পারিবারিক ঝামেলার সন্তোষজনক নিষ্পত্তি। প্রেম-প্রণয়ে শুভ। অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষে মানসিক চাপ বৃদ্ধি। প্রতিকার: আজ দই খেয়ে ... বিশদ
সাম্য ও যৌগিক সমতা
যৌগিক সমতা হইল আত্মার সমভাব, সেই সমভাব যাহার ভিত্তি হইল অখণ্ড এক আত্মার বোধ, সর্ব্বত্র ভগবানের বোধ—প্রকট ভুবনে সবকিছুর ভেদ, শ্রেণীবিভাগ ও বৈষম্য সত্ত্বেও সর্ব্বত্র অদ্বিতীয় একের দর্শন। সাম্যের যে মানসধারা, তাহা ভেদ-বিভেদ-বৈষম্যকে অগ্রাহ্য করিতে বা বিনষ্ট করিতে চেষ্টা করে, এমনভাবে কাজ করে যেন সবকিছু সমান অথবা চেষ্টা করে সবকিছুকে সমান করিয়া লইতে। রামকৃষ্ণের ভাগিনেয় হৃদয়ের মত; রামকৃষ্ণের স্পর্শ লাভ হইলেই সে চীৎকার করিয়া উঠিত,
‘‘রামকৃষ্ণ, তুমিও ব্রহ্ম, আমিও ব্রহ্ম; দুজনের মধ্যে কোন প্রভেদ নাই।’’ এইরূপ চেঁচাইত, চুপ করিত না, যতক্ষণ না রামকৃষ্ণ তাঁহার শক্তি সংহরণ করিতেন। অথবা সেই শিষ্যের মত যে মাহুতের বারণ না মানিয়া হাতীর সম্মুখে দাঁড়াইল এই বলিয়া, ‘‘আমি ব্রহ্ম’’; দাঁড়াইয়া রহিল যতক্ষণ না হস্তী তাহাকে শুন্ডদ্বারা তুলিয়া পাশে সরাইয়া দিল। যখন শিষ্য গুরুর কাছে অনুযোগ করিল তখন তিনি বলিলেন, ‘‘হাঁ, কিন্তু তুমি মাহুতব্রহ্মের কথা কেন শুনিলে না? সেই জন্যই ত হস্তীব্রহ্ম তোমাকে শুন্ড দ্বারা তুলিয়া দূরে সরাইয়া রাখিলেন, যেখানে তোমার কোন ক্ষতি হইবে না।’’ প্রকট বিশ্বে পরম সত্যের দুই ভাব রহিয়াছে, তাহার কোনটীই তুমি বাদ দিতে পার না।
মূল প্রভেদ
মূল প্রভেদ হইল এই শিক্ষাতে যে একটা সক্রিয় দিব্য সত্য আছে (অতিমানস), এবং সেই সত্য বর্ত্তমান অজ্ঞানময় জগতে অবতীর্ণ হইতে পারে, একটা নূতন ঋতিচিৎ সৃষ্টি করিয়া জীবনকে দিব্য রূপ দিতে পারে। প্রাচীন যোগসাধনাগুলি মন হইতে সোজা নিরপেক্ষ কেবল ব্রহ্মতত্ত্বে উঠিয়া যায়, সমগ্র সচল জীবনকে অজ্ঞান বা মায়া বা লীলা বলিয়া ভাবে; তাহাদের মতে তুমি যখন অচল অবিকারী দিব্য সত্যে প্রবেশ কর, তখন তুমি বিশ্বজীবনের বাহিরে চলিয়া যাও।
ঊর্দ্ধতন ও অধস্তন সত্য
আমি ত একথা বলি নাই যে অতিমানস সত্য ব্যতিরেকে অপর সব কিছু অসত্য। আমি বলিয়াছিলাম যে অতিমানসের নীচে কোথাও পূর্ণ সত্য নাই। অধিমানস ক্ষেত্রে অতিমানসের পরিপূর্ণ সুসঙ্গত সত্য নানা ভাগে বিভক্ত হইয়া যায়; নানা সত্য পরস্পরের সম্মুখীন হয়, প্রত্যেকটী নড়ে চড়ে নিজের সার্থকতার জন্য, নিজের একটা জগৎ সৃষ্টি করিবার জন্য, —বিবিধ বিভিন্ন সত্য বা সত্যের শক্তিরাজির মিলনে সংগঠিত বর্ত্তমান জগৎসমূহে প্রাধান্য-লাভের জন্য বা অপরাপর শক্তির সহিত মিলিত হইয়া কাজ করিবার জন্য। আরও অধস্তন ক্ষেত্রে ভাগ-বিভাগ আরও স্পষ্ট হয়, বিভ্রম, অসত্য, অজ্ঞান এবং পরিশেষে নিশ্চেতনা (যেমন জড়বস্তুতে) আসিয়া স্থান পায়। আমাদের এই জগৎ নিশ্চেতনা হইতে উদ্ভূত হইয়া মানস চেতনা অবধি উত্থিত হইয়াছে—মন, যাহা অজ্ঞানের যন্ত্র কিন্তু যাহা বিস্তর সীমাবন্ধন বিরোধ, বিপর্য্যয় ও প্রমাদের মধ্যে দিয়া দিব্য সত্যে পৌঁছিতে চেষ্টা করিতেছে।