির প্রথম এবং সূক্ষ্মতম সৃষ্টি ‘মহৎ’-কে সত্ত্বগুণ প্রধান বিশুদ্ধ চিত্ত, বুদ্ধি সত্ত্বও বলা হয়। এটি ব্যাপক স্বভাব এবং স্বচ্ছ। মহৎ বা বুদ্ধি সত্ত্বে প্রতিফলিত হওয়ার পুরুষকে এর সঙ্গে অভিন্ন ভাব হয়। এই সংযোগ হেতু তারা যেন একে অন্যের বৈশিষ্ট্য পায়, অনেকটা যেন সূর্য এবং যে আয়নায় সূর্য প্রতিফলিত হয় তার মত।
বুদ্ধিসত্ত্ব আসলে অচেতন হলেও চেতন বলে মনে হয়। আর পুরুষ আসলে অপরিণামী চেতন স্বভাব, সদা শুদ্ধ, মুক্ত, জ্যোতির্ময় হলেও যেন জ্ঞান-অজ্ঞান, সুখ-দুঃখ, পাপ-পুণ্য, বন্ধন-মুক্তি রূপ বিভিন্ন পরিণাম প্রাপ্ত হন। এগুলি আসলে বুদ্ধিসত্ত্বের বিভিন্ন ভাব।
বুদ্ধি-সত্ত্বের সঙ্গে সংযোগবশতঃ পুরুষ জ্ঞাতা বা দ্রষ্টা এবং প্রকৃতি জ্ঞেয় বা দৃশ্য হন। দ্রষ্টার অভিজ্ঞতা এবং মুক্তির জন্য প্রকৃতির সমস্ত পরিণাম ঘটে।
এইভাবে আত্মার সঙ্গে অনাত্মবস্তুর ভ্রান্ত অভেদ দৃষ্টি আরম্ভ হয়। সাংখ্যযোগ এবং বেদান্ত উভয়েরই মত—এটিই জীবের দুঃখের প্রাথমিক কারণ। পতঞ্জলি বলেন—দ্রষ্টা এবং দৃশ্যের মিলন দুঃখের কারণ, এটিকে ব্যাহত করতে হবে। অজ্ঞান এর মূল। লাল ফুলের সান্নিধ্যে এলে যেমন বিশুদ্ধ স্ফটিককে লাল দেখায়, তেমনি প্রকৃতি এবং তার পরিণামসমূহের সান্নিধ্যে আসায় দ্রষ্টাকে বদ্ধ বলে মনে হয়। অবশ্য এর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য ঘটে বুদ্ধি-সত্ত্বের সঙ্গে। ফলে আত্মার মুক্তি বলতে বোঝায়—প্রকৃতি এবং তার সূক্ষ্ম ও স্থূল পরিণামসমূহ থেকে একে সম্পূর্ণ গুটিয়ে আনা এবং পৃথক্ করা। আত্মার সঙ্গে অনাত্মবস্তুর, বিশেষতঃ বুদ্ধিসত্ত্বের তীক্ষ্ণ পার্থক্য বিচারের দ্বারা এটি করা সম্ভব। এই উদ্দেশ্য সাধনের জন্য তীব্র অন্তর্দৃষ্টি এবং প্রস্তুতিমূলক ধাপসহ গভীর ধ্যানের একান্ত প্রয়োজন।