জলপথ পরিবহণ কর্মে বিশেষ শুভ। হস্তশিল্পী, হিসাব-শাস্ত্রবিদ প্রমুখের কর্মে উন্নতি ও সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
এই ব্যর্থতা টাটকা সঙ্গী, তবু ‘শ্বাস’ থাকতে ‘আশ’ ছাড়তে নারাজ বিজেপি। অতএব, হাতেগরম প্রয়াগ কুম্ভমেলা থাকতে তাকে ভোট-রাজনীতির হাতিয়ার না করে পারে কি গেরুয়া শিবির? মেলার শুরু ১৩ জানুয়ারি, চলবে টানা ৪৫ দিন, শিবরাত্রি অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। মকর সংক্রান্তি থেকে শিবরাত্রির মধ্যে গিয়েছে ২৯ জানুয়ারি মৌনী অমাবস্যা। এরপর রয়েছে ৩ ফেব্রুয়ারি বসন্ত পঞ্চমী এবং ১২ ফেব্রুয়ারি মাঘী পূর্ণিমা। অর্থাৎ একাধিক অমৃতস্নানযোগ উপলক্ষ্যে গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতীর ত্রিবেণীসঙ্গমে দেশ-বিদেশের কোটি কোটি পুণ্যার্থীর সমাগম হওয়াটাই স্বাভাবিক। এ কোনও নতুন প্রবণতা নয়, স্মরণাতীতকালের ঐতিহ্য। তবু এবারের কুম্ভমেলাকে এক নবরূপ দিতে মরিয়া মোদি বাহিনী। তার উদ্দেশ্য যে পুরোটাই রাজনৈতিক তা এক সহজ অনুমান। মোদি এতদিন নিজেকে ‘বিশ্বগুরু’ প্রজেক্ট করেছেন। সেই ‘ভারতেশ্বর’ যদি এবারের কুম্ভে ‘অলৌকিক’ না হয়ে উঠতে পারেন তবে তো গেরুয়া শিবিরের যাবতীয় কসরতের ষোলো আনাই মাটি! তাই মেলা শুরুর আগে থেকেই আরম্ভ হয়েছিল মহাকুম্ভের ‘সাফল্য’ তুলে ধরার ঢক্কানিনাদ। এই ‘সাফল্যে’র নেপথ্যে একমাত্র ‘সত্য’ মোদি-শাহ-যোগীর ম্যাজিকেও সিলমোহর দিতে তৎপর ছিল স্বার্থান্বেষী মহল। এই ‘ত্রিরত্ন’-এর ভিতরে আবার নরেন্দ্র মোদি যে একেবারে আলাদা, গোটাটাই যে তাঁর ভাবনারই প্রতিচ্ছবি, সেই বার্তাও রটিয়ে দেওয়া হল সংগঠিতভাবে এবং সুকৌশলে। ভারতের আধ্যাত্মিকতাকে এইভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি অতীতের কোনও নেতাই, এবার এমন প্রচারের যে আয়োজন হয়েছিল তারও কোনও নজির নেই এই ভূভারতে!
মিডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে যোগী বলেন, ‘ভারতের ঐতিহ্যের যথাযথ সম্মান পাওয়া উচিত। মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসকে সরকার যে সম্মান করে এটা তারই অনন্য উদাহরণ। প্রয়াগরাজে মহাকুম্ভের অনুষ্ঠানে গোটা বিশ্ব যা দেখছে তা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাবনারই প্রতিচ্ছবি।’ ইউপির মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘এই মহাকুম্ভ আয়োজনের মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশ তথা গোটা দেশের কাছে যে ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দিতে পেরেছি তার জন্য গর্বিত আমরা।’ ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ সালের প্রথম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে মহাকুম্ভের ভূয়সী স্তুতি শোনা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীরও কণ্ঠে। তাঁর কথায়, এই মেগা ইভেন্ট ‘অবিস্মরণীয়’। জনসমাগমের যে ‘অকল্পনীয় দৃশ্য’ ফুটে উঠছে তাতে পরিপূর্ণ সাম্য এবং সম্প্রীতির এক ‘অসাধারণ’ সঙ্গম হয়ে উঠেছে প্রয়াগরাজ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এবার, বিপুল সংখ্যক যুবক কুম্ভে অংশগ্রহণ করছেন। তাঁরা যখন এই ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হন, তখন তার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎই নিশ্চিত হয়। বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় কুম্ভ সমস্ত ভারতীয়ের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত!’ এতক্ষণ পর্যন্ত যে বর্ণনা পাওয়া গেল, তা নিতান্তই প্রচারসর্বস্ব, শুধু ‘আমাকে দেখো’—তার ভিতরে কোটি কোটি মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণের, সবকিছু সুশৃঙ্খলভাবে সাঙ্গ করার কোনও বার্তা নেই। প্রধানমনন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীসহ হাতেগোনা কয়েকজন ভিভিআইপিকে কেন্দ্র করে নানাবিধ আদিখ্যেতাও সামনে এসেছে। আর এসবের নীচেই চাপা পড়ে গিয়েছে সাধারণ ভক্তদের নিরাপত্তা। সরকারি প্রশাসনের এই অদূরদর্শিতা, ব্যর্থতা কত বড় হতে পারে সেটাই দেখিয়ে দিল ত্রিবেণীসঙ্গমে মৃত্যুর মিছিল, অগণিত মানুষের হাহাকার, আর খবর চেপে দেওয়ার দুর্মর চেষ্টা। ‘মহাকুম্ভ’ যাদের কারণে ‘মহাবিপর্যয়’ হয়ে উঠল দেশ তাদের কাঠগড়ায় দেখতে চায়।