জলপথ পরিবহণ কর্মে বিশেষ শুভ। হস্তশিল্পী, হিসাব-শাস্ত্রবিদ প্রমুখের কর্মে উন্নতি ও সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
মোদিজি মাত্র দুটি দেশকেই তাঁর প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বী মানেন—আমেরিকা এবং চীন। বৃদ্ধির নিম্নহার নিয়েও গতবছর জিডিপিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যোগ হয়েছে ৭৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে চীনের ক্ষেত্রে তার পরিমাণ ৮৯৫ বিলিয়ন ইউএসডি। আর ওই সময়কালে ভারতের ‘কনট্রিবিউশন’ কত? মাত্র ২৫৬ বিলিয়ন ইউএসডি! নমিনাল জিডিপির হিসেবে পৃথিবীর ‘টপ টেন’ দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত। ৪.২৭ ট্রিলিয়ন ডলারের ‘মালিক’ ভারতের স্থান পঞ্চম। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের নমিনাল জিডিপির অঙ্ক কত? যথাক্রমে ৩০.৩৪ এবং ১৯.৫৩ ট্রিলিয়ন ডলার! অর্থনীতির এমন আশমান জমিন ফারাক নিয়ে ভারত কোন কাণ্ডজ্ঞানে আমেরিকা ও চীনকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে! বৃদ্ধির এই গতি এবং প্রবণতা যে দেশের, সেই দেশ রাত পোহালে ‘পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম’ অর্থনীতির সার্টিফিকেট পেলেও সেটি কোনোভাবেই ‘মজবুত’ বলে অন্তত আন্তর্জাতিক মহল ভাববে না। কারণ ভারতের মোট জিডিপিকে তার ভয়াবহ জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে যে ভাগফল স্লেটে ফুটে উঠবে, তা সমুদ্র থেকে এক ঘটি জলেও মতোই দেখাবে। মোদি জমানায় সাফল্য বলতে একটাই— ভারতই পৃথিবীর সর্বাধিক জনসংখ্যার দেশ। কিছু আগে চীন ওই জায়গায় ছিল। ভারতের পরে ‘স্বাধীন’ হয়েও চীন এক আশ্চর্য অর্থনীতি এখন! কীভাবে? দেশের বিপুল জনসংখ্যাকে তারা দ্রুত ‘মানবসম্পদ’-এ রূপান্তরিত করতে পেরেছে। কী লাগে এজন্য? প্রথমেই দূর করতে হয় সকলের খিদের জ্বালা। অতঃপর তাদের দিতে হয় উন্নত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ। শিক্ষা মানে শুধু বই পড়া নয়, জীবনকে সবদিক থেকে বিকশিত করার মতো বৈচিত্র্য আনা তাতে জরুরি। তার মধ্যে অবশ্যই রয়েছে খেলাধুলো। সকলের জন্য সুস্বাস্থ্য, উপযুক্ত বস্ত্র, স্বাস্থ্যকর গৃহের ব্যবস্থা করাও রাষ্ট্রের কর্তব্য। উপযুক্ত সামাজিক সুরক্ষা প্রদানও কল্যাণকামী রাষ্ট্রের কাছে অগ্রাধিকার। মনে রাখা দরকার, রাজনীতি এবং প্রশাসনে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ছাড়া এই কাজগুলির কোনোটাই করা সম্ভব নয়। রাজনীতিকে দুর্বৃত্তায়ন ও অর্থায়নের ব্যাধিমুক্ত করা গেলেই প্রশাসনে পূর্ণ স্বচ্ছতা আনা সম্ভব। চীনের অর্থনীতি মার্কসবাদকে কতখানি জলাঞ্জলি দিয়েছে তা নিয়ে লম্বা বিতর্ক চলতেই পারে কিন্তু উপর্যুক্ত প্রেক্ষিতগুলিতে তারা ভারতকে প্রতিদিন বলে বলে দশ গোল দেয়। ভারতে উচ্চশিক্ষা এবং গবেষণার কিছু ব্যবস্থা নিশ্চয় আছে। কিন্তু এখানকার উৎপাদন ব্যবস্থা ও পরিকাঠামো এতটাই দুর্বল যে তৈরি মানবসম্পদের একটি বড় এদেশে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার বলে ‘আবিষ্কার’ করে। ফলে ‘ব্রেন ড্রেন’ চলেছে অবাধে। ভারতের মেধা মজবুত করে চলেছে আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশ ও অর্থনীতিগুলিকে। প্রোমোটাররাজ এমন ম্যাজিক আয়ত্ত করেছে যে, আমাদের দেশে প্রতিদিন কোনও না কোনও খেলার মাঠ উধাও হয়ে যায়! অন্যদিকে চীন তাদের প্রতিটি মহল্লায় গড়ে তুলছে আন্তর্জাতিক মানের ক্রীড়া পরিকাঠামো, একেবারে শিল্প-বাণিজ্যের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। তার প্রত্যক্ষ ফলাফল আমরা দেখতে পাই এশিয়ান গেমস থেকে ওলিম্পিক গেমসগুলিতে।
ভারত বস্তুত পৃথিবীর সর্বাধিক গরিব, ক্ষুধার্ত, অপুষ্টির শিকার, ধর্মান্ধ এবং অশিক্ষিত মানুষের দেশ হিসেবেই নিন্দিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলে। ‘বৃহত্তম গণতন্ত্র’ হিসেবে আমাদের আত্মগরিমা থাকতেই পারে, কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল তাকে ‘ইলেক্টোরাল অটোক্রেসি’র চেয়ে উন্নত কিছু মানে না। সব মিলিয়ে ভারত তার সর্ববৃহৎ জনসংখ্যাকে ‘মানবসম্পদ’ নয় বহুলাংশে ‘আপদ’ করে রেখেছে। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমরা কী করছি? প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নত করতে পারছি না। একাধিক পুরনো বন্ধু দেশও আজ বৈরীভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে। এরপর দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে কোন প্রভাব খাটবে ভারতের? নরেন্দ্র মোদি নিজেকে ‘বিশ্বগুরু’ ভাবতেই পারেন, আন্তর্জাতিক মহল তাতে মুখ টিপে‘ গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল’ই বলে। তাই ফোর্বস-এর প্রভাবশালী রাষ্ট্রের তালিকায় ভারতের স্থান দ্বাদশ নিয়ে কোনও সচেতন নাগরিকই বিস্মিত নন।