সৎসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক ধর্মীয় গ্রন্থ পাঠে মানসিক তৃপ্তি। কাজকর্মের ক্ষেত্রে নতুন কোনও যোগাযোগ থেকে উপকৃত ... বিশদ
পরবর্তী দুই সেনাকর্তা জিয়াউর রহমান ও হোসাইন মহম্মদ এরশাদের হাতে পড়ে ওই দেশের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ সংবিধানের ঠাঁই হয়েছে আস্তাকুঁড়ে। এমনকী অমুসলিম জনগণের ঘাড়েও চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম’-এর যন্ত্রণা! উপর্যুপরি ঘটনাগুলি যে সে-দেশের ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠের মৌলবাদকেই প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য, তাতে কোনও সুস্থ বুদ্ধির মানুষের সংশয় নেই। শেখ হাসিনার সরকার চেষ্টা করেও পবিত্র সংবিধানের এই বিকৃতি দূর করতে পারেননি। তবু তাঁর আমলে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত কিছু অন্যায়ের প্রতিকার করার চেষ্টা ছিল। ছিল ধর্মোন্মাদ জঙ্গি সংগঠনগুলির হাত থেকে বাংলাদেশকে বাঁচানোর উদ্যোগ। শিক্ষা এবং কর্মক্ষেত্রে ধর্মীয় বৈষম্য দূর করার দিকেও বিশেষ নজর ছিল বঙ্গবন্ধুর কন্যার। ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পরিসর বেড়েছিল। ভারতের পক্ষে সবচেয়ে বড় স্বস্তির ব্যাপার ছিল দুটি। এক, কমেছিল বাংলাদেশি নাগরিকের অনুপ্রবেশ। দুই, বাংলাদেশের মাটি যাতে ভারত-বিরোধী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির ঘাঁটি হয়ে উঠতে না পারে, তার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা। সব মিলিয়ে ভারতের সবচেয়ে প্রিয় প্রতিবেশীর নাম হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ।
কিন্তু কিছু পাকপ্রেমী বাংলাদেশির পক্ষে এই স্বস্তিদায়ক পরিবেশ মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। সাম্প্রতিক অস্থিরতার নেপথ্যে যে ওই অবাঞ্ছিত শক্তির সক্রিয়তা রয়েছে, তাতে নির্যাতিত অংশের নাগিরকদের কোনও সংশয় নেই। এই ব্যাপারে সহমত পোষণ করে গণতান্ত্রিক আন্তর্জাতিক দুনিয়াও। তবু বাংলাদেশের বর্তমান নেতৃত্ব গলাবাজি করে এই নির্মম বাস্তব অস্বীকার করার আপ্রাণ চেষ্টায় ছিল। সমস্ত অভিযোগ তারা নিছক ‘গুজব’ বলেই উড়িয়ে দিচ্ছিল। অবশেষে বাংলাদেশের মাটিতে হিন্দু নির্যাতনের কিছু অভিযোগ স্বীকার করে নিয়েছে মহম্মদ ইউনুসের তত্ত্বাবধায়ক সরকার। মঙ্গলবার ঢাকা জানিয়েছে, হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ধর্মীয় নিপীড়নের মোট ৮৮টি ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে সেখানে। তবে পর্যবেক্ষক মহলের দাবি, বাস্তব চিত্র আরও ভয়াবহ! প্রতিবাদী হিন্দুদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে। চিন্ময়কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের ঘটনা একটি দৃষ্টান্তমাত্র। তাঁর জামিনের আগাম শুনানির আর্জি জানিয়ে চট্টগ্রাম আদালতে আবেদন করেন আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ। ঢাকার বাসিন্দা রবীন্দ্রবাবু সুপ্রিম কোর্টের বর্ষীয়ান আইনজীবী। বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচেরও সভাপতি তিনি। আগাম জামিনের আবেদনে বলা হয় যে, ‘মিথ্যা ও মনগড়া মামলায় ওই সন্ন্যাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিরাপত্তা কারণে ৩ ডিসেম্বর জামিনের শুনানিতে তাঁর আইনজীবী শুভাশিস শর্মা অংশ নিতে পারেননি।’ পরে স্থানীয় মিডিয়াকে রবীন্দ্রবাবু বলেন, ‘এখানকার আইনজীবীরা কেউ সওয়াল করতে পারছেন না। জজ সাহেব আমার আবেদন মঞ্জুর করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শ’খানেক আইনজীবী চেঁচামেচি শুরু করে দেন।’ তবে রবীন্দ্রবাবুর বক্তব্যের সত্যতা যথারীতি স্বীকার করেননি সরকারি আইনজীবী। এই প্রেক্ষিতে রবীন্দ্রবাবুর আক্ষেপ, ‘খুব দুঃখজনক পরিস্থিতি। পুলিস ছিল বলে রক্ষা পেয়েছি।’ কোনও গণতান্ত্রিক দেশে এমন অন্যায় কল্পনাও করা যায় না। আদালত হল শেষ ভরসার জায়গা—বাদী, বিবাদি দু’পক্ষেরই জন্য। বিচারক দু’পক্ষের বক্তব্য শুনেই নিরপেক্ষ রায় ঘোষণা করেন। ‘নির্দোষ’ হলে অভিযুক্ত মুক্তি পান এবং ‘দোষী সাব্যস্ত’ হলে তাঁর সাজা হয়। কিন্তু অভিযুক্ত যদি তাঁর ধর্মীয় পরিচয়ের ‘অপরাধে’ একজন আইনজীবীর অভাবে সওয়াল-জবাবেই ‘নিষিদ্ধ’ হয়ে যান, সেই পরিস্থিতি অস্বাভাবিক। কোনও সভ্য দেশ এবং তার আদালত এই অন্যায় অনুমোদন করতে পারে না। এখানেই পরিষ্কার, সংখ্যালঘু শ্রেণির নাগরিকদের পক্ষে একদা সোনার বাংলা কী এক ‘অভিশপ্ত’ ভূমিতে পরিণত হয়েছে!