সৎসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠে মানসিক তৃপ্তি। কাজকর্মের ক্ষেত্রে নতুন কোনও যোগাযোগ থেকে উপকৃত ... বিশদ
বিনামূল্যের রেশন দিতে এবং নিতে হয় কোন পরিস্থিতিতে? মোদি সরকারের পরিবর্ধিত পরিমার্জিত এক দাবি অনুযায়ী, তাও আবার ৮১ কোটি নাগরিক! ভারত এবং চীন বাদে পৃথিবীর বাকি দেশগুলির প্রতিটির জনসংখ্যা ৮১ কোটির অনেক অনেক নীচে। অর্থাৎ ভারতে বিনামূল্যের মোট রেশন গ্রাহক যত তার নীচের জনসংখ্যার দেশ রয়েছে ২৩২টি। শতাধিক দেশের মিলিত জনসংখ্যাও ৮১ কোটির কম। তৃতীয় বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক সাড়ে ৩৪ কোটির কিছু বেশি। আর সর্বনিম্ন জনসংখ্যার দেশের নাম ‘হোলি সি’, সেখানে নাগরিকের সংখ্যা মাত্র ৪৯৬! এর পাশে ভারতের ছবিটা আমাদের হতাশ না করে পারে না। আরও ভেবে দেখার বিষয় এই যে, এটা চলছে স্বাধীনতার সাতাত্তর বছর পরে এবং যখন মহান ভারতের অমৃতকালে উত্তরণের স্বপ্ন ফেরি তুঙ্গে! দাবি করা হচ্ছে, শীঘ্রই তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে এবং তার কিছুকাল বাদেই আমাদের মাতৃভূমি জায়গা করবে উন্নত বিশ্বের (ডেভেলপড কান্ট্রিজ) পংক্তিতে, যেখানে পংক্তিভোজনের সংস্কৃতি স্মরণাতীতকালেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। আজকের যে নির্মম বাস্তবে দেশ দাঁড়িয়ে আছে, এটাই কি চেয়েছিলেন স্বাধীনতার জন্য আত্মবলিদান দেওয়া অগণিত বীর শহিদ? বেশি মানুষকে দানখয়রাতির ছবির মধ্য দিয়ে সরকার তার উদারতার প্রচার চালাতেই পারে, কিন্তু সাধারণ বুদ্ধিসুদ্ধির মানুষ তার মধ্যে রাষ্ট্রের চরম ব্যর্থতাই বেশি করে খুঁজে পাবেন। সমস্ত সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও ভারত নামক একটি রাষ্ট্র কতখানি ‘ব্যর্থ’, তা সারা দেশে মোট রেশন গ্রাহকের সংখ্যাতেই স্পষ্ট। এর দায় বিজেপি সরকারের মোটেই কম নয়। কারণ অটলবিহারী বাজপেয়ি এবং নরেন্দ্র মোদি মিলিয়ে ইতিমধ্যেই ১৫ বছরের বেশি সময়কাল এই দলটি ভারতশাসন করে ফেলেছে।
দারিদ্র্য অনেক প্রকারের। তার মধ্যে আর্থিক দারিদ্র্য ঘোচাতে হাতে হাতে উপযুক্ত কাজ বা চাকরির বিকল্প নেই। সেখানেই এই দেশ বরাবর মার খাচ্ছে। সুদীর্ঘ কংগ্রেস জমানার ব্যর্থতা হাতিয়ার করে ক্ষমতা দখল এবং পুনর্দখল করেছেন নরেন্দ্র মোদি। কুর্সি দখলের জন্য সেজেছিলেন বেকার দরদি। কৃষক এবং শ্রমিক দরদির ভেক ধারণেও তিনি পয়লা নম্বর অভিনেতা। নরেন্দ্র মোদির দু-দুটি টার্ম পেরনোর পরও দেখা গেল, এই প্রশ্নে তাঁর চেয়ে বড় খেলাপি কেউ ভারতের অভিভাবকের আসনে বসেননি। তারই অনিবার্য ফল দেশজুড়ে কর্মহীনতা চরমে, দেশটি বস্তুত রকমারি বেকার সৃষ্টির ফ্যাক্ট্রি। সবচেয়ে বেশি বেকার শিক্ষিত যুবরা এবং নারী। এরপর কি সকলে শিক্ষার প্রতি তাদের আগ্রহ ধরে রাখতে পারবে? উপযুক্ত চাকরি বা জীবিকা ছাড়া নারীর ক্ষমতায়নের স্লোগান কতটা আন্তরিক? মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী না-হলে বাকি সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে তারা লড়বে কীভাবে? এর জবাব এই সরকারের কাছে সংসদে এবং মাঠে-ময়দানে বারবার চাওয়া হয়েছে, কিন্তু সদুত্তর মেলেনি। সীমাহীন বেকারত্ব নিয়ে এবার অবিকল উদ্বেগ সর্বোচ্চ আদালতেরও গলায়। পরিযায়ী শ্রমিক সংক্রান্ত এক মামলায় সুপ্রিম আসন থেকে মোদি সরকারকে দেওয়া হল কড়া বার্তা, ‘আর কতদিন ফ্রিতে রেশন দেওয়া হবে? কেন আমরা চাকরি বা কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারছি না? বিনামূল্যে রেশন নয়, চাকরির ব্যবস্থা করুন!’ কোটি কোটি বেকারের যন্ত্রণার প্রেক্ষাপটে শীর্ষ আদালতের এই পর্যবেক্ষণ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আদালতের এই ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়ও বটে। কিন্তু মোদি সরকার সেইমতো পদক্ষেপ করতে পারবে কি? তার জন্য সবার আগে দরকার যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রতি শ্রদ্ধা এবং বিভেদের রাজনীতি থেকে দূরে থাকা। এই পরীক্ষায় মোদিজি এখনও পর্যন্ত পাশ মার্কও কিন্তু পাননি।