জলপথ পরিবহণ কর্মে বিশেষ শুভ। হস্তশিল্পী, হিসাব-শাস্ত্রবিদ প্রমুখের কর্মে উন্নতি ও সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
তালিকা তিনটি থেকে পরিষ্কার যে, উন্নয়নের জন্য কেন্দ্র, রাজ্য উভয়েরই বিপুল অর্থের প্রয়োজন। তবে রাজস্ব সংগ্রহের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের ভূমিকা নগণ্য—রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিই হল সকল আয়-সম্পদের উৎস। রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি থেকেই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কর হিসেবে যাবতীয় রাজস্ব কেন্দ্র সংগ্রহ করে। বিপুল ব্যয়ভার সামলানোর জন্য, এরপর সেই অর্থের কিছুটা কেন্দ্রের রেখে দেওয়ার কথা এবং বাকিটার সুষম বণ্টন হওয়ার কথা সাংবিধানিক ফর্মুলা মেনে। সমস্যাটা ঠিক এখানেই। আয়কর, জিএসটি এবং অন্যান্য সূত্রে কেন্দ্র যে হাজার হাজার কোটি টাকা রাজ্যগুলি থেকে তুলে নিয়ে যায়, তার দরুন রাজ্যগুলির ন্যায্য প্রাপ্য মেটাতে তীব্র অনীহা প্রকাশ করে দিল্লি। নিজের প্রাপ্য পেতে তখন রাজ্যগুলি বাধ্য হয় দিল্লির কাছে দরবার করতে। প্রাপ্য মেটানো দূর, কেন্দ্র বহু ক্ষেত্রে রাজ্যের দাবি, অনুরোধ, উপরোধে সাড়াই দেয় না। দিল্লিওয়ালাদের কারবার দেখে জমিদারি জমানার কথা মনে পড়ে যেতে পারে। ইচ্ছে হলে দেব, মর্জি না-হলে দেব না—কেন্দ্রের হাবভাব পরিষ্কার এটাই। এই ব্যাধি অবশ্য নতুন নয়, বিধান রায়ের আমল থেকেই বাংলা এই জিনিস দেখে আসছে। অত্যন্ত ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বন্ধু হিসেবে বিধানচন্দ্র অবশ্য বাংলার জন্য অনেক কিছু বাগিয়ে আনতে পেরেছিলেন। নেহরু জমানার ওই ‘দীর্ঘদেহী’ মুখ্যমন্ত্রীর আরও মস্ত সুবিধা ছিল, তিনিও কংগ্রেসি।
কিন্তু পরবর্তী পাঁচ-ছয় দশকের বেশিরভাগ সময় বাংলার শাসনকর্তারা অকংগ্রেসি। আরও সমস্যা হল, কেন্দ্রীয় ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতছাড়া হলেও কেন্দ্র আর বাংলার সরকার এক পার্টি বা জোটের হয়নি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। তার ফলে পশ্চিমবঙ্গ বারবারই রাজনৈতিক সংকীর্ণতার বলি হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির দীর্ঘ জমানার তো তুলনাই নেই। তাঁর আমলে বাংলা চিহ্নিত হয়েছে ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’ রাজ্য নামে। অর্থাৎ বাংলার জন্য কেন্দ্রীয় বঞ্চনাই দস্তুর। যেমন এই মুহূর্তে নানা খাতে, প্রকল্পে বাংলার প্রাপ্য অর্থ কেন্দ্র আটকে রেখেছে দিল্লি। তার জন্য অজুহাতেরও অন্ত নেই! নবান্নের হিসেবে, কেন্দ্রের কাছে বাংলার ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকার ন্যায্য প্রাপ্য আটকে রয়েছে। তবে মোদি-শাহের সাধের ‘ডাবল ইঞ্জিন’ রাজ্যগুলিও আর ভালো নেই। বিজেপি/এনডিএ রাজ্য সরকারগুলিকেও শুকিয়ে মারছে দিল্লি। তাই করের ভাগবৃদ্ধির দাবি তুলেছে বাংলার সঙ্গে অন্যরাও। সম্প্রতি কেরল, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও তেলেঙ্গানা করের ভাগের অন্তত ৫০ শতাংশ প্রদানের দাবিতে সরব হয়েছে। তাদের অর্থমন্ত্রীরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই দাবি তাঁরা জানাবেন অর্থ কমিশনের কাছে। রিপোর্টে সেমতোই সুপারিশ করতে হবে অর্থ কমিশনকে। পিছিয়ে নেই বিজেপি-শাসিত ওড়িশা, গুজরাত, হরিয়ানাও। অর্থাৎ দিল্লির বিরুদ্ধে বঞ্চনার সুর ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সরকারগুলির কণ্ঠেও। তারাও পরিষ্কার করে দিয়েছে, এই অন্যায় বঞ্চনা নিয়ে কেউই আর ‘সংসার’ চালাতে পারছে না। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণই যে গণতান্ত্রিক ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রধান অভিমুখ, এই সত্য অস্বীকার করে ভারত কখনোই শক্তিশালী হবে না। দেশের ঐক্য ও সংহতির সৌন্দর্যের জাদুকাঠি অন্য কিছু নয়।