পারিবারিক ঝামেলার সন্তোষজনক নিষ্পত্তি। প্রেম-প্রণয়ে শুভ। অতিরিক্ত উচ্চাভিলাষে মানসিক চাপ বৃদ্ধি। প্রতিকার: আজ দই খেয়ে ... বিশদ
কুরঙ্গ, মাতঙ্গ, পতঙ্গ, মীন ও ভৃঙ্গ—এই পাঁচ প্রাণী, শব্দ-স্পর্শ-রূপ-রস-গন্ধ এই পাঁচগুণের মধ্যে নিজ নিজ বিশেষ প্রিয় কোন একগুণে আসক্ত হইয়া মৃত্যুমুখে পতিত হয়। পাঁচগুণেরই বশীভূত মানুষের তাহা হইলে কী দুর্দশাই বা হইতে পারে?
রূপ-রসাদি-বিষয়সমূহ রাগদ্বেষাদি উৎপন্ন করার দোষে কৃষ্ণসর্পের বিষ হইতেও মারাত্মক। বিষ ভক্ষণকারীরই মাত্র মৃত্যুর কারণ হয়। কিন্তু চক্ষু দ্বারা দৃষ্ট (বা অন্য ইন্দ্রিয়দ্বারা গৃহীত) বিষয় মানুষের মৃত্যুর কারণ হইয়া থাকে।
সুদুস্ত্যজ বিষয়ভোগের আশারূপ দারুণ বন্ধন হইতে যিনি মুক্ত হইয়াছেন, তিনিই মোক্ষলাভের অধিকারী হন। কিন্তু ষড়দর্শনজ্ঞ পণ্ডিত ব্যক্তি যদি বিষয়ভোগে আকৃষ্ট থাকেন তো তাঁহার (কেবল শাস্ত্রজ্ঞানের দ্বারা) মুক্তির কোন আশা নাই।
সংসারসমুদ্রের পারে যাইতে উদ্যত, অল্পবৈরাগ্যসম্পন্ন মুক্তিকাম সাধকদিগকে ভোগাকাঙ্ক্ষারূপ কুম্ভীর গলায় ধরিয়া বেগে সাধনার পথ হইতে ফিরাইয়া মধ্যপথে ডুবাইয়া মারে।
যে দৃঢ়-বৈরাগ্যবান্ পুরুষ, তীব্র বৈরাগ্যরূপ তরবারির আঘাতে বিষয়রূপী কুম্ভীরকে বিনাশ করেন, তিনিই বিষয়ভোগেচ্ছা হইতে উৎপন্ন বাধাসমূহ অতিক্রম করিয়া মোক্ষলাভের অধিকারী হন।
যে নির্বোধ ব্যক্তি দুঃখদায়ক বিষয়সমূহের ভোগে লিপ্ত থাকে, মৃত্যু তাহার পশ্চাৎ পশ্চাৎ ধাবিত হইতে থাকে। কিন্তু যে সাধক হিতকারী সদ্গুরুর উপদেশ গ্রহণ করিয়া নিজের বিচারসহায়ে অগ্রসর হয়, তাহার এই জীবনেই সাফল্যলাভ অর্থাৎ জীবন্মুক্তিপ্রাপ্তি ঘটিয়া থাকে। ইহা সত্য বলিয়া বিশ্বাস কর। যদি তোমার মুক্তিলাভের আকাঙ্ক্ষা থাকে, তাহা হইলে বিষয়সমূহকে বিষের ন্যায় দূরে পরিহার কর। আর আদরের সহিত অমৃততুল্য উপকারী ভাবিয়া সন্তোষ, দয়া, ক্ষমা, সরলতা, শম ও দম— এই সকল সদ্গুণের সর্বদা অনুশীলন কর।
অনাদি-অবিদ্যা হইতে উৎপন্ন ‘দেহাদিতে আমি-আমার-বোধরূপ’ যে অজ্ঞানবন্ধন, তাহা হইতে মুক্তিলাভের জন্য সাধনা প্রতিক্ষণে অবশ্য করণীয়। কিন্তু তাহা না করিয়া যে ব্যক্তি—এই-যে দেহ যাহাতে পরের অধিকার (অর্থাৎ মরণের পর যাহা কুকুর-শৃগালের ভক্ষ্য)—সেই দেহের পালনপোষণে আসক্ত থাকে, সেই ব্যক্তি দেহপোষণের দ্বারা আত্মস্বরূপ বিস্মৃত থাকে (ফলে আত্মঘাতীর সমান হীনদশা প্রাপ্ত হয়)।
শরীরের পালন-পোষণে ব্যাপৃত থাকিয়া যে ব্যক্তি স্ব-স্বরূপ উপলব্ধি করার কামনা করে, সে কাষ্ঠবুদ্ধিতে কুমীরকে ধরিয়া নদী পার হইতে ইচ্ছা করে। দেহ-ইন্দ্রিয় প্রভৃতিকে ‘আমি-আমার’ জ্ঞান করিয়া সে-সকলের তৃপ্তিসাধনে ব্যাপৃত থাকা মুমুক্ষু ব্যক্তির পক্ষে মরণের সমান। (কেননা, এইরূপ আসক্তির ফলে জন্মমৃত্যু-প্রবাহ চলিতেই থাকে।) যিনি মোহকে জয় করিয়াছেন—দেহাদিতে আসক্তি সর্বতোভাবে ত্যাগ করিতে পারিয়াছেন—তিনি মুক্তিলাভের অধিকারী হন।
নিজের দেহে এবং স্ত্রী-পুত্র-গৃহাদিতে আসক্তিরূপ মৃত্যুর কারণকে ত্যাগ কর। এই মোহকে জয় করিয়া মুনিগণ সর্বব্যাপী পরমাত্মার স্বরূপ প্রাপ্ত হন।
ত্বক্ মাংস রক্ত স্নায়ু মেদ মজ্জা ও অস্থির সমবায়ে গঠিত এবং মলমূত্রে পরিপূর্ণ এই স্থূল শরীর ঘৃণার বস্তু।
পঞ্চীকৃত স্থূল ভূতসমূহের সমবায়ে জীবের পূর্বকর্মানুসারে তাহার ভোগের স্থান এই স্থুল দেহ উৎপন্ন হয়। এই দেহে অভিমান করিয়া জীব স্থূল পদার্থসমূহ ভোগ করে। এই দেহে অভিমান জীবের আগ্রত অবস্থা।