সৎসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠে মানসিক তৃপ্তি। কাজকর্মের ক্ষেত্রে নতুন কোনও যোগাযোগ থেকে উপকৃত ... বিশদ
আর জি করের সেমিনার রুমে ওই তরুণী ডাক্তারের মৃতদেহ পাওয়া যায় ৭ আগস্ট। এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে এক সিভিক ভলেন্টিয়ারকে ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রেপ্তার করে কলকাতা পুলিস। তার পরেও কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব পায় সিবিআই। তদন্তে নেমে ১৪ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের অধ্যক্ষ ও টালা থানার ওসিকে গ্রেপ্তার করে তারা। ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলাটি হাতে নেয় মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট। সেখানে এ পর্যন্ত সাতটি স্টেটাস রিপোর্ট জমা দিয়ে সিবিআই দাবি করেছে, ধৃত দু’জনের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ লোপাটের একাধিক তথ্য পাওয়া গিয়েছে। শিয়ালদার নিম্ন আদালতেও এই একই অভিযোগ তুলে তদন্তকারী সংস্থা বলেছিল, ধর্ষণ খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে অধ্যক্ষ ও ওসির মধ্যে ফোনে একাধিকবার কথোপকথন হয়। এটা একটা বৃহত্তর ষড়যন্ত্র। মোট ৯০০ ঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও তারা আদালতে জানায়। তবু বিস্ময়, এমন গুরুত্বপূর্ণ ভূরি ভূরি অভিযোগ যাঁদের বিরুদ্ধে তুলেছে সিবিআই, সেই অভিযোগের ভিত্তিতে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটই জমা দিতেই পারল না তারা! ফলে ৭ আগস্টের ঘটনার চার মাসেরও বেশি সময় পরেও যা দাঁড়িয়েছে তা হল কলকাতা পুলিসের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া সেই সিভিক ভলেন্টিয়ারকেই অপরাধীর তকমা দিয়ে চার্জশিট জমা দিয়েছে তারা। কিন্তু বাকি দু’জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিতে না পারায় তাঁরা নিয়মমাফিক জামিন পেয়ে গিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী সাফাই দিয়েছেন, তাঁরা সব তথ্যপ্রমাণ এক জায়গায় করতে পারেননি। তাই চার্জশিট জমা দিতে পারলেন না। এও জানিয়ে দিলেন, ধৃত দু’জনকে হেফাজতে নেওয়ার আবেদনও করছেন না তাঁরা।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দুঁদে অফিসারদের তদন্তে এনে তারপর তথ্যপ্রমাণ লোপাটের গল্প শুনিয়েও চার্জশিট দিতে না পারায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকেই। রীতিমতো রহস্যের গন্ধও পাচ্ছেন কেউ কেউ। ন্যায় বিচার দিতে সিবিআই কতটা আন্তরিক সেই প্রশ্ন উঠেছে। আরও প্রশ্ন, তবে কি এই বর্বরোচিত ঘটনায় একমাত্র যুক্ত ওই সিভিক ভলেন্টিয়ারই? যা কলকাতা পুলিস প্রথমেই দাবি করেছিল। প্রশ্নের উত্তর আপাতত অধরাই থেকে গেল। সিবিআইয়ের এই ব্যর্থতার পাশাপাশি একাধিক ঘটনায় কিন্তু আলোর সন্ধান দিয়েছে রাজ্য পুলিস। আর জি করের মতোই রাজ্যের দুই প্রান্তে দুটি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় কার্যত দু’মাসের মধ্যেই তদন্ত করে ফাঁসির সাজা ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। জয়নগরের পর ফরাক্কা— এই দুটি ক্ষেত্রে নাবালিকা ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় রাজ্য পুলিস অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে অতি দ্রুততায় তদন্ত করেছে। জয়নগর কাণ্ডে বারুইপুরের বিশেষ পকসো আদালত অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির সাজা দিয়েছে। আর মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর আদালত মূল অভিযুক্তকে অপরাধী সাব্যস্ত করে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছে। আর জি কর কাণ্ডে সিবিআইয়ের ‘ব্যর্থতা’ নিয়ে যখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সরব ঠিক তখন রাজ্য পুলিসের এহেন সাফল্য ভিন রাজ্যেও প্রশংসা পাচ্ছে। অনেকেই জানতে চাইছে কী করে এত কম সময়ে তদন্তের কাজ শেষ করে সুবিচার পাওয়ার ব্যবস্থা করতে সফল হল রাজ্য পুলিস? এখন প্রশ্ন একটাই, ধর্ষণ-খুনের ঘটনার তদন্তে রাজ্য পুলিস যে সাফল্য দেখাতে পারছে তার থেকে কি কোনও শিক্ষা নেবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই?