জলপথ পরিবহণ কর্মে বিশেষ শুভ। হস্তশিল্পী, হিসাব-শাস্ত্রবিদ প্রমুখের কর্মে উন্নতি ও সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, এই বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিল ‘বৈষম্যবিরোধী’ ছাত্র-জনতা। ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন হয়ে শুধু কংক্রিটের কাঠামোটুকু দাঁড়িয়েছিল। ছ’মাস পর ফেব্রুয়ারির শীত সন্ধ্যায় সেই ইট সিমেন্টের কাঠামো বুলডোজার, ড্রিল মেশিন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল। ৫ ফেব্রুয়ারির রাত, ৬ ফেব্রুয়ারির প্রায় গোটা দিন কয়েক হাজার উন্মত্ত জনতার সেই হিংস্র তাণ্ডবের সাক্ষী থাকল বাংলাদেশ, তথা গোটা বিশ্ব। প্রায় দেড় দিন ধরে নির্বিঘ্নে এই ধ্বংসলীলা চললেও বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সেনা বা পুলিসকে বাধা দিতে পর্যন্ত দেখা যায়নি। শুধু মুজিবের বসতবাড়ি নয়, ওই একই রাস্তায় শেখ হাসিনার একসময়ের ঠিকানা ‘সুধাসদন’-ও জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সেই রাত ও পরের দিন মুজিব-হাসিনার দল আওয়ামি লিগের একাধিক নেতা ও পদাধিকারীর বাড়িতেও হিংস্র আক্রমণ চলে। উড়িয়ে দেওয়া হয় একাধিক বসতভিটা। যে কোনও ধ্বংসযজ্ঞ শুরুর জন্য একটা উপলক্ষ্য সামনে আনা হয়। এক্ষেত্রেও দিল্লিতে আশ্রয় নেওয়া হাসিনার সেদিনের ভার্চুয়াল বক্তৃতাকে ‘প্ররোচনা’ তৈরির কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। বস্তুত বাংলাদেশে পালাবদলের পর গত ছ’মাস ধরে আওয়ামি লিগের যাবতীয় অস্তিত্ব মুছে ফেলতে চূড়ান্ত তৎপরতা দেখাচ্ছে মৌলবাদী শক্তি। হাসিনার বক্তৃতা সেই আগুনে নাকি ঘি ঢেলেছে। কিন্তু যে কোনও দেশের সরকারের দায়িত্ব হল, সেই দেশের ঐতিহাসিক স্মারক, জনগণের সম্পদ রক্ষা করা। জনতার একটি অংশের ক্ষোভকে অজুহাত দিয়ে অরাজকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া কোনও সরকারের কাজ হতে পারে না। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ও মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের কথাবার্তা ও আচরণের মধ্যে যেন সেই অরাজকতাকেই পরোক্ষে প্রশ্রয় দেওয়ার বার্তা শোনা গিয়েছে। অভিযোগ সেরকমই। দুর্ভাগ্যের হল, যে হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধীদের কণ্ঠরোধের অভিযোগে উত্তাল হয়েছিল বাংলাদেশের জনতার একাংশ, সেই একই অভিযোগ আরও জোরালোভাবে উঠেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে। পালাবদলের ঘটনাকে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা’ আখ্যা দিয়ে যেসব শক্তি এই তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছে তা কখনওই গণতন্ত্রের পথ হতে পারে না। হাসিনার বিরোধিতা করা আর দেশে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালানো সমার্থক হতে পারে না। অনেকেই মনে করছেন, এখন সেখানকার পরিস্থিতি প্রায় হাতের বাইরে চলে গিয়েছে, যা সামাল দেওয়া হয়তো নোবেল জয়ী ইউনুসের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। তাই চাপে পড়ে বার্তা দেওয়া হচ্ছে, কোনও অজুহাতেই যেন কোনও নাগরিকের উপর আর আক্রমণ করা না হয়। বঙ্গবন্ধুর বাসভবন গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় কড়া নিন্দা করেছে ভারত।
দুর্ভাগ্যের হল, অশান্তির আগুন জ্বলছে পড়শি রাষ্ট্রে। আগের জমানার যা কিছু আইন, তার সবটা অস্বীকার বা বাতিল করতে হবে—এই প্রবণতা অনেক দেশেই দেখা যায়। কিন্তু দেশের স্বাধীনতা ও তার ইতিহাসকে মুছে ফেলার এই অপচেষ্টা দেখে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, এ কোন গভীর অসুখে আক্রান্ত বাংলাদেশ? এই অসুখে জাতীয় সঙ্গীত বদলে ফেলার কথা বলা হচ্ছে, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের সংবিধানও পাল্টে ফেলার দাবি উঠেছে। অত্যন্ত লজ্জার যে টেনে আনা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ বনাম নজরুলের প্রসঙ্গ। বলা হচ্ছে, আবার নতুন ইতিহাস লেখা হবে। কিন্তু সত্যিই কি ধ্বংস করে কোনও দেশের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস মুছে ফেলা যায়? এমন চেষ্টা হলে ইতিহাস তাকে ক্ষমা করে না।