উকিল ও ডাক্তারদের কর্মব্যস্ততা বাড়বে। পত্নী/পতির স্বাস্থ্য আকস্মিক ভোগাতে পারে। মানসিক অস্থিরভাব। ... বিশদ
যেমন কর্মের ব্যাপারেই দেখ না। সাধক হয়তো কর্মযোগী কিন্তু তার মধ্যে যদি ভক্তি না থাকে তাহলে তার যাবতীয় কর্মপ্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে পড়ে। কর্মের সঙ্গে ভক্তি সংযুক্ত থাকলে, ঈশ্বরপ্রেম যুক্ত থাকলে তবেই কর্ম গৌরবোজ্জ্বল হয়ে ওঠে। নইলে কর্ম ব্যাপারটা একান্ত যান্ত্রিক হয়ে পড়ে। আর সেক্ষেত্রে কর্মসাধনার গোড়ার দিকে যদিও কর্মী কিছুটা মানসিক অন্তর্মুখিনতা অর্জন করে পরের দিকে সেটাও লোপ পেয়ে যায়, আর তার ফলস্বরূপ জীবন পথে চলতে গিয়ে সে একান্তই বহির্মুখী হয়ে পড়ে অর্থাৎ তার মানবীয় অস্তিত্বটাই যন্ত্রবৎ হয়ে পড়ে। তাই কেবল কর্মের দ্বারা মানুষ পরম লক্ষ্যে উপনীত হতে পারে না যদি সেই কর্মের সঙ্গে ভক্তি বা ঈশ্বরপ্রেম সংযুক্ত না থাকে।
এখন দেখা যাক, তপস্বী সাধকের ক্ষেত্রে জিনিসটা কী রকম দাঁড়ায়। তপস্যা ব্যাপারটা হ’ল স্বল্পকালের মধ্যে লক্ষ্যে পৌঁছবার জন্যে স্বেচ্ছায় ক্লেশবরণ। এখন, তপস্যা করতে গিয়ে যদি সাধকের মনে পরমপুরুষের প্রতি প্রেম না থাকে তাহলে তপস্যা ব্যাপারটাই নিরর্থক হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরনের তপস্যা শুধু সময়ের অপচয় মাত্র। ভক্তি-প্রেমবর্জিত তপস্যা তো শুধু অনর্থক কালক্ষেপ। তাতে সাধকের দেহ ও মনের ওপর একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তার ফল অবশ্যই শুভপ্রদ হয় না।
যোগ কী? “যোগশ্চিত্তবৃত্তিনিরোধঃ”। মন বা চিত্তের সকল বৃত্তির নিরুদ্ধাবস্থাই ‘যোগ’ নামে অভিহিত হয়। এখন এই নিরোধকালে যদি পরমপুরুষের প্রতি অন্তরে প্রেম-ভক্তি থাকে সেক্ষেত্রে সমস্ত নিরুদ্ধবৃত্তি পরমপুরুষেই সমাহিত হয়ে যায়। ধর, একজন মস্ত বড় যোগী। কিন্তু যদি তাঁর অন্তরে ইষ্টের প্রতি ভালবাসা না থাকে, তবে যাবতীয় নিরুদ্ধ বৃত্তি স্থূল জড়ে পর্যবসিত হয়ে যায়। তার অর্থ, তার সূক্ষ্ম মানব অস্তিত্বটাই বালুকণা ইঁট-কাঠ-লোহার মত স্থূল হয়ে পড়ে। ভাব তো কী নিদারুণ অধোগতি! কী শোচনীয় অধঃপতন! এই যে বিশেষ প্রকার যোগ যাতে সাধকের মনে পরমপুরুষের প্রতি কোন প্রেম-প্রীতি নেই তাকে সংস্কৃতে বলে ‘হঠযোগ’। মানুষের উন্নতির পক্ষে এ ধরণের হঠযোগ মারাত্মক বিপজ্জনক।
‘হ’ আর ‘ঠ’ মিলে ‘হঠ’। সূর্য নাড়ী বা ইড়া নাড়ীর দ্যোতক এই ‘হ’ ধ্বনিটি, আবার স্থূল শক্তির (Physical force) বীজমন্ত্রও এই ‘হ’ অক্ষরটি। আর ‘ঠ’ হ’ল চন্দ্রনাড়ী বা পিঙ্গলা নাড়ীর দ্যোতক, সেই সঙ্গে মানস শক্তির বীজমন্ত্রও এই ‘ঠ’ অক্ষরটি। তাই ‘হঠ’ শব্দের তাৎপর্য হ’ল স্থূল শক্তির প্রয়োগের দ্বারা মনকে নিয়ন্ত্রণ করা। সাধারণতঃ যখন আচম্বিতে বা আচমকা কোন ঘটনা ঘটে, আমরা বলে থাকি ব্যাপারটা ‘হঠাৎ’ ঘটে গেল (হঠেন কুরুতে কর্ম)। স্বভাবতই কোন হঠযোগী মুক্তি-মোক্ষ লাভ করতে পারেন না।