জলপথ পরিবহণ কর্মে বিশেষ শুভ। হস্তশিল্পী, হিসাব-শাস্ত্রবিদ প্রমুখের কর্মে উন্নতি ও সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
স্বাধীনতার অষ্টম দশকে পৌঁছেও বেকারত্বই সবচেয়ে বড় সমস্যা। বিগত সাড়ে চার দশকের সর্বাধিক বেকারত্বের অভিশাপ ভারতকে স্পর্শ করেছিল মোদি জমানার প্রথম পাঁচ বছরে। সিএমআইই’র হিসেবে, গত জুন মাসে দেশে সার্বিক বেকারত্বের হার ৯.২ শতাংশে পৌঁছয়। মাধ্যমিক পাশ এবং তার ঊর্ধ্বের শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্ন তরুণ-তরুণীদের মধ্যেই বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি। এটি হ্রাসের কোনও লক্ষণ নেই। নরেন্দ্র মোদি দেশের দায়িত্ব পাওয়ার আগে যুব শ্রেণির এই সমস্যাটিকেই ‘ক্যাশ’ করেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, দেশবাসী ‘জনবিরোধী’ জমানার পতন ঘটালে বিজেপি সরকার বছরে ২ কোটি হারে চাকরি দেবে। নির্বাচনী প্রচারের ময়দানে মোদিকে আক্ষেপ করতে শোনা গিয়েছিল, আজ যাঁরা বেকার, চাকরি দেওয়া গেলে তাঁরাই হয়ে উঠবেন দেশের সম্পদ। দেশ দ্রুত এগিয়ে যাবে তাঁদেরই মাধ্যমে। রাষ্ট্র দীর্ঘদিনেও এই সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার না-করায় নেহরু-গান্ধী পরিবারকে দায়ী করেন মোদি। দেশবাসী মোদির কথা সেদিন বিশ্বাস করেছিল। তাঁর উপর তারা আস্থা রেখেছে উপর্যুপরি তিনবার। কিন্তু বিনিময়ে কী পেয়েছে দেশের উজ্জ্বল যুবসমাজ? বছরে ২ কোটি কেন, ২ লক্ষ চাকরিও দিল্লির মাতব্বররা দেননি। করোনাকালে লক্ষ লক্ষ মানুষ চাকরি এবং অন্যভাবে রুটিরুজি হারিয়েছে। করোনা অতীত হওয়ার পরেও সকলে কাজ ফিরে পায়নি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি স্বীকার করতে হয়েছে পরিযায়ী শ্রমিক এবং মহিলাদের। স্বভাবতই মোহভঙ্গ হয়েছে মানুষের। এর টাটকা প্রমাণ মিলেছে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে। ক্ষমতা ফিরে পেলেও দলকে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ করতে ব্যর্থ হয়েছেন মোদি। জোট সরকার চলছে নীতীশ কুমার আর চন্দ্রবাবু নাইডুর দয়ায়। এই ধাক্কাতেই সংবিৎ ফিরিয়েছে মোদি অ্যান্ড কোং-এর। পিঠ বাঁচাতে মোদি সরকার ২ কোটি ৯০ লক্ষ কর্মসংস্থানের নয়া প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে।
কিন্তু তাতেও যে যুব সমাজের আস্থা ফেরেনি, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে সংসদে পেশ করা কেন্দ্রের পরিসংখ্যানেই। পিএম-ইন্টার্নশিপ স্কিমের ‘অফার’ প্রত্যাখান করেছেন ৩২,৭২৫ জন! ‘অফার’ প্রত্যাখ্যানের ঘটনাগুলি ঘটেছে মূলত ‘ডাবল ইঞ্জিন’ রাজ্যগুলিতেই—উত্তরপ্রদেশে ৪,২১৯ জন, হরিয়ানায় ৩,০৮৯, গুজরাতে ২,১৮৬ এবং মধ্যপ্রদেশে ২,৮৫৯ জন। ২০২৪ বাজেটে পিএম-ইন্টার্নশিপ স্কিম ঘোষণা করা হয়। বলা হয়েছিল যে, পাঁচ বছরে দেশের ১ কোটি যুবক ৫০০টি সংস্থায় প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন। একবছরের ইন্টার্নশিপে প্রতিমাসে ৫০০০ টাকা ভাতা দেওয়া হবে। শর্ত কী? শিক্ষিত আবেদনকারীরা হবেন ২১-২৪ বছর বয়সি। অর্থাৎ, দেশের যুবসমাজই এই কর্মসূচির ভরকেন্দ্র। এই পাইলট প্রজেক্টের প্রথম পর্বে প্রায় ২ লক্ষ আবেদন জমা পড়ে। তাঁদের মধ্যে ৬০,৮৬৬ জনকে ‘অফার’ দেওয়া হয়। কিন্তু অর্ধেকের বেশি আবেদনকারী তা প্রত্যাখ্যানই করেছেন। পরিষ্কার যে, নতুন প্রজন্মের বেশিরভাগই সরকারের এই কৌশলী কর্মসংস্থান উদ্যোগে আস্থা রাখতে পারেননি। তাঁদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সংগত কারণ এটাই। পাইলট প্রজেক্টের দ্বিতীয় পর্বও শুরু হয়েছে সম্প্রতি। কিন্তু কিছু ছেলেমেয়েকে ‘এক্সপোজার’-এর ললিপপ দেখিয়ে কোটি কোটি বেকারের চাকরি বা কর্মসংস্থানের সমস্যা মিটবে না। তার জন্য জরুরি আন্তরিক উদ্যোগ। সবার আগে দূর করতে হবে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি এবং রকমারি ভেদভাবনা ও বৈষম্য। এই জিনিস কি গেরুয়া সংস্কৃতির অঙ্গ আদৌ?