সম্পত্তি সংক্রান্ত আইনি প্রচেষ্টায় সাফল্যের সম্ভাবনা। ন্যায্য অর্থ সঠিক সময়ে নাও পেতে পারেন। অর্থপ্রাপ্তির যোগ ... বিশদ
এ ঘর ছেড়ে যখন আর এক ঘরে যাবে,—আজ যাদের আপন ভাবছো, তখন তাদের সঙ্গে তোমার আর কোন সম্বন্ধ থাকবে না। অতএব কারো জন্যই নিজের মনকে ছোট করবে না। আমি, আমার —এই বোধের বেড়া যত ভাঙবে, ততই বিরাটের সঙ্গে হবে অন্তরের যোগ। মোহ বড় ভয়ঙ্কর—যে পথে গেলে সব পাওয়া যায় সেই পথ থেকে মনকে দূরে সরিয়ে রাখে। যিনি সবচেয়ে কাছে, সর্বমঙ্গলময়—তাঁকে ভাবে সবচেয়ে দূর। প্রিয়জনকে ভাবে পর, শত্রুকে ভাবে প্রিয়। ঈশ্বরকে একদিন সম্পূর্ণ আড়াল করে দাঁড়ায়। মোহ যায় নামে, সাত্ত্বিক আহারে, সদ্গ্রন্থপাঠে—মোহ যায় ধর্মবন্ধুদের ভালোবাসায়, তীর্থ ভ্রমণে। যিনি দেহ ও গৃহকে পবিত্র পরিচ্ছন্ন রাখেন—প্রতিদিন কিছুক্ষণ সদ্গ্রন্থ পাঠ করেন, তাঁর তীর্থ-ভ্রমণের প্রয়োজন হয় না।
দু’দিনের সংসারে সোনার বাতি হয়ে জ্বলবে—কাকে আপন, কাকে পর ভাববে? সকলের মধ্যেই তিনি রয়েছেন। নির্মম, নিরহংকার, ও সমদর্শী হলেই তাঁর প্রিয় হওয়া যায়। আর তাঁর প্রিয় হলে প্রাণে শান্তি, সংসারে সুখ, সমাজে শ্রদ্ধার আসন—সবই লাভ করা যায়। এ অঞ্চল বাউল বৈষ্ণবের দেশ। মানুষের জীবনযাত্রাও খুব সহজ, সরল। আধুনিক ফ্যাসানের দূষিত ছোঁওয়া থেকে এখনো এরা অনেক দূরে আছে। ভিখারী নামকীর্তন করে যাচ্ছে। আউল-বাউল কর্তাভজাদের কণ্ঠস্বর শোনা যায় মাঝে মাঝে। বিউলি-বেগুনের ডাল, আলুপোস্তর তরকারী, মাছ দিয়ে তেঁতুলের টক বা দই— অধিকাংশ ভদ্র পরিবারের এই আহার। শীতের সময় রাত ৯টার পর রাস্তা ফাঁকা, গ্রীষ্মের সময় বেলা ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শহর শান্ত, নিঝুম। এতোদিন ধরে এখানে আছি, একটি বিলাসী যুবক যুবতী চোখে পড়েনি। কলকাতা কলির কেন্দ্রভূমি। এমনকী শিলঙ্ গৌহাটির মানুষের চেয়েও অনেক অনাড়ম্বর এদের জীবন। বর্তমান ধর্মহীন শিক্ষা ও নীতিহীন রাজনীতির মৃত্যু হলেই এদের মধ্যে সনাতন ভারত-আত্মার উদার, সুন্দর প্রকাশ খুব সহজেই হবে। এদেশটাকে বড় ভালো লাগে, মনে হয়—যেন কতকালের যোগাযোগ রয়েছে অন্তরের। অন্তরে ধর্মভাবের স্ফূরণ না হলে, ক্রমেই ভেদ বিরোধ বৃদ্ধি পায়। আর ধর্মভাব উজ্জ্বল হলে হাজার জনও একসঙ্গে থাকা যায়। সর্বভূতে ভগবান আছেন, এই সত্য জানলে দূরের মানুষও নিকট হয়, পরও হয় আপন। আপনি নতুন কার্যভার গ্রহণে দ্বিধা করবেন না, এতে আপনার কল্যাণই হবে, ছাত্রদের সঙ্গে সহৃদয় ব্যবহার করবেন, বন্ধুর মতো মেলামেশা করবেন। এবং তাদের ধর্মপথে পরিচালিত করবেন। আপনি শিক্ষাগুরু—আপনার মুখ্য কর্তব্য ছাত্রদের জীবনে অমৃতের প্রতিষ্ঠা, তাদের সত্য ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করা। মহাপুরুষদের জীবনী পাঠে সবচেয়ে সহজ মন মলিনতামুক্ত হয়। সত্য, দয়া, শুচিতা, অহিংসা, পরসেবা, পিতামাতাকে ভক্তি ইত্যাদি ধর্ম। এই মহৎ বৃত্তিগুলি ভগবানের নামে ও সাত্ত্বিক আহারে বৃদ্ধি পায়। ঈশ্বরই জগতের একমাত্র কর্তা। সুখ, শান্তি, আনন্দ—এসবের দাত্য, এই সত্য মানুষ জানে না বলেই ঈশ্বর থেকে দূরে থাকে— শত ছলনার মধ্যে অনন্ত আনন্দকে অন্বেষণ করে।