কর্ম, বিদ্যা ক্ষেত্রে উন্নতির যোগ। আয় ব্যয় ক্ষেত্রে সমতার অভাব। স্বাস্থ্য ভালো থাকলেও আঘাতযোগ থাকায় ... বিশদ
তিনি আছেন বলে জীব, জগৎ, চতুর্ব্বিংশতি তত্ত্ব,—এসব আছে। সাপ চুপ করে কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকলেও সাপ, আবার তির্য্যকগতি হয়ে এঁকে বেঁকে চললেও সাপ। বাবু যখন চুপ করে আছে তখনও যে ব্যক্তি, যখন কাজ করছে তখনও সেই ব্যক্তি। তাঁকে বাদ দিলে কিছুই থাকে না। একের পিঠে অনেকশূন্য দিলে সংখ্যা বেড়ে যায়। এককে পুঁছে ফেললে শূন্যের কোন মূল্যই থাকে না। ব্রহ্ম আর শক্তি অভেদ। এককে মানলেই আর একটীকে মানতে হয়। যিনিই ব্রহ্ম তিনিই শক্তি। তাঁকেই মা বলে ডাকি। কালীই ব্রহ্ম, ব্রহ্মই কালী। যেমন অগ্নি আর তার দাহিকাশক্তি,—অগ্নি মানলেই দাহিকাশক্তি মানতে হয়, একটাকে ছেড়ে আর একটাকে ভাবা যায় না। সূর্য্যকে ছেড়ে সূর্য্যের রশ্মি ভাবা যায় না। আবার রশ্মিকে ছেড়ে সূর্য্যকে ভাবা যায় না। দুধ কেমন? না, ধোবো ধোবো। দুধকে ছেড়ে দুধের ধবলত্ব ভাবা যায় না। আবার দুধের ধবলত্ব ছেড়ে দুধকে ভাবা যায় না। তাই ব্রহ্মকে ছেড়ে শক্তিকে, শক্তিকে ছেড়ে ব্রহ্মকে ভাবা যায় না। নিত্যকে ছেড়ে লীলা, লীলাকে ছেড়ে নিত্য ভাবা যায় না।
সেই আদ্যাশক্তি বা মহামায়া ব্রহ্মকে আবরণ করে রেখেছে। আবরণ গেলেই যা ছিলুম তাই হলুম। ‘আমিই তুমি,’ ‘তুমিই আমি।’ বেদান্তবাদীদের সোঽহং অর্থাৎ ‘আমিই সেই পরব্রহ্ম,’ যতক্ষণ আবরণ রয়েছে ততক্ষণ একথা খাটে না। জলেরই তরঙ্গ, তরঙ্গের কিছু জল নয়। পূর্ণজ্ঞানে সমাধি হয়, চতুর্ব্বিংশতি তত্ত্ব ছেড়ে চলে যায়—তাই অহং তত্ত্ব থাকে না। ঠিক জ্ঞান হলে অহঙ্কার থাকে না। সমাধি হলে মানুষ তাঁর সঙ্গে এক হয়ে যায়। সমাধি না হলে ঠিক জ্ঞান হয় না। ঠিক দুপুরের সময় সূর্য্য মাথার উপর থাকলে নিজের ছায়া দেখা যায় না। তাই ঠিক জ্ঞান হলে, সমাধি হলে অহংরূপ ছায়া থাকে না। আমি একটী, তুমি একটী—এ ভেদ বোধ তিনিই করাচ্ছেন। যতক্ষণ এই ভেদবোধ, ততক্ষণ শক্তি মানতে হবে। যতক্ষণ ‘আমি’ আছে, ভেদ বুদ্ধি আছে,—ব্রহ্ম নির্গুণ বলবার যো নাই। ততক্ষণ সগুণ ব্রহ্ম মানতে হবে। বেদ পুরাণ, তন্ত্রে এই সগুণ ব্রহ্মকে কালী বা আদ্যাশক্তি বলে গেছে।