জলপথ পরিবহণ কর্মে বিশেষ শুভ। হস্তশিল্পী, হিসাব-শাস্ত্রবিদ প্রমুখের কর্মে উন্নতি ও সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
সন্দেহ নেই, এ দেশের আইন অনুযায়ী ঋণ আদায়ের প্রক্রিয়া যেমন খরচসাপেক্ষ, তেমনটাই দীর্ঘমেয়াদি। হয়তো এই কারণেই ২০১৪ সালের আগে ব্যাঙ্কগুলি অনাদায়ী ঋণ ঢাকতে নতুন করে ঋণ দিয়ে পুরনো ঋণ পরিশোধের নিয়ম বজায় রেখেছিল। কিন্তু এতে কর্পোরেটের স্বার্থ পুরোপুরি রক্ষা হচ্ছিল না বলে মোদি সরকার ‘রাইট অফ’ আমদানি করে। এই ব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে নিয়ম মেনে চলা আমানতকারী ও গ্রাহকদের। তার চেয়েও বিপদের কথা হল, ঋণ নিয়ে শোধ না করলে তা মকুব হয়ে যাবে—এই বার্তা ক্ষতিকর। এখন সরকারি ব্যবস্থাপনায় ঋণ পরিশোধ না করার অপরাধ মাফ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে যে বিজয় মালিয়া, নীরব মোদি, মেহুল চোকসিদের মতো ঋণ খেলাপির সংখ্যা বাড়তেই থাকবে তা অস্বীকার করার উপায় নেই। দেশের অর্থ ব্যবস্থায় এই বিপুল ক্ষতি দেখেও সেই পথেই হেঁটে চলেছে মোদি সরকার! কারণ এতে খুশি হচ্ছে কর্পোরেট। বিনিময়ে হয়তো বা তারা দলীয় নির্বাচনী তহবিল ভরিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে, মোদি সরকারের ‘সাফল্য’ হিসাবে ব্যাঙ্কের উন্নত আর্থিক স্বাস্থ্যের অসত্য প্রচার চলছে! ক্ষতি শুধু অনাদায়ী ঋণ মকুবেই আটকে নেই। কর্পোরেট কর মকুব করেও দেশের আর্থিক ক্ষতি পর্যন্ত মেনে নিচ্ছে মোদি সরকার। এই ক্ষতির কথা অবশ্য সংসদে জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। তাঁরই দেওয়া তথ্য বলছে, ২০২০-২১ সালে কর্পোরেটকে কর ছাড় দেওয়ায় সরকারের আয় কমেছে ৭৫ হাজার ২১৮ কোটি টাকা। ২০২১-২২ সালে ৯৬ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা এবং ২০২২-২৩ সালে ১ লক্ষ ৯ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। বলাই বাহুল্য, কর ছাড়ে মুনাফা বেড়েছে কর্পোরেটের, আর এতে আয় কমেছে সরকারের।
এই মোদির দেশেই অন্ন জোগায় যারা, গত দশ বছরে এমন চার লক্ষ কৃষক আত্মহত্যা করেছে কৃষিঋণ শোধ করতে না পেরে! বর্তমানে দেশে কৃষিঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ২৬ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা। এই ঋণ মকুবের দায় নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। উল্টে রাজ্যগুলির উপর এই দায় চাপিয়েছে তারা। একাধিক রাজ্য চরম আর্থিক সঙ্কটে থাকায় কৃষিঋণ মকুবে হিমশিম খাচ্ছে। যার জেরে সর্বস্বান্ত অবস্থা মূলত গরিব কৃষকদের। ফলে তাদের ঋণের বোঝা বেড়েই চলেছে। আর এর পরিণতিতেই কৃষকদের আত্মহননের প্রবণতা প্রায় মহামারীর আকার নিচ্ছে বলে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি গত নভেম্বরে পেশ করা রিপোর্টে মন্তব্য করেছে। কৃষকদের মতোই বেহাল দশা ছোট ব্যবসায়ীদেরও। সংসদে খোদ সরকার জানিয়েছে, ২০১৮-১৯ সাল থেকে ২০২৪-এর ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণের ভারে মাথা নত করে নিজেদের দেউলিয়া হিসাবে ঘোষণা করার আবেদন জানিয়েছে প্রায় ৪১ হাজার ছোট সংস্থা। মোদির ‘নতুন ভারত’-এ নিশ্চয়ই ভালো বিজ্ঞাপন নয়।