সৎসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠে মানসিক তৃপ্তি। কাজকর্মের ক্ষেত্রে নতুন কোনও যোগাযোগ থেকে উপকৃত ... বিশদ
গ্রাম আজও কৃষিনির্ভর। স্বাধীনতার পর জমির চরিত্র ও কৃষকের সংখ্যায় বদল ঘটেছে। বৈচিত্র্য এসেছে কৃষিপণ্যে ও চাহিদার ক্ষেত্রে। সব মিলিয়ে ধরন বদলে গিয়েছে কৃষিনির্ভরতার। চেহারা বদলে গিয়েছে গ্রামের। কিছু ক্ষেত্রে কমে এসেছে গ্রাম ও শহরের ফারাক। এজন্য বিশেষ কৃতিত্ব দাবি করতে পারে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ব্যবস্থা এবং তার মাধ্যমে গ্রামোন্নয়নের প্রচেষ্টা। গ্রামোন্নয়নের ধারাবাহিক কাজের পাশাপাশি সব মানুষের কথা মাথায় রেখে ব্যতিক্রমী ও নজিরবিহীন কিছু কর্মসূচি নিয়ে থাকে বাংলার আজকের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি। কিন্তু তাদের কাজের উপযুক্ত মূল্যায়নের ব্যবস্থা এতদিন ছিল না। ফলে ভালো কাজ করেও তার সরকারি স্বীকৃতি পেত না অনেক পঞ্চায়েত। পঞ্চায়েত পরিচালনার এই অভাব পূরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এবার থেকে পঞ্চায়েতের ভালো কাজকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে জনসমক্ষে তুলে আনবে রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তর। নিরপেক্ষ মূল্যায়নের স্বীকৃতিস্বরূপ উপযুক্ত পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হবে শংসাপত্র। সম্প্রতি রাজ্যের পঞ্চায়েত সচিব পি উলগানাথন সব জেলাশাসককে এক চিঠিতে জানিয়েছেন, পঞ্চায়েতগুলির কাজের প্রাথমিক মূল্যায়ন করবে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতি। জেলা পরিষদ করবে দ্বিতীয় দফার মূল্যায়ন। পঞ্চায়েতগুলির তরফে গৃহীত উদ্যোগের নিরিখেই শ্রেষ্ঠত্বের বিচার হবে। সেখানে দেখা হবে পঞ্চায়েতের উদ্যোগের ব্যাপ্তি কতখানি, তাতে গোটা সমাজের উপর কী ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে প্রভৃতি। সবদিক মাথায় রেখেই চূড়ান্ত মূল্যায়ন করবে রাজ্য পঞ্চায়েত দপ্তর। এরপর তা তুলে দেওয়া হবে পঞ্চায়েত দপ্তরের পোর্টালে, যাতে সেরা পঞ্চায়েতকে সামনে রেখে বা মডেল মেনে বাকি পঞ্চায়েতগুলিও আগামী দিনে এগিয়ে যেতে পারে। পঞ্চায়েত ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম একই নিয়মে পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদগুলিরও কাজের বিচার এবং তাদের পুরস্কৃত করবে।
এই ধারণা এবং উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। গ্রামোন্নয়নের ধারা অব্যাহত, এমনকী তাকে ত্বরান্বিত করার পক্ষেই সহায়ক হবে এই পদক্ষেপ। একইসঙ্গে মনে রাখতে হবে, এই মহৎ উদ্যোগ যেন কোনোভাবেই গোষ্ঠী রাজনীতির ছোঁয়ায় কলুষিত না-হয়; বহু নিন্দিত ‘সিঙ্গল ইঞ্জিন’, ‘ডাবল ইঞ্জিন’ সংস্কৃতির ছায়ামাত্র না-পড়ে এতে; গ্রামের উন্নতির অর্থ যেন কোথাও শহরে রূপান্তরের ভ্রান্ত তাগিদেরও সমার্থক না-হয়ে ওঠে। তাতে গ্রাম এবং শহর একত্রে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। গ্রামীণ পরিবেশের সুস্থতা ও পবিত্রতা অক্ষুণ্ণ
রেখেই গ্রামীণ মানুষের কাছে উন্নয়নের আশীর্বাদ পৌঁছে দিতে হবে।
এই কাজ কঠিন হলেও অসম্ভব নয়, প্রয়োজনে প্রাসঙ্গিক গবেষণার পরিসর বৃদ্ধি দরকার। পঞ্চায়েত থেকে জেলা পরিষদ প্রভৃতির শ্রেষ্ঠতার বিচারে এই দিকটিও যেন কোনোভাবে গুরুত্ব না-হারায়, তা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।