সৎসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠে মানসিক তৃপ্তি। কাজকর্মের ক্ষেত্রে নতুন কোনও যোগাযোগ থেকে উপকৃত ... বিশদ
পূর্ব বর্ধমান জেলার একটা বড় অংশের মানুষ তাঁতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত। জেলায় প্রায় ৭৪ হাজার তাঁতি রয়েছেন। যার মধ্যে কাটোয়া ও কালনা মহকুমায় তাঁতির সংখ্যা বেশি। তবে জেলার তাঁতবলয় হিসেবে পরিচিত পূর্বস্থলী। কাটোয়ার ঘোড়ানাশ গ্রামে জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী সুশান্ত দে বলেন, আগে বিয়েতে জামদানির কদর ছিল। একটা জামদানি শাড়ি বুনতে আমাদের সময় লাগত। তাতে সূক্ষ্ম নকশা থাকত। বিয়ের মরশুমে আমরা রাত জেগেও জামদানি শাড়ি বুনেছি। এখন সবাই সুরাতের শাড়ির দিকে ঝুঁকছেন।
কেতুগ্রামের বেনিনগরের তাঁতশিল্পী রঘুনাথ সিনহা বলেন, এখন ‘ব্রাইডাল’ শব্দে মজেছেন বাঙালি। মানে চকচকে শাড়ি চাইছেন। সেই চাহিদা পূরণ করছে সুরাতের শাড়ি। দামও কম। কিন্তু বাংলার তাঁতের শাড়ি অত ঝকমকে কিংবা দামে সস্তা হবে না। ঐতিহ্যের বিষয়টা কেউ-ই আর গুরুত্ব দিতে চাইছেন না। এই রেওয়াজ শুরু হয়েছে পনেরো বছর ধরে। তবে দু’-তিন বছর ধরে বেশি প্রচলন শুরু হয়েছে। এতে যে বহু তাঁত শিল্পী কাজ হারাচ্ছেন সেটা কেউই চিন্তা করছেন না। বাংলার তাঁতশিল্প নিয়ে এখন রীতিমতো গবেষণা হচ্ছে। শিল্প বাঁচাতে রাজ্য সরকার যথেষ্ট চেষ্টা করছে। বাংলার তাঁত বিদেশেও পাড়ি দিচ্ছে। পুরস্কার ছিনিয়ে আনছে। তাঁতশিল্পে কোটি কোটি টাকা বিদেশি মুদ্রা আনছে। কিন্তু নিজের দেশের মানুষের কাছেই কদর হারাচ্ছে বাংলার তাঁত। কেতুগ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা সুজন রায় বলেন, আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছে আট বছর আগে। আমি সে সময়ে তাঁতের শাড়িই ব্যবহার করেছিলাম। কিন্তু আমার নাতির বিয়েতে বাড়ির মেয়েরা দেখছি সবাই অনলাইনেই কম দামে শাড়ি কিনছে। আমাদের রুচির বদল ঘটছে। কেতুগ্রামের বেনিনগর এলাকায় মুর্শিদাবাদ থেকে সূতো আসে। আর নিরোলে সূতোর রং করা হয়। এখন ভেষজ রং তাঁতের কাপড়ে দেওয়া হচ্ছে। নিরোলে যাতে আরও উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে রং করা যায়, তারজন্য শিল্পীদের মেশিন দেবে সরকার। এইসব অঞ্চলের প্রায় ৪৪ হাজার তাঁতশিল্পী রয়েছেন।
(কাটোয়ার ঘোড়ানাশ গ্রামে তাঁতের শাড়ি বুনতে ব্যস্ত শিল্পী।-নিজস্ব চিত্র)