একাধিক সূত্রে অর্থপ্রাপ্তি ও ঋণশোধে মানসিক ভাব মুক্তি। নিজ বুদ্ধি ও দক্ষতায় কর্মোন্নতি ও সুনাম। ... বিশদ
আরেকটা ঘটনার কথা মনে পড়ছে। খুব interesting ঘটনা। আমি আসলে ঠাকুর ও মহারাজের সম্বন্ধটা কিরকম ছিল তা দেখাতে চাইছি। ১৯১৮ সাল। আমি তখন মহারাজের সঙ্গে বলরাম-মন্দিরে রয়েছি। মহারাজ দোতলার ছোট ঘরটিতে (এখন যেখানে ঠাকুরঘর) আছেন, আমি বারান্দায় বেঞ্চে বসে রয়েছি দুপুর সাড়ে বারটা হবে। মহারাজ খেয়ে সবে একটু বিশ্রাম করতে যাবেন এমন সময় শরৎ মহারাজ একজন ব্রহ্মচারীকে দিয়ে একটি মেয়েকে পাঠিয়েছেন। মেয়েটি এসে আমাকে বললঃ “মহারাজকে প্রণাম করতে চাই।” ব্রহ্মচারী বলল, শরৎ মহারাজ মেয়েটিকে পাঠিয়েছেন। প্রথমটা আমি একটু ভুল করলাম। আমি চাইছিলাম না, তখন মহারাজকে বিরক্ত করা হোক। কারণ, মহারাজ সবে বিশ্রাম করতে গেছেন। আমি ঘরে গিয়ে মহারাজকে বললামঃ “একটি মেয়ে এসেছে, ছেলেমানুষ, আপনাকে প্রণাম করতে চায়।” কিন্তু শরৎ মহারাজ পাঠিয়েছেন তা বললাম না। মহারাজ বললেনঃ “এখন নয়। এই বুড়ো বয়সে খাওয়ার পর কথা বলতে কষ্ট হয়। মেয়েটির চারটের সময় আসতে বল।” আমি এসে মেয়েটিকে বললামঃ “দেখ, এখন তো হবে না, চারটের সময় এসো।” তখন সে কেঁদে ফেলল। কাঁদতে কাঁদতে বললঃ “আমি শুধু প্রণাম করেই চলে যাব। একটু ব্যবস্থা করে দিন।” সে এমন কাঁদতে লাগল যে, আমি তখন ভাবলাম কী করা যায় এখন? তখন আমি আবার মহারাজের কাছে গেলাম। মেয়েটিকে শরৎ মহারাজ পাঠিয়েছেন তা বললাম এবং বললাম যে, সে শুধু প্রণাম করেই চলে যাবে। শরৎ মহারাজ পাঠিয়েছেন শুনেই মহারাজ বললেনঃ “নিয়ে আয়।” শরৎ মহারাজ পাঠিয়েছেন—এটা বলা আমার প্রথমেই উচিত ছিল। যাই হোক, মেয়েটিকে মহারাজের কাছে নিয়ে গেলাম। সে মহারাজকে প্রণাম করছে—আমি পিছনে দাঁড়িয়ে আছি। প্রণাম করতে গিয়ে মেয়েটি কাঁদতে আরম্ভ করেছে। ভীষণ কাঁদছে। আমি দেখলাম, মহারাজ একদম স্থির হয়ে গেলেন। ঐভাবে অনেকক্ষণ বসে রইলেন।
মেয়েটি কেঁদেই চলেছে। মহারাজ শান্তভাবে মেয়েটিকে বললেনঃ “তুমি কাঁদছ কেন? বল—তোমার কী হয়েছে বল। তোমার কী কষ্ট বল।” মহারাজের ঘরের দেওয়ালে ঠাকুরের একখানা ছবি ছিল। মেয়েটি ঐ ছবির দিকে তাকিয়ে বললঃ “উনি আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন।” এই সময় আমি ঘর থেকে চলে এলাম। কারণ, আমার আর থাকাটা উচিত নয়, সব কথা আমার শোনা ঠিক নয়। পরে মহারাজের কাছে সব শুনেছিলাম। মেয়েটি ছিল বালবিধবা, ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হবার মাত্র দু-সপ্তাহ পরে স্বামী মারা গিয়েছিল। সেসময় বিধবাদের যন্ত্রণা ছিল ভয়ানক। স্বামী মারা যাবার একবছর পরে সে মহারাজের কাছে এসেছিল। এই একবছর সে ভগবানের কাছে ক্রমাগত প্রার্থনা করেছেঃ “প্রভু আমি নিরাশ্রয়। আমার একটা ব্যবস্থা করে দাও। আমি কি করে বাকি জীবন কাটাব? তুমি আমাকে পথ দেখাও।”
স্বামী নির্বাণানন্দের ‘দেবলোকের কথা’ থেকে