কর্ম, বিদ্যা ক্ষেত্রে উন্নতির যোগ। আয় ব্যয় ক্ষেত্রে সমতার অভাব। স্বাস্থ্য ভালো থাকলেও আঘাতযোগ থাকায় ... বিশদ
সংসারী লোক শুদ্ধভক্ত হলে লাভ লোকসান, সুখ দুঃখ এই সব কর্ম্মের ফল ঈশ্বরকে সমর্পণ করে। সন্ন্যাসীরও সব কর্ম্ম নিষ্কাম করতে হয়। সন্ন্যাসী বিষয় কর্ম্ম সংসারীদের মত করে না। দুর্য্যোধন বলেছিলেন, ‘ত্বয়া হৃষীকেশ হৃদিস্থিতেন যথা নিযুক্তোঽস্মি তথা করোমি’। হাঁ, তিনিই কর্ত্তা, তিনিই সব করাচ্ছেন বটে, মানুষ যন্ত্রের স্বরূপ। সংসারে আছ, থাকলেই বা। কর্ম্মফল সমস্ত ঈশ্বরকে সমর্পণ করতে হবে। নিজে কোন ফল কামনা কর্ত্তে নাই। তবে ভক্তি কামনা, ভক্তি প্রার্থনা করতে পার। ভক্তি কামনা কামনার মধ্যে নয়।
যদি কারো শুদ্ধসত্ত্ব (গুণ) আসে, তার ঈশ্বরচিন্তা ছাড়া আর কিছু ভাল লাগে না। কেউ কেউ জন্ম থেকে শুদ্ধ সত্ত্বগুণ পায়। কামনাশূন্য হয়ে যদি কর্ম্ম করতে চেষ্টা করা যায়, তাহলে শেষে শুদ্ধ সত্ত্ব লাভ হয়। যার আন্তরিক ঈশ্বরের উপর টান থাকে তাকে দিয়ে তিনি জপ, আহ্নিক, উপবাস, পুরশ্চরণ এই সব কর্ম করিয়ে লন। ফল কামনা না করে এই সব কর্ম্ম করে যেতে পারলে নিশ্চিত তাঁকে লাভ হয়। সংসারে যতদিন ভোগ করবার ইচ্ছা থাকে, ততদিন কর্ম্ম ত্যাগ করতে পারে না। যতক্ষণ ভোগের আশা, ততক্ষণ কর্ম্ম থাকে, আর কর্ম্মের দরুণ ভাবনা, চিন্তা, অশান্তি। বাসনা ত্যাগ হলেই কর্ম্ম ক্ষয় হয়, আর শান্তি হয়। নিষ্কাম কর্ম্মেতে অশান্তি হয় না। কর্ম্ম যে বরাবরই করতে হয়, তা নয়। ঈশ্বরের প্রতি প্রেম হলে আপনিই কর্ম্ম ত্যাগ হয়ে যায়। যখন একবার ‘হরি’ বা একবার ‘রাম’ নাম করলে রোমাঞ্চ হয়, অশ্রুপাত হয়, তখন নিশ্চয়ই জেনো যে জপ আহ্নিক আর করবার আবশ্যক নাই। তখন কর্ম্মত্যাগের অধিকার হয়েছে। কর্ম্ম আপনা আপনি ত্যাগ হয়ে যাচ্ছে।
যদি তাঁর উপর ভালবাসা আসে, তাহলে হোম, যাগ, যজ্ঞ, পূজা এ সব কর্ম্মের বেশী দরকার নাই। যতক্ষণ হাওয়া না পাওয়া যায়, ততক্ষণই পাখার দরকার। যদি আপনি হাওয়া আসে, তাহলে আর পাখার কোন আবশ্যক হয় না। যা কিছু কর্ম্ম আছে, শেষ হয়ে গেলেই নিশ্চিন্ত। গৃহিণী বাড়ীর কাজ কর্ম্ম ও রান্না-বান্না সেরে সকলকে খাইয়ে দাইয়ে গামছাখানা কাঁধে ফেলে পুকুরঘাটে গা ধুতে যায়, তখন আর হেসেল ঘরে ফেরে না—ডাকাডাকি করলেও—আসে না। ভক্তির মানে—কায়মনোবাক্যে তাঁর ভজনা।