সৎসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠে মানসিক তৃপ্তি। কাজকর্মের ক্ষেত্রে নতুন কোনও যোগাযোগ থেকে উপকৃত ... বিশদ
এই ভয়াবহ দুঃসময়ে অর্থনীতির পাশাপাশি সর্বাধিক ক্ষতির শিকার হয়েছিল শিক্ষা। মহামারী পর্বে শিক্ষা ব্যবস্থা মোটামুটি স্বাভাবিক রাখার হাতিয়ার হতে পারত সবার জন্য উন্নত ইন্টারনেট পরিষেবা। এটি নিয়ে সরকার দীর্ঘদিন যাবৎ যা দাবি করে এসেছিল তার বেশিরভাগটাই যে ছিল বাগাড়ম্বর, তার অকাট্য প্রমাণ মিলেছিল করোনা পর্বে। ন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট সার্ভে ২০২১ থেকে জানা যায়, বাড়ি এবং স্কুল মিলিয়ে ইন্টারনেট সংযোগ চারভাগের একভাগ পড়ুয়ার নাগালের বাইরে। আবার যাদের বাড়িতে বা স্কুলে ইন্টারনেট পরিষেবা রয়েছে, তারাও এই উন্নত ব্যবস্থার সুফল পুরোপুরি নিতে পারেনি, কারণ পরিষেবার মান অতিনিম্ন। সরকারি বা সরকার পোষিত স্কুলের ছেলেমেয়েদেরই এই সমস্যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পড়তে হয়েছিল। তার ফলে ওই দীর্ঘ সময়ে অসংখ্য পড়ুয়ার শিক্ষালাভের ক্ষেত্রে একটি বিরাট ‘গ্যাপ’ তৈরি হয়ে যায়। নতুন কিছু শেখা তো দূর, পুরনো শিক্ষারও অনেকটা তারা ভুলে গিয়েছিল। শিক্ষাবিদদের একাংশের অভিমত, বুনিয়াদি শিক্ষা ক্ষেত্রের এই ক্ষত এক দশকেও পূরণ হবে না।
পরবর্তী আড়াই বছরে কতটা শোধরাতে পেরেছি আমরা? সংসদে পেশ করা কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য বলছে: গালভরা ডিজিটাল ইন্ডিয়া স্লোগানের ছিটেফোঁটা সুফলও পৌঁছয়নি বেশিরভাগ স্কুলে। দেশের ৭৬ শতাংশ সরকারি স্কুলে ইন্টারনেট সংযোগ নেই! সোমবার লোকসভায় শিক্ষামন্ত্রকের কাছে দু’জন বিরোধী এমপি জানতে চেয়েছিলেন, এই মুহূর্তে দেশের কতগুলি সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। তারই লিখিত জবাবে রাষ্ট্রমন্ত্রী জয়ন্ত চৌধুরী এই মন খারাপ করা তথ্য পেশ করেন। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, এই নিরিখে বহু বিজেপি-শাসিত রাজ্য জাতীয় গড়ের অনেক নীচে গড়াগড়ি খাচ্ছে। বিহারের চিত্র তো কহতব্য নয়! তবে ছবিটা বেসরকারি স্কুলের ক্ষেত্রে বেশ ভালো: প্রায় ৬০ শতাংশ বেসরকারি স্কুল ইন্টারনেট পরিষেবা সংযুক্ত। এর থেকে এটাই পরিষ্কার হচ্ছে যে, সরকার পরিচালিত স্কুলের বেশিরভাগ পড়ুয়া ন্যূনতম পরিকাঠামো-বঞ্চিত। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে অবশ্য সরকার দাবি করেছে, শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষ থেকেই ‘নিষ্ঠা’ (ন্যাশনাল ইনিশিয়েটিভ ফর স্কুল হেডস অ্যান্ড টিচার্স হোলিস্টিক অ্যাডভান্সমেন্ট) কর্মসূচি চালু হয়েছে। প্রকল্পটি অনলাইনেও চলছে ২০২০-র অক্টোবর থেকে। ড্যামেজ কন্ট্রোলের জন্য কেন্দ্র যে সাফাই দিক না কেন, তাতে সরকার পরিচালিত স্কুলগুলিতে পঠনপাঠনে মারাত্মক খামতি ঢাকা পড়ছে না। এই ছবি আরও একটি জিনিস পরিষ্কার করে দিচ্ছে যে, শিক্ষার মতো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটিতে আজও দ্বৈত ব্যবস্থা চালু রয়েছে—একটি গরিব ও মধ্যবিত্তদের জন্য এবং অপরটি সম্পন্ন ও ধনীদের জন্য। সুস্থ প্রতিযোগিতা সমানে-সমানে হওয়াই কাম্য। কিন্তু যে ছবিটি ধরা পড়ল, তাতে এটাই পরিষ্কার হয় যে দেশের পড়ুয়াদের বেশিরভাগই সূচনা বিন্দু থেকে অনেক কদম পিছনে রয়ে গিয়েছে এবং অল্প কিছু পড়ুয়া প্রতিযোগিতা শুরুর আগেই অবস্থান করছে সূচনা বিন্দু পেরিয়ে দশ কদম আগে! এই অসম প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হতে থাকবে তাতে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য ছাড়া আর কিছুই ত্বরান্বিত হবে না।