উকিল ও ডাক্তারদের কর্মব্যস্ততা বাড়বে। পত্নী/পতির স্বাস্থ্য আকস্মিক ভোগাতে পারে। মানসিক অস্থিরভাব। ... বিশদ
শ্রীকৃষ্ণের বয়স, তাঁর দিব্য শ্রীঅঙ্গ, তাঁর সৌন্দর্য ও তাঁর মৃদুতা হচ্ছে তাঁর কায়িক গুণ। শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর শ্রীঅঙ্গে কোন পার্থক্য নেই। তাই তাঁর কায়িক গুণ সাক্ষাৎ তাঁরই স্বরূপ। কিন্তু যেহেতু এই সমস্ত গুণগুলি ভক্তের হৃদয়ে প্রেমের উদ্দীপন করে, তাই তাদের প্রেমের বিভিন্ন কারণ বলে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। শ্রীকৃষ্ণের গুণের দ্বারা আকৃষ্ট হওয়ার অর্থ শ্রীকৃষ্ণেরই দ্বারা আকৃষ্ট হওয়া, কেন না শ্রীকৃষ্ণ ও তাঁর গুণাবলীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। শ্রীকৃষ্ণের নাম, শ্রীকৃষ্ণের যশ, শ্রীকৃষ্ণের পার্ষদ—সবই শ্রীকৃষ্ণ থেকে অভিন্ন। শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে সম্পর্কিত সব কিছুই যা কৃষ্ণপ্রেম উদ্দীপ্ত করে, তা সবই শ্রীকৃষ্ণ। কিন্তু আমাদের বোধগম্য করার জন্য এই সমস্ত বিষয়গুলি আলাদা আলাদাভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন দিব্য আনন্দের আলম্বন। তাই কৃষ্ণপ্রেমের উদ্দীপক বস্তুগুলি ভিন্ন বলে প্রতিপন্ন হলেও বাস্তবে তা শ্রীকৃষ্ণ থেকে অভিন্ন। শ্রীকৃষ্ণের নাম, যশ, গুণ আদি কৃষ্ণপ্রেমের আলম্বন ও উদ্দীপন উভয় রূপেই প্রকাশিত হয়। শ্রীকৃষ্ণের বয়স কৌমার, পৌগণ্ড ও কৈশোর—এই তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তাঁর আবির্ভাব থেকে পাঁচ বৎসর বয়স পর্যন্ত অবস্থাকে বলা হয় কৌমার, ছয় থেকে দশ বৎসর বয়সকে বলা হয় পৌগণ্ড, এবং একাদশ থেকে পঞ্চদশ বৎসর পর্যন্ত বয়সকে বলা হয় কৈশোর। ষোড়শ বৎসর থেকে শ্রীকৃষ্ণ যৌবনে প্রবেশ করেন, তারপর তাঁর বয়সের কোন পরিবর্তন হয় না। শ্রীকৃষ্ণের অপ্রাকৃত লীলাসমূহ প্রধানত কৌমার, পৌগণ্ড ও কৈশোর অবস্থাতে সম্পাদিত হয়। নন্দ-যশোদার সঙ্গে তাঁর বাৎসল্য রসময়ী লীলা কৌমার অবস্থায় প্রকাশিত হয়। গোপবালকদের সঙ্গে সখ্যরসের প্রকাশ পৌগণ্ড অবস্থাতে এবং গোপবধূদের সঙ্গে তাঁর প্রেমবিলাস কৈশোর অবস্থায় প্রকাশিত হয়। পঞ্চদশ বৎসর বয়স পর্যন্ত শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনে লীলাবিলাস করেন এবং তারপর তিনি মথুরা ও দ্বারকায় লীলাবিলাস করতে যান। ভক্তিরসামৃতসিন্ধু গ্রন্থে শ্রীল রূপ গোস্বামী অখিল রসের আশ্রয়রূপে শ্রীকৃষ্ণের বিশদ বর্ণনা করেছেন, যা আংশিকভাবে নিম্নে বর্ণনা করা হয়েছে।
শ্রীকৃষ্ণের কৈশোর অবস্থাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়—আদ্য, মধ্য ও শেষ কৈশোর। শ্রীকৃষ্ণের কৈশোর শুরু হওয়ার পর, অর্থাৎ এগারো বছর বয়সে তাঁর শ্রীঅংঙ্গ এত উজ্জ্বল হয়ে ওঠে যে, তার ফলে প্রেমের উদ্দীপন হয়। তেমনই, তাঁর নয়নযুগল তখন আরক্তিম হয় এবং তাঁর শ্রীঅঙ্গে রোমাবলী দেখা দেয়। শ্রীকৃষ্ণের এই আদি কৈশোরের বর্ণনা করে বৃন্দাবনে কুন্দলতা তাঁর সখীকে বলছেন, “হে সখী! আমি শ্রীকৃষ্ণের অঙ্গে এক অসাধারণ সৌন্দর্য প্রকাশিত হতে দেখেছি! তাঁর শ্যাম অঙ্গকান্তি ঠিক ইন্দ্রনীল মণির মতো, তাঁর চোখ দুটি ঈষৎ আরক্তিম, তাঁর দেহে কোমল রোমরাজি উদিত হচ্ছে। এই সমস্ত লক্ষণগুলি তাঁকে অপূর্ব সুন্দর করে তুলেছে।”
এই সম্পর্কে, শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধে শুকদেব গোস্বামী মহারাজ পরীক্ষিৎকে বলেছেন, “হে রাজন! ব্রজগোপিকাদের মন শ্রীকৃষ্ণের চিন্তায় তন্ময় হয়ে গিয়েছিল। নটবর বেশধারী শ্রীকৃষ্ণ তাঁর চরণচিহ্নের দ্বারা ভূমি অঙ্কিত করতে করতে বনে প্রবেশ করেন, আর তাঁরা তাঁর সেই রূপের ধ্যানে মগ্ন হয়ে যান। মাথায় শিখিপুচ্ছ, কর্ণযুগলে কুণ্ডল ও পীতবসন পরিহিত শ্রীকৃষ্ণের ধ্যান তাঁরা করতেন।