জলপথ পরিবহণ কর্মে বিশেষ শুভ। হস্তশিল্পী, হিসাব-শাস্ত্রবিদ প্রমুখের কর্মে উন্নতি ও সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
তবে সেই প্রশ্ন মুলতুবি রেখে হাততালি কুড়নোর অসুখ যে সারবার নয়, তা ফের বোঝা গেল স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কারবারে। শ্রোতার আসনে সারা দেশের পড়ুয়ারা। পরীক্ষা প্রস্তুতির নানা বিষয়ে অনুষ্ঠিত হয় হাল্কা চালের কয়েক ঘণ্টার অনুষ্ঠান। পোশাকি নাম ‘পরীক্ষা পে চর্চা’। পূর্বনির্দিষ্ট কিছু পড়ুয়ার প্রশ্নের জবাবও দেন প্রধানমন্ত্রী। একটিমাত্র বাৎসরিক অনুষ্ঠান। গত তিনবছরে এমন অনুষ্ঠান আয়োজনে মোদি সরকার খরচ করেছে ৬২ কোটি টাকা! আর এমন অনুষ্ঠানে অফলাইন বা অনলাইনে যে পড়ুয়ারা হাজির থাকে তাদের কাছে পৌঁছয় মোদির মুখাবয়ব সংবলিত একটি শংসাপত্র। সেটি মুদ্রণের বার্ষিক ব্যয় কত? কোটি টাকা! দিল্লির বুকে এই অনুষ্ঠান প্রথমবার হয় ২০১৮ সালে। পরবর্তী ছ’বছরে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৭৮ কোটি ৮৩ লক্ষ টাকা। তার মধ্যে গত তিন বছরে খরচের পরিমাণ ৬২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। তথ্যের অধিকার আইনে এমন তথ্য ফাঁস হতেই উঠেছে সমালোচনার ঝড়। লোক দেখানো অনুষ্ঠানের নামে এহেন খয়রাতি কেন? সকলের প্রশ্ন এটাই। স্কুল থেকে গবেষণা স্তর পর্যন্ত স্কলারশিপ প্রদান বন্ধ রেখে এর কী মানে? শিক্ষাক্ষেত্রে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধির আগ্রহ চোখেই পড়ে না। অথচ শিক্ষাকে নাকি এই পোড়ার দেশে আইনি অধিকার মেনে নেওয়া হয়েছে। অথচ বহু স্কুলে ন্যূনতম পরিকাঠামোই নেই। বুনিয়াদি শিক্ষার পরিকাঠামো কী সাংঘাতিক খারাপ তা টের পাওয়া গিয়েছিল করোনাকালের দু’বছরে। শিক্ষাবিদদের একাংশের মতে, সরকারের অবহেলায় সেইসময় শিক্ষাক্ষেত্রের যে অবনমন ঘটেছে তা এক দশকেও পূরণ হওয়া কঠিন। এই পরিস্থিতিতে ‘পরীক্ষা পে চর্চা’র মতো বিলাসবহুল আয়োজনের একটাই অর্থ দাঁড়ায়, সুসজ্জিত প্যান্ডেলের ভিতরে নিমন্ত্রণ করে ডেকে এনে অভ্যাগতদের খালি মুখে বিদায় করে দেওয়া। মোদির ‘গতে বাঁধা আত্মপ্রচারমূলক’ এই অনুষ্ঠানের পিছনে টাকা না ঢেলে, শিক্ষার প্রকৃত উন্নতি নিয়েই সরকারের আন্তরিভাবে ভাবা উচিত। প্রাথমিক, মাধ্যমিক থেকে উচ্চশিক্ষা সর্বত্র পরিকাঠামোর সময়োপযোগী পুনর্নির্মাণ জরুরি। বিশেষ করে জোর দিতে হবে মেধাভিত্তিক স্কলারশিপ প্রদানের উপর। তার মধ্যে আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবারের ছেলেমেয়েদেরই অগ্রাধিকার প্রাপ্য।
সারা দুনিয়া জানে, অগ্রগতি বা উন্নয়নের সবচেয়ে বড় হাতিয়ারের নাম শিক্ষা। শিক্ষার চেতনাই বাঁচার বাকি রাস্তাগুলি খুলে দেয়। বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম প্রয়োজন অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান। এই প্রয়োজনগুলিও মেটাতে সুশিক্ষা জরুরি। আমরা সমাজবদ্ধ জীব এবং পরিবার-এ বিশ্বাস রাখি। পরিবারের প্রয়োজন মেটাবার জন্য দরকার নিয়মিত আয়-উপার্জন। পরিবার প্রতিপালনের জন্য পর্যাপ্ত উপার্জন তার পক্ষেই করা সম্ভব যে সুস্থ সবল। নিজে সুস্থ সবল থেকে পরিবারের সদস্যদেরও তেমন রাখতে দরকার ন্যূনতম শিক্ষা। প্রকৃত শিক্ষা মানুষকে সুস্থভাবে বাঁচার ব্যবস্থা করে। সুশিক্ষা পেলেই জানা সম্ভব, কোন ধরনের খাদ্য স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর। অপুষ্টির অভিশাপ থেকে মুক্ত থাকতে এই শিক্ষা দরকার। এটি কুশিক্ষা এবং কুসংস্কার থেকেও দূরে রাখার প্রেরণা জোগায়। সুশিক্ষাই বোঝায়, একা একা সুস্থভাবে বাঁচা যায় না, তার জন্য পরিবেশকেও সুস্থ রাখার দায়িত্ব নিতে হয় প্রতিটি মানুষকে। বুনিয়াদি শিক্ষা উদ্ধুব্ধ করে উচ্চশিক্ষা এবং সময়োপযোগী প্রশিক্ষণ গ্রহণে। শিক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য ভালো চাকরি জোগাড় বা গবেষণা করা নয়। কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প-ব্যবসা থেকে পরিকাঠামো উন্নয়ন, বৃহৎ শিল্প, এমনকী ক্রীড়া ক্ষেত্রে উৎকর্ষ অর্জনেও শিক্ষার বিকল্প নেই। সব মিলিয়ে এটাই দাঁড়ায় যে, শিক্ষাই হল অর্থনীতির চালিকা শক্তি। ৭৭ বছরের স্বাধীন দেশ গোড়ার গলদ দূর না করে ‘উন্নত’ দেশের পংক্তিতে বসার স্বপ্ন দেখছে। এই স্বপ্নকে আপনি দিবাস্বপ্নের অধিক কী মূল্য দিতে পারেন?