সৎসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠে মানসিক তৃপ্তি। কাজকর্মের ক্ষেত্রে নতুন কোনও যোগাযোগ থেকে উপকৃত ... বিশদ
স্বাধীনতার ৭৭ বছরেও ছবিটা বদলানো যায়নি। দেশকে পৃথিবীর তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি করে তোলার হুংকার শোনানো হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে স্বাধীনতার শতবর্ষের আগেই উন্নত বিশ্বের বা উন্নত দেশের (ডেভেলপড কান্ট্রি) পংক্তিভুক্ত হয়ে উঠবে ভারত। কিন্তু সে কি হাওয়ায় হবে? তার চেষ্টা কোথায়? নয়াদিল্লির উচ্চাসন থেকে ভাষণের অতিরিক্ত যা হচ্ছে তা সংকীর্ণ রাজনীতি মাত্র। তাতে জলাঞ্জলি যাচ্ছে সংবিধান নির্দেশিত যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা। সিঙ্গল ইঞ্জিন, ডাবল ইঞ্জিন বিভাজনের বলি হচ্ছে বাংলাসহ একাধিক বিরোধী রাজ্য। তাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গরিব মানুষগুলি। ১০০ দিনের কাজের নিশ্চয়তা প্রকল্পে (মনরেগা) বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে টানা তিনবছর। তারপর কোপ দেওয়া হয়েছে আবাস যোজনায় বা গরিবের জন্য বিনামূল্যে পাকাবাড়ি প্রদানের প্রকল্পে। অনেক টালবাহানার পর বাংলার ১১ লক্ষ প্রান্তিক মানুষকে পাকাবাড়ি তৈরি করে দেওয়ার প্রশাসনিক অনুমোদন দিল্লির বাবুরা দিয়েছিলেন। তারপরেও কিছু বাজে অজুহাতে গত তিনবছরে এক নয়া পয়সাও ছাড়েনি কেন্দ্র। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এই লাগাতার বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গোড়া থেকেই সরব। তবে তাতেও সুরাহা না মেলেনি।
এই পরিস্থিতিতে একজন দায়িত্বশীল অভিভাবক হিসেবে তিনি অনন্তকাল হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন না। রেড রোডের ধর্না মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ‘ডিসেম্বর, ২০২৪-এর মধ্যে কেন্দ্র এই বাবদ টাকা না দিলে রাজ্যের কোষাগার থেকেই গরিব মানুষকে বাড়ি তৈরির টাকা দেব।’ নরেন্দ্র মোদির সীমাহীন খেলাপের বিপরীতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাখলেন কথা রাখার এক সুন্দর দৃষ্টান্ত। এটাই নতুন নয়, প্রতিশ্রুতি রক্ষার এক অভূতপূর্ব সংস্কৃতিই গড়ে তুলেছেন বাংলার জননেত্রী। সেটাই তাঁর ধারাবাহিক সাফল্যের চাবিকাঠি। ডিসেম্বরের ‘ডেডলাইন’ শেষ হওয়ার ১৩ দিন আগেই, মঙ্গলবার ১২ লক্ষ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বাড়ি তৈরির প্রথম কিস্তির টাকা প্রদানের সূচনা হল। এই বিপুল অর্থের পুরোটাই দেওয়া হচ্ছে বাংলার কোষাগার থেকে। সংগত কারণেই প্রকল্পটিও চিহ্নিত হয়েছে ‘বাংলার বাড়ি’ নামে। মঙ্গলবার নবান্ন সভাঘর থেকে প্রতীকীভাবে ৪২ জনের হাতে এই প্রকল্পের সুবিধা তুলে দেন মমতা। তারপরই শুরু হয় জেলাগুলিতে উপভোক্তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়া। এই পর্বে, কেন্দ্রের আবাস তালিকায় বঞ্চিতদের পাশাপাশি রয়েছে রেমাল ঘূর্ণিঝড় ও বন্যায় বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিরও নাম। তবে ১২ লক্ষেই থেমে থাকবে না নবান্ন। যাচাই করার পর আরও ১৬ লক্ষ পরিবার মমতার বাংলার বাড়ি পাবে। এই কষ্টার্জিত অর্থের পুরোটারই সদ্ব্যবহার যাতে হয় তার দায়িত্ব এবার জনগণকেই নিতে হবে। তবেই সার্থক হবে মুখ্যমন্ত্রীর এই মহৎ উদ্যোগ। এই প্রকল্পকে নিছক দানখয়রাতি হিসেবে ছোট করা যাবে না। এর দ্বারা পরোক্ষে উপকৃত হবে সমগ্র অর্থনীতি এবং দীর্ঘ মেয়াদে তার সুফল পৌঁছবে রাজ্যের প্রতিটি ঘরে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উদার ‘ইনক্লুসিভ পলিটিকস’ আগামী দিনে সব রাজ্যের সামনে প্রকৃত উন্নয়নের মডেল হিসেবেই সমাদর পাবে।