কর্ম, বিদ্যা ক্ষেত্রে উন্নতির যোগ। আয় ব্যয় ক্ষেত্রে সমতার অভাব। স্বাস্থ্য ভালো থাকলেও আঘাতযোগ থাকায় ... বিশদ
মামেব যে প্রপদ্যন্তে মায়ামেতাং তরন্তি তে”।।
এই দৈবী মায়া বা পরামায়া বা পরাশক্তি হচ্ছে ত্রিগুণাত্মিকা। এই মায়াকে অতিক্রম করা অত্যন্ত কঠিন। এটা একটা বাস্তব সত্য।
এখন প্রশ্ন হ’ল এই মায়া কে বা কী? শ্লোকটিতে বলা হয়েছেঃ এই মায়া আমার। অর্থাৎ এই মায়া হ’ল পরমপুরুষের মায়া, সম্পূর্ণতই পরমপুরুষের আশ্রিতা। তাঁর ইচ্ছা ব্যতিরেকে এই মায়াশক্তি কোন কাজই করতে পারে না।
‘আনন্দসূত্রমে’ বলা হয়েছে—‘শক্তিঃ সা শিবস্য শক্তিঃ’। শক্তি কোন স্বাধীন সত্তা নয়—সে পরমপুরুষের আশ্রিতা শক্তি। পরমপুরুষের সৃষ্ট মায়াই হ’ল ‘ভবসাগর’। আর যেহেতু মায়া পরমপুরুষের অধীনা তাই যারা তার আশ্রয় নেয় কেবল তারাই সেই দুস্তর মায়াসমুদ্রকে অতিক্রম করতে পারে। প্রাকৃত জীব এই মায়াকে ভয় পেতে পারে, কিন্তু যে প্রকৃত সাধক সে ভয় পাবে কেন! বস্তুতঃ সাধক কখনও মায়াকে ভয় পায় না, কারণ সে যে পরমপুরুষকে ভালবাসে। তাই পরমপুরুষ যদি মায়াধীশ হন আর সাধকের যদি সেই মায়াধীশ পরমপুরুষের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা থাকে, তাহলে সে মায়াকে ভয় পাবে কেন? এই কারণে কোন জ্ঞানী মায়াকে ভয় পেলেও পেতে পারেন। কিন্তু যিনি ভক্ত তিনি কখনও মায়ার ভয়ে ভীত হন না।
গল্পে আছে, একজন জ্ঞানী আর একজন ভক্ত একবার একটি আম বাগানে গেছে। যে জ্ঞানী সে করবে কী? —না, আম বাগানে কতগুলো আম গাছ আছে তাই গুনতে শুরু করে দেবে। কিন্তু যে ভক্ত সে বাগানের আম গাছ থেকে পাকা আম পেড়ে খেতে শুরু করে দেবে। জ্ঞানী হয়তো তক্র বা ঘোল নিয়ে লম্বা-চওড়া আলোচনা শুরু করে দেবে। কিন্তু যে ভক্ত সে ক্রীম বা সারাংশ খেতে শুরু করে দেবে। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় জ্ঞানী তার বাস্তব বুদ্ধিহীনতার জন্যে অনুতাপ করছে। কিন্তু যে ভক্ত সে সত্যিকারের আনন্দ উপভোগ করছে। ভক্ত সব সময় বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করে। জ্ঞানী করে কী? —না, ধর্মশাস্ত্রের বা তর্ক শাস্ত্রের হাজার সমস্যা নিয়ে অযথা মাথা ঘামায়। কিন্তু ভক্ত ধর্মশাস্ত্রের সারাংশ আত্মসাৎ করে। ভক্ত জেনে বুঝে পরমপুরুষের শরণ নেয়। যদি পরমপুরুষকে ধরি একটা জাহাজ…একটা প্রকাণ্ড বড় জাহাজ, ভক্ত করে কী?—না, সে সেই প্রকাণ্ড জাহাজরূপী পরমপুরুষে চেপে বসে ও নিশ্চিন্ত নিরুদ্বেগে এই ভবসমুদ্র পার হয়ে যায়।
পরমপুরুষের অনেক নামের মধ্যে একটি নাম ‘হরি’। ‘হরি’ মানে যে হরণ করে। হরণ করা মানে চুরি করা। পরমপুরুষ চুরি করেন—এ আবার কেমন ধারা কথা! হ্যাঁ, ব্যাপারটা সত্যি, চুরি তিনি সত্যিই করেন…ভক্তের পাপ হরণ করেন তিনি। তোমরা নিশ্চয় জান যে প্রতিটি কর্মের প্রতিকর্ম আছে। স্থান-কাল-পাত্র যদি কোন হের-ফের না হয় তাহলে কর্ম ও প্রতিকর্ম সমান সমান হয়। ধর, একজন মানুষ অনেক পাপ কাজ করেছে। তাকে যদি সমস্ত পাপের ফল ভোগ করতে হয় তাতে তার হয়তো বিশ-পঁচিশ জন্ম লেগে যাবে।