সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি প্রচেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা। ন্যায্য অর্থ সঠিক সময়ে নাও পেতে পারেন। অর্থপ্রাপ্তির যোগ ... বিশদ
ক্রিয়াকে মা সাধারণতঃ সামান্য ও বিশেষ দুই শ্রেণীতে বিভক্ত করিয়াছেন। স্বভাবের বেগে যে ক্রিয়া হয় তাহাকে মা বিশেষ ক্রিয়া নাম দিয়াছেন এবং চেষ্টা দ্বারা যে ক্রিয়া নিষ্পন্ন হয় তাহার নাম দিয়াছেন সামান্য ক্রিয়া। সাধন ব্যাপারে অধিকাংশ মনুষ্যের পক্ষে মন ও দেহ সাধারণতঃ বিরুদ্ধ থাকে। উপনিষদ্ বলিয়াছেন, ‘‘পরাঞ্চি খানি ব্যতৃণৎ স্বয়ম্ভুঃ’’, অর্থাৎ বিধাতা ইন্দ্রিয় সকলকে বহির্মুখ করিয়া সৃষ্টি করিয়াছেন। এই জন্য অন্তর্মুখ ও বহির্মুখ দুইটি স্রোতে সংঘর্ষ উৎপন্ন হইয়া থাকে। মন ভগবৎ অভিমুখে চলিতে চহিলেও দেহ ও ইন্দ্রিয় তাহাকে সেইভাবে চলিতে দেয় না—তাহার গতিমার্গে বাধা প্রদান করে। এই বাধা অপসারণ করিবার জন্য তীব্রভাবে চেষ্টা করা আবশ্যক হয়। কিন্তু তাহা সত্ত্বেও সব সময় মা যাহাকে বিশেষ বা স্বাভাবিক ক্রিয়া বলিয়াছেন তাহা প্রাপ্ত হওয়া যায় না। দেহ মনের মত না হইলে অর্থাৎ মনের অনুরূপ গতি সম্পন্ন না হইলে ভিতরে প্রচ্ছন্নভাবে বিরোধ প্রবল থাকে বলিয়া ভগবদ্ রস ফুটিতে পায় না। পাশ্চাত্য মনোবিজ্ঞান ‘‘divided self’’ বলিয়া এই অন্তঃসংঘর্ষের বর্ণনা করিয়া থাকেন। অতএব প্রাণের গতিটি অন্তর্মুখ না হইলে অধ্যাত্ম সাধনার ফল ঠিক ঠিক করা যায় না।
চেষ্টা করিয়া কিছু করা বলিতে ‘জোর করিয়া করা’ ইহাই বুঝিতে হইবে। বস্তুতঃ করা বলিতে সর্বত্রই তাহাই; করা ও অভ্যাস স্বভাবের ধারার অন্তর্গত নহে। উহা হওয়ার ধারা নহে, ইহা স্বীকার করিতেই হইবে; কিন্তু উহারও সার্থকতা আছে। কারণ করিতে করিতে স্বভাবের গতি লাভ করা যায়। যতক্ষণ উহা না পাওয়া যায় ততক্ষণ উহার উপকারিতা হৃদয়ঙ্গম হয় না, ততক্ষণ সাধন নীরস বলিয়া প্রতীয়মান হয়। স্বভাবের ধারাতে প্রাণের গতি চালিত হইলে যেখানে থাকিলে যখন যাহা প্রকাশ হইবার তাহা তখন আপনিই হইয়া থাকে। করার পথে মনের পরিবর্তন হয় না। কিন্তু করিতে করিতে স্বভাবের ধারাতে গেলে মনের পরিবর্তন আপনি সিদ্ধ হয়। তখন মন নিজের খাদ্য পায় বলিয়া তাহার ভগবন্মুখী না হয় ততক্ষণ শরীরের খাদ্যই আহৃত হয় মাত্র। তাই ইহার ফল বাহ্য ব্যায়াম ও জগতের দিকে গতি।
প্রাণের গতির কথা পূর্বেই বলা হইয়াছে। শিক্ষক যোগ্য কি অযোগ্য তাহা নির্ভর করে তিনি শিষ্যের প্রাণের গতি বুঝিয়া তাহাকে চালাইতে পারেন কিনা তাহার উপর। উপযুক্ত শিক্ষক কোন নির্দিষ্ট নিয়মের অনুসরণ করিয়া চলেন না। যাহাকে চালাইতে হইবে, তাহার যোগ্যতা, রুচি, সংস্কার প্রভৃতি অনুসরণ করিয়া তাহাকে চালনা করেন।