জলপথ পরিবহণ কর্মে বিশেষ শুভ। হস্তশিল্পী, হিসাব-শাস্ত্রবিদ প্রমুখের কর্মে উন্নতি ও সুনাম। মানসিক অস্থিরতা থাকবে। ... বিশদ
যেভাবে ওই ভারতীয়দের ফেরত পাঠানো হয়েছে অথবা বন্দিশিবিরে আটকে রাখা হয়েছে—তাতে আমেরিকা মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরমসীমা অতিক্রম করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। একইরকম বিস্ময়ের কথা হল, এসব জেনেও প্রধানমন্ত্রী মোদি বা তাঁর প্রশাসনের কোনও প্রতিবাদ না করে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকাটা! ফেরত আসা অভিবাসীরা জানিয়েছেন, বন্দিশিবিরে তাঁদের নরকযন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছে। ক্রীতদাসের মতো আচরণ করা হয়েছে তাঁদের সঙ্গে। বিমানে ৪০ ঘণ্টার যাত্রাপথে তাঁদের হাতকড়ি পরিয়ে, পায়ে শিকল বেঁধে নিয়ে আসা হয়েছে। এসব জেনে দেশের প্রায় সবক’টি বিরোধী দল একযোগে প্রশ্ন তুলেছে, কেন ভারতীয়দের সঙ্গে এমন ‘জঙ্গিদের’ মতো আচরণ করা হল? আরও কতজনকে বন্দিশিবিরে আটকে রাখা হয়েছে? কেন এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাবে না ভারত? ট্রাম্পের সঙ্গে মোদির ‘ব্যক্তিগত বন্ধুত্ব’ সত্ত্বেও কেন প্রধানমন্ত্রী চুপ থাকছেন? এই অমানবিক আচরণ, অসম্মান কেন মেনে নিচ্ছেন স্বঘোষিত ‘বিশ্বগুরু’? বা কেন নিজস্ব বিমান পাঠিয়ে দেশের নাগরিকদের ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হল না? অপরাধ করলে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা তো আছেই। বিরোধীদের এমন একগুচ্ছ ‘কেন’-র জবাবে বিদেশমন্ত্রী সাফাই দিয়ে বলেছেন, আমেরিকার নিয়মে বেআইনি অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর সময়ে এমনভাবে বেঁধে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে যাতে এমন আচরণ করা না হয় তা দেখা হবে। ঘটনা হল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাষ্ট্রসঙ্ঘ যে মানবাধিকারের কথা ঘোষণা করেছে সেখানে বলা হয়েছে, মানুষ মাত্রেই মানবাধিকারের অধিকারী। হাতে বেড়ি, পায়ে শিকল বেঁধে সেই মানবাধিকারকেই যে লঙ্ঘন করেছে ট্রাম্প সরকার তা পরিষ্কার। দুর্ভাগ্যের হল, ভারতের বিদেশমন্ত্রী মার্কিন প্রশাসনের এই অমানবিক নিয়মের দোহাই দিলেন! অনেকেই ভেবেছিল, দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এর নিন্দা করা হবে। কিন্তু তা হয়নি। বছর পাঁচেক আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় এই ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে নজিরবিহীনভাবে নরেন্দ্র মোদি প্রচার করেছিলেন। এমনকী প্রবাসী ভারতীয়দের কাছে আবেদন করেছিলেন ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার। প্রধানমন্ত্রীর ‘দোস্ত’ প্রশাসনের এমন অমানবিক আচরণ নিঃসন্দেহে মোদিজির অস্বস্তি বাড়াল, বিশেষত তাঁর মার্কিন সফরের প্রাক্কালে।
এই অমানবিকতার ঘটনা শুধু মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নয়। বরং এই ঘটনা মোদি সরকারের ব্যর্থতাকে আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। রোজগারের ধান্দায় বেআইনিভাবে অন্য দেশে কাজ করা বা যাওয়ার চেষ্টা যে যথেষ্ট ঝুঁকির, তা অবৈধ অভিবাসীরা ভালোই জানেন। তবু জীবনকে একরকম বাজি রেখে অনেকে এই কাজ করে চলেছেন। বলা ভালো, করতে হয়তো বাধ্য হচ্ছেন। কারণ মোদি সরকার দেশে যথেষ্ট চাকরি, কাজের নিরাপত্তা, রুটি-রুজি, সম্মানজনক জীবনযাত্রার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, এই আমলেই বেআইনি অভিবাসীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। পশ্চিমি দেশগুলিতে সবচেয়ে বেশি লোক পাড়ি দিচ্ছে গুজরাত, পাঞ্জাব, হরিয়ানার মতো রাজ্য থেকে। সুতরাং শুধু আমেরিকার অমানবিক আচরণের নিন্দা করাই নয়, বরং এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারের উচিত কীভাবে এই চোরাপথে যাওয়া আটকানো যায় সেদিকে নজর দেওয়া। লজ্জা ঢাকতে মোদি সরকার কি সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবে?