বিদ্যার্থীরা শুভ ফল লাভ করবে। মাঝে মাঝে হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় ক্ষতি হতে পারে। নতুন ... বিশদ
তোমরা যে দেহ ঘরটি পেয়েছো তার একবার বিচার করে দেখো যে সেটি প্রকৃত ‘পুরুষ’ না প্রকৃত ‘প্রকৃতি’ না নামধারী সাজানো ঘর? তোমরা জানো যে কৌরবগণ পঞ্চ পাণ্ডবদের সুন্দর একটি জতুঃগৃহ নির্মাণ করে দিয়ে তাতে বসবাস করবার জন্য পাণ্ডবদের বলেছিল। পাণ্ডবগণও ঘরটি পরীক্ষা না করে সরল বিশ্বাসে তাতে বসবাস করবার জন্যই প্রবেশ করেছিল। কিন্তু বিবেক অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ ভগবান ওই বিপদের ক্ষণে পাণ্ডবদের সামনে উপস্থিত হলেন। পাণ্ডবগণ পরমানন্দে তাদের প্রিয় সখাকে ওই সুন্দর গৃহখানি দেখিয়ে বলতে লাগলেন যে দুর্যোধন তাদের রাজ্যচ্যুত করলেও ভালবেসে অপূর্ব একটি গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছেন। কিন্তু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই আনন্দ উৎসাহে কোন প্রকার আগ্রহ না দেখিয়ে চুপ করে রইলেন এবং তৎক্ষণাৎ ওই গৃহখানি পরিত্যাগ করে যেতে বললেন। এই বাক্য শ্রবণ করে পাণ্ডবগণ বিস্মৃত ও ক্রুদ্ধ হলেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ তাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করে সেই গৃহ তখনই ত্যাগ করতে বললেন। পাণ্ডবগণ অনিচ্ছা সত্ত্বেও তাদের চির সখার অনুরোধ রক্ষা করে গৃহত্যাগ করলো এবং তোমরা জানো যে সে রাতেই কুচক্রী কৌরবদের অগ্নি সংযোগে জতুঃগৃহ ভস্ম হয়েছিল।
মানুষেরও ঠিক সেই অবস্থা। আমাদের প্রকৃত যে শরীরটি আছে, তার জরা, ব্যাধি বা কোন পরিবর্তন নেই। তার জন্ম ও মৃত্যু নেই কিন্তু আমরা সেই শরীর ভুলে এই পঞ্চভৌতিক শরীরটিকেই প্রকৃত শরীর মনে করে তাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে পড়েছি। এই পঞ্চভৌতিক শরীরের পরিবর্তন ও ধ্বংস আছে। বিবেক ভগবান মাঝে মাঝে আমাদের জানিয়ে দেন যে এই শরীরটি আমাদের প্রকৃত শরীর নয়। এতে মন মজালে দুঃখ, যন্ত্রণা, জ্বালা ছাড়া কিছুই মিলবে না।
কিন্তু আমরা জেনে বুঝেও এই স্থূলশরীরের ভোগ ছাড়তে চাই না। আমরা সকলেই সকলের অবস্থা প্রত্যক্ষ করছি, তবুও বিবেকের বাণীতে গুরুত্ব দিতে পারছি না। ফলে অজ্ঞানতা আমাদের রুদ্ধ করে রেখেছে। আমরা বলি ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। কিন্তু নিজেদের অজ্ঞানতার দোষে মানুষ তাদের শ্রেষ্ঠত্ব হারিয়ে পশু-পক্ষী ও সাধারণ জীবের মতো দৈনন্দিন জীবনের গ্লানিকে সার করে শুধু ভোগের জন্যই বাঁচতে চাইছে। কারণ পশু-পক্ষী ও জীবকুলের মধ্যেও যে নিয়ম শৃঙ্খলা ও সদ্ভাব দেখা যায় মানুষের মধ্যে আজ তারও অভাব হয়েছে। পশুপক্ষীর মতো ঘর বাঁধা, খাদ্য সংগ্রহ করা ও শেষে দেহ ত্যাগ করা—এই কি মানুষের কাজ?
শ্রীশ্রী আচার্য জ্ঞানেশ্বরদেব প্রণীত ‘জ্ঞানেশ্বরোপনিষদ্’ (৩য় খণ্ড) থেকে