ধর্মকর্মে সক্রিয় অংশগ্রহণে মানসিক তৃপ্তি ও সামাজিক সুনাম। পেশাদার শিল্পীদের শুভ সময়। ... বিশদ
“ত্বং বৈষ্ণবীশক্তিরণন্তবীর্য্যা,
বিশ্বস্য বীজং পরমাসি মায়া।”
দেবতা ও মানুষ। ইহাদের মধ্যে ভেদ বহুবিধ। তন্মধ্যে একটি হইল দিন ও রাত্রির পরিমাপে। মানুষের দিন বারো ঘণ্টায়, রাত্রি বারো ঘণ্টায়। দেবতার দিবা ছয় মাস, রাত্রি ছয় মাস। আমাদের মাঘ মাস হইতে আষাঢ় মাস এই ছয় মাস দেবতাদের দিন, শ্রাবণ হইতে পৌষ মাস দেবতাদের রাত্রি। দেবতাদের দিনকে বলে উত্তরায়ণ, রাত্রিকে বলে দক্ষিণায়ন। উত্তরায়ণে দেবতারা জাগ্রত, দক্ষিণায়ন তাঁহারা নিদ্রিত। শরৎকাল পড়ে দক্ষিণায়নের মধ্যে। দেবী ভগবতী তখন নিদ্রিতা। সেইজন্য তখন তাঁহাকে পূজা করিতে হইলে দেবীর জাগরণের জন্য বোধন করিতে হয়। বসন্তকাল পড়ে উত্তরায়ণের মধ্যে। তখন দেবী জাগরিতা থাকেন। তাই জন্য বাসন্তী পূজায় বোধনের আবশ্যক হয় না। শারদীয়া পূজা, অকাল পূজা। বাসন্তী পূজা, কাল-বোধিত পূজা। অকাল হইলেও, পূজা বলিতে শারদীয়া মহাপূজাকেই বুঝায়।
মহারাজ সুরথ করিয়াছিলেন বাসন্তী পূজা। শ্রীরামচন্দ্র করিয়াছিলেন শারদীয়া পূজা। ব্রহ্মবৈবর্ত্ত্য পুরাণে আছে—
“পূজিতা সুরথেনাদৌ দেবী দুর্গতিনাশিনী।
মধুমাস-সিতাষ্টম্যাং নবম্যাং বিধিপূর্ব্বকম্।।”
আদিতে সুরথ রাজা দুর্গতিনাশিনী দুর্গার অর্চ্চনা করিয়াছিলেন, চৈত্রমাসে শুক্লা অষ্টমী ও নবমী তিথিতে সর্ব্বপ্রকার শাস্ত্রবিধিমতে। সুরথরাজা ও সমাধি বৈশ্য দুই জনে একত্র হইয়া এই পূজা করিয়াছিলেন ঋষির আদেশে। ঋষি বলিয়াছিলেন—
“তামুপৈহি মহারাজ! শরণং পরমেশ্বরীম্।
আরাধিতা সৈব নৃ ণাং ভোগস্বর্গাপবর্গদা।।”
“হে মহারাজ! সেই পরমেশ্বরীর শরণ লও, যিনি আরাধিতা হইলে, মানুষকে ভোগ, স্বর্গ ও মুক্তি প্রদান করেন।” মায়ের অর্চ্চনা করিয়া সুরথ রাজা ভোগ ও স্বর্গ পাইয়াছিলেন, আর সমাধি বৈশ্য, মুক্তি লাভ করিয়াছিলেন। এই বাসন্তী পূজার কাহিনী মূল চণ্ডীতে সংক্ষেপে ও ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণে সবিস্তারে বর্ণিত আছে। শ্রীরামচন্দ্র শরৎকালে অকাল-বোধন করিয়া জগন্মাতার পূজা করিয়াছিলেন। সেই পূজাই জগতে বিশেষভাবে প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছে। শ্রীরামচন্দ্রের দুর্গোৎসবের কথা বাল্মীকির রামায়ণে বর্ণিত হয় নাই। দেবীভাগবত ও কালিকাপুরাণে শ্রীরামের পূজার কথা বিশেষভাবেই কথিত হইয়াছে। অসময়ে কুম্ভকর্ণের নিদ্রাভঙ্গ হইলে দেবতারা শ্রীরামের মঙ্গল চিন্তায় মহাভাবনায় পড়িলেন। তাঁহারা সকলে স্থির করিলেন রামের জন্য শান্তি-স্বস্তায়ন করিবেন। তাঁহারা গিয়া পদ্মযোনি ব্রহ্মার নিকট পরামর্শ চাহিলেন। ব্রহ্মা বলিলেন, আদ্যাশক্তির কৃপাদৃষ্টি ব্যতীত রাবণবধ সম্ভব নহে। কিন্তু দেবী তো এখন নিদ্রিতা। তাঁহাকে আমরা প্রবোধিত করিব।