জলপথ পরিবহণ কর্মে বিশেষ শুভ। হস্তশিল্পী, হিসাব-শাস্ত্রবিদ প্রমুখের কর্মে উন্নতি ও সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
২০২৫ সালের বাজেট ‘কার্যকর’ হওয়ার আগে পর্যন্ত ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত যাদের বার্ষিক আয় ছিল, তাদের কোনও কর দিতে হতো না। ৭ লক্ষ টাকা আয় মানে মাসিক মাইনে হতে হবে ৫০ হাজারের একটু বেশি। দেশের কত জন এই বেতন পায়? ফলে ৭ লক্ষ টাকার নীচে যে-শ্রেণির কর্মীরা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই বাজেট নতুন কিছু দিতে পারেনি। ১২ লক্ষ তো অনেক দূরের কথা। অর্থাৎ, দেশের উপরের ৫০ শতাংশ মানুষের জন্য কেন্দ্রের পরিকল্পনা থাকলেও, দেখা গেল– নীচের ৫০ শতাংশর জন্য কোনও ভাবনা নেই। এই ট্যাক্স রিজিমে আন্ডারপ্রিভিলেজড শ্রেণির নতুন প্রজন্মের সিংহভাগই ঢুকতে পারবে না। এতে ক্ষতি দেশের ভবিষ্যতেরই। এত দিন জোগানের দিকে সরকারের নজর ছিল, এবার চাহিদার দিকে জোর দেওয়া হচ্ছে। সরকারের ভাবনা ছিল, যদি মধ্যবিত্তদের কিছু বাড়তি টাকা দেওয়া যায়, তাহলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে, তারা আর-একটু খরচ করবে, ফলে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। এই কর্মযজ্ঞ থেকে কিন্তু দেশের ৫০ শতাংশ মানুষ বঞ্চিত থেকে গেল। এবার এর ফলে যে-ইনফ্লেশন হবে, অর্থাৎ মূল্যবৃদ্ধি হবে, সেখানে এই ৫০ শতাংশের অবস্থা যে আরও করুণ হবে— সন্দেহ নেই।
কর ছাড়ে সত্যিকারের লাভবান হয়েছে কারা? তুলনামূলকভাবে সম্পদশালীরা। কিন্তু মনে রাখতে হবে তুলনামূলকভাবে বেশি আয়ের মানুষকে কর ছাড়ের সুযোগ করে দিয়ে সরকারের রাজস্ব আয় সঙ্কুচিত করা হয়েছে। আর তার পরিণতিতে অন্যান্য সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দ কমে গিয়েছে। উচ্চ মধ্যবিত্তের পকেট ভরালেও ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে পারলেন না নির্মলা। দেশের বাণিজ্য নিয়ে সে ভাবে কোনও চমক বা বড় ঘোষণা নেই এই বাজেটে। বড় শিল্পের জন্যে একটিও বাক্য খরচ করেননি অর্থমন্ত্রী। অর্থনৈতিক সমীক্ষায় সরকারই স্বীকার করেছে, গত পাঁচ বছরে মানুষের আয় বা মজুরি বাড়েনি। অথচ, কর্পোরেট মুনাফা অনেক বেড়ে গিয়েছে। যে হারে কর্পোরেট তাদের মুনাফা বাড়িয়েছে, তার সামান্য অংশ শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধিতে ব্যয় করেনি। আয় ও সম্পদ বৈষম্য বৃদ্ধির পিছনে এটাও একটা বড় কারণ। মানুষের আয় বা মজুরি না বাড়ায় এবং পাশাপাশি উচ্চ মূল্যবৃদ্ধির ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গিয়েছে। বাজারে পণ্য ও পরিষেবার চাহিদা হ্রাস তারই ফল। ফলে অর্থনীতির গতি শ্লথ হয়ে গিয়েছে। বৃদ্ধির হার কমে গিয়েছে। সরকারি পূর্বাভাসই বলছে, চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৬.৪ শতাংশে আটকে থাকবে, গত চার বছরে যা সর্বনিম্ন। মূল্যবৃদ্ধির জেরেও সাধারণ মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। মানুষের আয় সে ভাবে বাড়েনি। সার্বিক ভাবে মূল্যবৃদ্ধির হার কমলেও খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবায় খরচ মাত্রাছাড়া। সেই সমস্যার সমাধানের কোনও ইঙ্গিত মেলেনি নির্মলার কথায়। উল্টে বেশিরভাগ মানুষকে বঞ্চিত করে মধ্যবিত্ত আখ্যা দিয়ে অতি অল্প সংখ্যক মানুষকে কর ছাড় দিয়ে বিপুল প্রচার চালানো হচ্ছে। এটা দরিদ্র ও নিন্ম মধ্যবিত্তের সঙ্গে প্রতারণা ছাড়া আর কী?